ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

মড়কে চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষে বিপর্যয়

সৈয়দুল কাদের, কক্সবাজার ::
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন প্রজেক্টে চিংড়ি ও কাঁকড়ায় মড়ক দেখা দিয়েছে। গত জুন মাস থেকে মড়ক সামান্য দেখা দিলেও এখন তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে মারা গেছে শত কোটি টাকার চিংড়ি মাছ। ফলে চাষিরা বিনিয়োগকৃত পুঁজি নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন। একই সাথে কাঁকড়াও মারা যাওয়ায় ঢাকায় কাঁকড়া সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে।
কক্সবাজারের বিভিন্ন চিংড়ি প্রজেক্টে ব্যাপক হারে মড়ক দেখা দেওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষীরা। চলতি বর্ষা মৌসুম শুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে দু’দফা বন্যায় চিংড়ি প্রকল্পে নতুন পানি প্রবাহিত হয়েছে। পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ কম-বেশি হওয়ায় মৎস্য ঘেরে মড়ক দেখা দিয়েছে বলে মৎস্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত। চিংড়ি ঘেরে মড়ক অব্যাহত থাকায় তিন শতাধিক ঘেরের মালিক পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
এ দিকে মড়কের কারণে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসবে এমন আশঙ্কা করেছেন চাষীরা। মহেশখালীর চিংড়ি চাষী নুরুল আমিন জানিয়েছেন, গত মৌসুমের চেয়ে অনেক প্রজেক্টে এখন চিংড়ি চাষ হচ্ছে। অনেক প্রজেক্ট দীর্ঘদিন ধরে জোয়ার-ভাটা। এ ছাড়া যে কয়টি প্রজেক্টে চাষ হচ্ছে তার প্রায় সবকটিতেই এখন মড়ক দেখা দিয়েছে।
চকরিয়া চিংড়ি জোনের ব্যবসায়ি আবদুল জব্বার জানিয়েছেন, দুই মাস ধরে মড়ক অব্যাহত থাকায় চাষীরা আতংকিত। চলতি মৌসুমের প্রায় পুরো বিনিয়োগই ফিরে আসবে না।
মহেশখালীর কাঁকড়া ব্যবসায়ি শান্তিলাল নন্দী জানিয়েছেন, যেখানে প্রতিদিন ঢাকায় কাঁকড়া চালান করা হত সেখানে ৩দিনেও চালান হচ্ছে না। মড়ক দেখা দেওয়ায় কাঁকড়া ক্রয় করা এখন ঝুকিপুর্ণ। ঢাকায় পাঠানো চালান থেকে ১০ কেজি কাঁকড়া মারা গেলেই ১২ হাজার টাকা লোকসান। তাই অনেকেই এমন ঝুকি নিয়ে ব্যবসা করছে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লবণাক্ততা বাড়ায় এবং চাষিরা ঠিকমত পরিচর্যা না করায় প্রতি বছর এ ভাবে মড়ক দেখা দিচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। মৎস্য বিশেষজ্ঞ ডঃ সাহাব উদ্দিন জানিয়েছেন, সারা বছরই প্রজেক্টে লবণ পানি আটকে থাকে। ঠিকমত পানি নিস্কাসন হয় না তাই ভাইরাসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয় চিংড়ি মাছ। এক্ষেত্রে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও চাষিরা খুব একটা গ্রহণ করেন না।যার ফলে প্রতি বছরই চিংড়িতে মড়ক দেখা দেয়। যা রুখতে পারে না চাষীরা।
তিনি আরো বলেন বিভিন্ন কারণে বাগদা চিংড়ি মারা যায়। মৌসুমের শুরুতে ঘের প্রস্তুত করার সময় চাষিরা ঘেরের মাটির সঠিক পরিচর্যা করেন না। জমির ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য যে পরিমাণ চুন ব্যবহার করা দরকার তাও ঠিকমতো করেন না। এ ছাড়াও নিয়মিত ফরমুলেটেড খাদ্য সরবরাহ না করা, পানি পরিবর্তন ও বায়ু সঞ্চালনের ব্যবস্থা না করার কারণেও মাছ মারা যায়।
চিংড়িতে ভাইরাস নিয়ে গবেষণাকারী ড. নাজমুল হাসান বলেন, চিংড়িতে ভাইরাস ঠেকাতে নানা রকম উপায় আছে। আমাদের শরীরেও ভাইরাস আছে। তারপরও আমরা সতেচনভাবে চলি। এক্ষেত্রেও চাষীদের সতেচন হতে হবে। তিনি বলেন, প্রথমত, চিংড়ির পোনার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, রোগমুক্ত পোনা ঘেরে ছাড়তে হবে। এ জন্য সরকারি ল্যাবে পরীক্ষা করে নিতে হবে। তৃতীয়ত, ঘেরের গভীরতা দেখে মাটি পানি ও পরিবেশের ওপর নির্ভর করে ঘেরে উপযুক্ত চিংড়ি চাষ করতে হবে। এজন্য প্রান্তিক চাষিদের স্থানীয়ভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই বলেও মত দেন তিনি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ডঃ মোঃ আব্দুল আলীম জানান, বিষয়টি উদ্বেগের হলেও চাষীদের এ ব্যাপারে আরো সচেতন হতে হবে। কক্সবাজারে উৎপাদিত চিংড়ি পোনায় তেমন সমস্যা নেই। মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হলেও এ ব্যাপারে এখনো পিছিয়ে আছে চাষীরা।

পাঠকের মতামত: