ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পাহাড় কেটে খালের গতিপথ পরিবর্তন, কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি আত্মসাৎ

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার ::
কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগরে সিভাসু গবেষণা কেন্দ্র সংলগ্ন পয়েন্টে পাহাড় কেটে বড়ছড়া খালের গতিপথ পরিবর্তন করে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি আত্মসাৎ করে নিয়েছে স্থানীয় এক দূর্বৃত্ত। কিন্তু এমন বেআইনী ও পরিবেশবিধ্বংসী কাজের ফলশ্রুতিতে বড়ছড়া খালের ভাটি অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে গত এক মাসে অসংখ্য মানুষের বসতভিটা খালগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় একমাত্র মসজিদ ভিটাসহ আরো বহু ঘরবাড়ি ভাঙনের মুখে রয়েছে। অবৈধভাবে পরিবর্তন করা বড়ছড়া খালের গতিপথ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সরেজমিন পরিদর্শন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বর্ষাকালের শুরুতে সিভাসুর নাম ভাঙিয়ে রাতের আধাঁরে প্রায় ২শ ফুট উঁচু একটি পাহাড়ের পাদদেশ কেটে বড়ছড়া খালের গতিপথ পরিবর্তন করতে শুরু করে ছৈয়দ আলম প্রকাশ লেইট্টা (৪৮) নামের স্থানীয় এক ভূমিদস্যু । এরপর দখলীকৃত খালের একাংশে মাটি ফেলে ভরাট করে সেখানে গড়ে তুলে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। এতে এলাকাবাসী বাধা দিলে লেইট্টা বাহিনীর সদস্যরা সম্প্রতি বহিরাগত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিয়ে প্রতিবাদী গ্রামবাসীর উপর হামলা চালায়। এ হামলায় স্থানীয় গৃহিনী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাশেদা বেগম (৩৩), হোসন আহমদ পুতু (৩৫), শাহেদা (১৪) ও ইসমাইল (১৭)সহ অন্তত পাঁচজন রক্তাক্ত জখম হয়। পরে এলাকাবাসী সংঘটিত হয়ে লেইট্টা বাহিনীকে ধাওয়া দিলে এলাকা থেকে কয়েকদিনের জন্য পালিয়ে যায় লেইট্টা বাহিনী সদস্যরা। কিন্তু ঘটনার দুইদিন পর উল্টো প্রতিবাদী গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশ নিয়ে পূনরায় সদম্ভে গ্রামে ফিরে পাহাড় কেটে নতুন খাল তৈরি ও পুরনো খাল ভরাটের কাজ অব্যাহত রাখে ওই দূর্বৃত্ত। কিন্তু খালের গতিপথ পরিবর্তনের ফলে এর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ও ¯্রােতও পরিবর্তিত হয়ে যায়। তীব্র বর্ষণের সময় ভাটি অঞ্চলে খালের তীরে সৃষ্টি হয় ব্যাপক ভাঙন। অনেক বসতভিটা ভাঙনের কবলে পড়ে। বাদ যায়নি মসজিদ ভিটাও। খাল সংলগ্ন সুউচ্চ পাহাড়টিও ধসের কবলে পড়ে। খালের গতিপথ পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় পড়ে নজিরবিহীনভাবে গত মাসে খালের গভীরতা তিন থেকে চার ফুট বেড়ে যায়। এর ফলশ্রুতিতে সামুদ্রিক জোয়ারের বড় বড় ঢেউ খালে প্রবেশ করে এবং খালের দুই তীরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি করে। এ কারণে দরিয়ানগরে এ বছর সবচেয়ে বেশি পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।
এ সম্পর্কে অভিযুক্ত ছৈয়দ আলম লেডুর কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ভাল করে লিখেন। আমার চুলও (হিন্দিতে পড়তে হবে) ছিঁড়তে পারবেন না।’
স্থানীয় গ্রামবাসী ক্ষোভের সাথে জানায়, তারা ঘটনার ব্যাপারে বনবিভাগের স্থানীয় বিট কর্মকর্তা ও রেঞ্জ কর্মকর্তাকে জানিয়েছিল। তারা ঘটনাস্থলেও এসেছিল। কিন্তু পরিবেশবিধ্বংসী এমন ভয়ংকর অপরাধের প্রমাণ পেয়েও তারা কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়নি।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, পাহাড় কেটে নতুন খাল তৈরি ও পুরনো খাল ভরাট করার জলজ্যান্ত প্রমাণ এখনও বিদ্যমান। তবে ভরাট করা কিছু অংশে ৭/৮ বছর বয়সী কিছু পুরনো বৃক্ষ অন্যস্থান থেকে তুলে এনে এখানে লাগানো হয়েছে। এসব বৃক্ষের জীর্ণ-শীর্ণ ‘প্রাণযায়’ অবস্থা দেখে তা স্পষ্ঠ বুঝা যায়।
এ বিষয়ে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আলী কবীর বলেন, ‘ঘটনাটি আমি আপনার মাধ্যমে শুনেছি। তদন্ত করে সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’ তিনি ঘটনাটি তদন্তের জন্য একজন সহকারি বনসংরক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে বলেও জানান।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক সাইফুল আশ্রাব পরিবেশবিরোধী কাজে স্থানীয় জনগণ ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, কক্সবাজার একটি পাহাড় অধ্যুষিত এলাকা। কিন্তু বিভিন্নভাবে পাহাড়গুলো লোভী মানুষের দূর্বৃত্তপনার শিকার হচ্ছে। এরফলে প্রতিবছর ভূমিধস ও পাহাড় ধসে বহু প্রাণহানী হচ্ছে। কিন্তু এ বিশাল এলাকা পরিবেশ অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মীর পক্ষে নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জনগণ, পরিবেশবাদি ও মিডিয়া সোচ্চার হলে আমাদের ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়।

পাঠকের মতামত: