ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

ঈদগাঁওতে দালাল ছাড়া মেলে না বিদ্যুতের নতুন সংযোগ!

শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর ::   দালালের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করার পর দেয়া হয় বিদ্যুতের সংযোগ। ঈদগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্য মতে চলিত বছরের মধ্যে শতভাগ পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে বলে দাবি করেছে বিদ্যুৎ সমিতি। এদিকে দ্রুত গতিতে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেয়ার নামে পল্লী বিদ্যুৎ আওতাধীন গ্রামে চলছে রমরমা বাণিজ্য। বিদ্যুৎ অফিসের লাইনম্যান থেকে শুরু করে ম্যাসেঞ্জার, পিয়ন সবাই নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে গিয়ে দালাল পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। গ্রাহক সংযোগ নিতে গিয়ে অনেকদিন বিদ্যুৎ অফিস ঘোরাঘুরি করার পর সেও আবার দালাল হিসাবে কাজ শুরু করে দেয়। স্থানীয় ইউপি জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাকর্মী এমনকি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অনুমোদিত ভিলেজ ইলেক্ট্রিশিয়ান নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা এ দালাল পেশা রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, ঈদগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় ১৪/১৫ চিহ্নিত দালাল পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সাথে কাজ করছে। গ্রাহকের নিকট থেকে শুধু পরিচয়পত্র ও ছবি নিয়ে থাকে। নতুন গ্রাহকের আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্তি দলিল, পর্চা, অনলাইন ফরম পূরন, সত্যায়িত্বসহ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস বারবার যোগাযোগ করে কাজ সম্পন্ন করে থাকে এ দালাল। আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্তি দলিল ও পর্চা ভুয়া এবং সত্যায়িত্ব সঠিক নয়। এ দালাল চক্রের সাথে এরিয়া ইনচার্জের গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ অফিসের ইনচার্জ হিসাবে গত ৩ মাস পুর্বে যোগদান করেন শিমুল মল্লিক। যোগদানের পর থেকে শুরু করে ব্যাপক অনিয়ম। গড়ে তোলে শক্তিশালী একটি দালাল সিন্ডিকেট। এ ইনচার্জের সাথে সার্বক্ষণিক থাকে দালাল চক্রের সদস্যরা। মাঠ পর্যায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ সংক্রান্ত আপডেট তথ্য দালাল মাধ্যমে নিয়ে থাকে। এমনকি গ্রাহকের মোবাইল থেকে কোনো কল করা হলে রিসিভ করা হয় না। পরিচিত দালাল থেকে মোবাইল কল করা হলে এবং টাকার পজেটিভ সিগনাল পেলেই সরেজমিন পরিদর্শন করে থাকে। দালাল সাথে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সাবষ্ট্রেশন লাইনম্যান পর্যন্ত নেটওয়ার্ক রয়েছে। এমন কি কোন গ্রাহক ইনচার্জের কাছে অভিযোগ নিয়ে গেলে সরাসরি পিয়নের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দেন বলে জানায়, ঈদগাঁও ভাদিতলার গ্রাহক নুরুল আলম, ছৈয়দ হোছন, বাইশারীর আমানুল হক, ঈদগড়ের ব্যবসায়ী আবুল কাশেম। রামুর গর্জনিয়ার থোইঙ্গাকাটার গ্রাহক জয়নাল আবেদিন, রশিদ নগর জেটি রাস্তার গ্রাহক রশিদা বেগম জানায় নতুন সংযোগের জন্য আবেদন করে ২ মাস পর ২৫০০ ও ৩৫০০শ টাকা দিয়ে সংযোগ পেয়েছি। ঈদগাঁও জাগির পাড়া এলাকার মৌঃ আইয়ুব আলী নামের একজন নতুন সংযোগের আবেদনকারী বলেন ২টি মিটারের জন্য দুই মাস আগে আবেদন করা হয়েছে। অফিসে শতবার যোগাযোগ করেছি। কয়েক চিহ্নিত দালালের মাধ্যমে কাজ না করায় কাজটি আটকে রেখেছে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা। ভাদিতলা সড়কে ঈদগাঁও জোনাল অফিস সরেজমিন দেখা যায়, তিনতলা বিশিষ্ট একটি ভাড়া কলোনীর ভবনের অফিস কক্ষে ২য় তলায় ইনচার্জের কক্ষ। নিচ তলায় সিঁড়ির পশ্চিম পাশে ক্যাশ কক্ষ, পুর্ব পাশে অভিযোগ কক্ষ, উপরে পুর্ব বিলিং কক্ষ, পাশে উপরের অপর একটি কক্ষে ১ জন ইন্সপেক্টর অফিস করে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় সমস্ত কাগজপত্র সরবরাহ রিসিভ করা পরিদর্শক রুম থেকে করা হয়। প্রায় ঘন্টাখানেক পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ অফিস সাধারন গ্রাহক বিল পরিশোধ ছাড়া বাকী কাজ দালাল মাধ্যমে হয়ে থাকে। দ্বিতলায় বসে অফিস করেন ইনচার্জ। একই তলায় অপর আরেকটি রুমে সমস্ত ডকুমেন্ট। বিদ্যুৎ অফিস গ্রাহকের জন্য হলেও প্রত্যেক রুমের কার্যক্রম সাথে দালাল সরাসরি কাজ করতে দেখা গেছে। অভিযোগ রয়েছে বাইশারী ও গর্জনিয়া ইউনিয়নের আংশিক নতুন সংযোগ বিদ্যুৎ গ্রাহক চিঠি ডাকযোগে প্রেরন করা হলেও বিদ্যুৎ অফিস দালাল মাধ্যমে চিঠি গ্রাহক হাতে পৌছে। দালাল গ্রাহকের হাতে চিঠি দিতে গিয়ে ৩/৪ শ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পর্যবেক্ষনে আরো দেখা গেছে, কোন গ্রাহক কোন কিছু জানতে চাইলে দ্রুত একটি অভিযোগ পত্র ধরিয়ে অন্যকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দালাল ছাড়া যোগাযোগ করা হলে পরে আসবেন যোগযোগ করা হবে ২/১ টি শব্দের মাধ্যমে বিদায় করা দেওয়া হয়। এ সময় আইয়ুব আলী নামের ঈদগড় হাসনাকাটা এলাকার এক ব্যক্তি একটি নতুন সংযোগ নেয়ার জন্য আসছেন। গত ৯ জুলাই সমীক্ষা ফি জমা দিলেও ১ মাস অতিক্রম করলেও রিপোর্ট দেয়নি। আলাপচারিতায় জানান, ঈদগাঁও এলাকার একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান নিজেকে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চুক্তিতে টাকা চেয়ে নিজে সরাসরি কাজ করে দিবেন বলেন আশ্বস্ত করেন (যদিওবা তার ছবি সংযুক্ত একটি ব্যানার বিদ্যুৎ অফিসে টাঙানো রয়েছে। উন্নয়ন ও তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সেবাখাত হচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের বিকল্প চিন্তা করা যায় না বলা চলে। সরকার ২০১৮ সালে প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার দৃঢ় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ২০২১ সালের মধ্যে সারাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করেছে। বৃদ্ধি করা হচ্ছে গ্যাস, কয়লা এবং তেল চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। বিদ্যুৎ অফিস জুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে টার্গেট ভিত্তিক গ্রাহক বৃদ্ধি। বাড়ছে বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রাহক সংখ্যা। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এমপি আনুষ্ঠানিক ভাবে স্ব স্ব এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন করে আসছেন। বিদ্যুতায়িত এলাকায় তেমনি বিদ্যুৎ ব্যবহারে প্রতিটি পরিবারে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সাথে খরচের পরিমান বেড়ে গেছে। চলছে বিদ্যুৎ সংযোগ সুবিধা নিতে গিয়ে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অনিয়ম। সংযোগ গ্রহনে দীর্ঘসূত্রিতা লোডশেডিং, মিটার রিডিং বাড়ানো সংযোগ বিচ্ছিন্ন নানা ভাবে হয়রানি শিকার হচ্ছে। পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ না করে কিংবা ক্ষুদ্র ঋন কিংবা শখের জিনিস বিক্রি করেছে। এমনকি বৃহত্তম ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। বে-সরকারি সেবাখাত বিদ্যুৎ গ্রহনে গ্রাহক ভোক্তার অধিকার লঙ্গিত হচ্ছে তেমনি বিদ্যুৎ কোম্পানি কোটি কোটি টাকা লোকসান দেখিয়ে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে বলেও প্রচার রয়েছে। ঈদগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপর অনুসন্ধান চালিয়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সমীক্ষা ফি দিয়ে ভোক্তা অধিকার সেবা সময় মতো পাচ্ছে না বলে একাধিক গ্রাহকের অভিযোগ। এ ধরনের হাজারো অভিযোগ রয়েছে ঈদগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের বিরুদ্ধে। এক কথায়, দালাল মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলে যে কোনো অসাধ্য কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তা না হলে মাস ঘুরেও বিদ্যুৎ সংযোগ সেবা পাওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে জানতে ইনচার্জ শিমুল মল্লিকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকালের কক্সবাজারকে বলেন আমি যোগদানের পর থেকে কোন অনিয়ম হয়নি। দালালের মাধ্যমে কোন কাজ আমরা করি না। ৪০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে হয়ত ৭/৮ জন গ্রাহক আমাদের বিরুদ্ধে থাকতে পারে। সব গ্রাহককে তো সন্তুষ্ট করা যাবে না। আমরা শতভাগ চেষ্টা করব যাতে যাতে কোন দালাল প্রশ্রয় না পায়। এসব বিষয়ে কক্সবাজারস্থ জি.এম আবদুন নুরের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টার পরও সংযোগ পাওয়া যায় নি।

পাঠকের মতামত: