ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

জাতিসংঘের উদ্যোগে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ ও ইকো সিস্টেমের উপর জরীপ শুরু ; অংশ নিচ্ছেন কক্সবাজারের তিন কর্মকর্তা

আতিকুর রহমান মানিক ::

জাতিসংঘের উদ্যোগে বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ ও ইকো সিস্টেমের উপর পক্ষকালব্যাপী এক জরীপ শুরু হয়েছে। গত ২ আগষ্ট শুরু হওয়া এ জরীপ কার্যক্রমের অানুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এম পি। উপকূলীয় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা সংলগ্ন সমুদ্রসীমায় এ জরীপের মূল কার্যক্রম চলবে বলে জানা গেছে। দেশের প্রতীতযশা ১১ জন কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ ও মৎস্য বিজ্ঞানী এতে অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে কক্সবাজারের তিন কর্মকর্তাও রয়েছেন। তারা হলেন কক্সবাজার সদর উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ডঃ মঈন উদ্দীন আহমদ, সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র কক্সবাজার’র উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দীন ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মহিদুল ইসলাম।

কর্মকর্তারা জানান, কক্সবাজার-টেকনাফ, প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ও মায়ানমার জলসীমার মধ্যবর্তী গভীর সমুদ্র এলাকায় মা-চিংড়ির বিচরন ও প্রজননস্হল “এ্যালিফেন্ট পয়েন্ট”সহ অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ন বিভিন্ন পয়েন্টকে জরীপের মূল ফোকাসে আনা হবে। বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় গত ২ আগষ্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া এ জরীপ কার্যক্রম চলবে আগামী ১৭ আগষ্ট পর্যন্ত।

জাতিসংঘের পতাকাবাহী নরওয়েজিয়ান আন্তর্জাতিক গবেষণা জাহাজ “আর ভি ফ্রিডটজফ ন্যানসেন” বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ ও ইকোসিস্টেমের উপর এ জরীপ কার্যক্রম শুরু করেছে। মৎস্য বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের নিয়ে গবেষনা জাহাজটি দেশীয় সমুদ্রসীমায় জরীপ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অপার সম্ভাবনাময় ও গুরুত্বপূর্ণ এ গবেষণা ব্লু ইকোনমির বিরাট সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করতে পারে বলে মনে করছেন মৎস্য বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গত ২ আগষ্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এম পি এ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলম মন্ডল, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, নেভাল এরিয়া কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল এম আশরাফ, নর‍ওয়েজিয়ান রয়েল এম্বেসির চ্যার্জ দ্য এফেয়ার্স,  প্রতিনিধি, মৎস্য অধিদপ্তর ও সামুদ্রিক মৎস্য জরীপ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় ব্যক্তিরা।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে মেরিন ফিসারিজ একাডেমীর প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন মাসুক হাসান আহমেদ  বলেন, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের সমুদ্রে কী কী প্রজাতির ও কত পরিমাণ সামুদ্রিক মাছের মজুদ আছে, কী কী সম্পদ রয়েছে এসবের সকল তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণা উপাত্ত মিলবে।

বক্তারা আরো জানান, এ জরীপের মাধ্যমে অত্যাধুনিক সার্ভের কার্যক্রম সম্পাদন হবে। সার্ভের রিপোর্ট ও ফলাফল বিশ্লেষন করে পরবর্তীতে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষন ও আহরনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জাতিসংঘের এফএও কর্তৃক ১৫ দিনব্যাপী এ গবেষণা ও সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

ইতিপূর্বের গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে ২৫০ জাতের মিঠা পানির মাছ এর বিপরীতে সাগরে রয়েছে অন্তত ৪৭৫ প্রজাতির মাছ। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছর ৮ মিলিয়ন টন মাছ ধরা পড়ে। এর মধ্যে শূন্য দশমিক ৭০ মিলিয়ন টন মাছ বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরা আহরণ করে। যার সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা জড়িত। তথ্য অনুযায়ি, সারা দেশে মোট মাছের উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৩৩ লাখ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত কিছু জরিপ থেকে জানা যায়, নানা প্রজাতির মূল্যবান মাছ ছাড়াও সমুদ্রসীমায় নানা ধরনের প্রবাল, গুল্মজাতীয় প্রাণী, ৩৫ প্রজাতির চিংড়ি, তিন প্রজাতির লবস্টার, ২০ প্রজাতির কাঁকড়া এবং ৩০০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি রাষ্ট্রাধীন সমুদ্র (টেরিটোরিয়াল সি), ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। বাংলাদেশের মালিকানাধীন বিশাল এ সমুদ্র সীমায় উপরোক্ত জরীপের ফলে মৎস্য সেক্টরে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

পাঠকের মতামত: