ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

মাতামুহুরী ট্রাজেডির সেই ঘটনাস্থল থেকে ফের বালু উত্তোলনের হিড়িক

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদী থেকে ফুটবল তুলে আনতে গিয়ে চোরাবালিতে আটকে পানিতে ডুবে অকালে জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়া চকরিয়া গ্রামার স্কুলের পাঁচ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে সেই ঘটনাস্থলে আবারও শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেছে কতিপয় বালু দুস্যরা। ঘটনাটি জানতে পেরে গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলা সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট খন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাতের নেতৃত্বে উপজেলা ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের অভিযোগে তিনটি শ্যালো মেশিনসহ বিপুল পরিমাণ পাইপ জব্দ করেছে। এ সময় উত্তোলন কাজে জড়িত থাকার অপরাধে দুই শ্রমিককে আটক করেছে আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

আটককৃতরা হলেন চকরিয়া পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ডের হালকাকারা এলাকার নুরুল আলমের ছেলে নুর হোসেন (৩২) ও একই ওয়ার্ডের মৌলভীর চর এলাকার মো: শফি আলমের ছেলে কবির আহমদ (৫০)।

অভিযোগ উঠেছে, মাতামুহুরী নদীর উজান ও ভাটির দিকে অন্তত ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার অংশে ২৫ থেকে ৩০টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা। এভাবে বালু উত্তোলনের কারনে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে তলদেশে ২০ থেকে ৩০ ফুট গভীর গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। এসব গর্তে বৃষ্টির পানির সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পলি মাটি পড়ে ভরাট হলেও গর্তগুলোর মুখ নরম থাকায় ভারি কিছু পড়লেই ওই গর্তে (টলটলে বালু) ডুবে যায়। এসব গর্তই মুলত চোরাবালি হিসেবে পরিণত হয়।

একইভাবে মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা ব্রীজের নীচ থেকে কয়েকবছর ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি নদীর ওই পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিব্যি বালু উত্তোলন করে আসছিলেন। যার কারনে নদীর ওই অংশে অসংখ্য গর্ত বা চোরাবালির সৃষ্টি হয়েছে। আর এসব চোরাবালিতে আটকে গত ১৪ জুলাই অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে মেধাবী পাঁচ শিক্ষার্থীকে। স্থানীয় পরিবেশ সচেতন মহল অভিযোগ তুলেছেন মেধাবী এসব শিক্ষার্থীদের মুত্যুর ঘটনার জন্য অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িত অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা দায়ী।

জানা গেছে, মাতামুহুরী ট্রাজেডি সংগঠিত হওয়ার অন্তত দুইমাস আগে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা ব্রীজ পয়েন্টের বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন। কিন্তু ১৪ জুলাই সংগঠিত শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঘটনার পর গতকাল সকাল থেকে বালু দস্যুরা পুনরায় একই কায়দায় ঘটনাস্থলে শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেন।

গতকাল মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা ব্রীজ পয়েন্টে অভিযানকালে আদালতের সাথে উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া থানার এসআই আমিনুল ইসলামসহ সঙ্গীয় পুলিশ দল ও কাকারা ভূমি অফিসের তহশিলদার ইসমত আলী, চিরিংগা ভূমি অফিসের সহকারী তহশিলদার চন্দন বাবু, আদালতের পেশকার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার কার্যালয়ের সহকারী তপন কান্তি পাল প্রমুখ।

অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) খন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত বলেন, সম্প্রতি সময়ে ঘটে যাওয়া মাতামুহুরী ট্রাজেডির পরও ঘটনাস্থল থেকে কতিপয় চক্র শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করে। বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে গতকাল দুপুরে সেখানে অভিযান চালিয়ে ৩টি শ্যালো মেশিন ও বিপুল পরিমাণ পাইপ জব্ধ করা হয়।

তিনি বলেন, অভিযানের সময় বালু উত্তোলনে জড়িত দুই শ্রমিককে আটক করা হলেও পরে তাদেরকে মুচলেখা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। জব্দকৃত মালামাল ও ঘটনায় জড়িত অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের আইনত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। #

পাঠকের মতামত: