ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

‘ইয়াবার’ কল্যাণে বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা!

গোয়েন্দা প্রতিবেদন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্রগ্রাম ::

‘ইয়াবা’র কল্যাণে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। বছর পাঁচেক আগেও যাদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা ছিল, তাদের ঘরে এখন ‘লক্ষী সদা বিরাজমান’। আপাত:দৃষ্টিতে এটি সুসংবাদ বলে মনে হলেও , ‘ক্রেজি ড্রাগ’ ইয়াবার ভয়াল থাবা চাকরিজীবীদের বেতনের টাকা, অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের টাকা,ব্যবসায়ীদের মুনাফাসহ মূল টাকা এবং বেকার যুবক–যুবতীদের মা–বাবার কষ্টার্জিত অর্থের টাকা শেষ করে দিচ্ছে। শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে গ্রামের আনাচে–কানাচে পর্যন্ত বিস্তার ঘটেছে নীরব ঘাতক ইয়াবা ট্যাবলেটের। সব শ্রেণি–পেশার মানুষের মাঝেই ইয়াবা আসক্তের হার বাড়ছে ক্রমাগত:। এমএলএম ব্যবসার মতো প্রথমে একজনের কাছে চালান আসে। সে দেয় চারজনের কাছে। ওই চারজন ব্যক্তি আরো দশজন হোলসেলারকে দেয়। তারা রিসেলারদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় পুরো শহরে। সর্বশেষ গত ২৭ জুলাই রাতে নগরীর স্টেশন রোড এলাকা থেকে ৫০০০ পিস ইয়াবাসহ মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. বেলাল(২৯) ও হেদায়েতুল উলুম হেফজ খানার শিক্ষক আবুল বশর (৩৫)কে গ্রেফতার করা হয়। এরা মূলত: রিসেলার। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, দেশে ৭৭ লাখ মানুষ ইয়াবায় আসক্ত। দিনে দুটি করে ইয়াবা বড়ি তারা খায়। প্রতিটি বড়ির মূল্য ৩০০ টাকা। সেই হিসেবে দৈনিক ৪৬২ কোটি টাকার ইয়াবা খাচ্ছে আসক্তরা। আর আসক্তরা প্রতি মাসে ইয়াবা খাচ্ছে ৬ হাজার ৯৩০ কোটি টাকার। বিপুল অঙ্কের এই অর্থ ব্যয় হচ্ছে ইয়াবায়। চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ–কমিশনার (ডিসি বন্দর) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ইয়াবা পাচারকারীদের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে চট্টগ্রামেও নতুন অনেক কোটিপতির সন্ধান মিলেছে। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে সামপ্রতিক যে তথ্য আছে সেটা হচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এখন পরিবহন খাতে বিনিয়োগ করছেন। পণ্য পরিবহন তাদের মূল উদ্দেশ্য নয়। পণ্যের আড়ালে ইয়াবা পাচারই হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কারণে প্রথাগত পরিবহন ব্যবসায়ী যারা আছেন তারাও বিপাকে পড়ছেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ইয়াবা বহন করে একস্থান থেকে অন্যস্থানে পৌঁছে দিতে মাদক ব্যবসায়ীরা নানা কৌশল অবলম্বন করছে। একটি কৌশল আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জেনে গেলে তারা নতুন আর একটি কৌশল অবলম্বন করছেন। নানা পথে, নানা কৌশলে আসছে ইয়াবা। ইয়াবা কেনা বেচার জন্য হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ আছে, ফেসবুকে গ্রুপ আছে, ইমোতে গ্রুপ আছে, ভাইবারে গ্রুপ আছে। সব গ্রুপেই ইয়াবা বিক্রি চলছে। সেখানে নানা আলোচনা হয়। ইয়াবার নিত্য নতুন নাম দেওয়া হয়। মোবাইলে টাকা দিলেই ইয়াবা বাসায় পৌঁছে যায়। ইয়াবার মূল উৎস হলো মিয়ানমার। সেখানে বিক্রি হয় কেজি কিংবা টনে। বাংলাদেশের ভেতরে আসার পর টেকনাফে তা বিক্রি হয় কাট হিসেবে। প্রতি কাটে থাকে ১০,০০০ পিস ইয়াবা। নানা ভাবে এর চোরাচালান হয। নতুন একটি তথ্য হলো ইয়াবা ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে মিয়ানমারের অনেক মাদক ব্যবসায়ী চট্টগ্রামে এসে বিয়ে করে বসতি গড়ে তুলেছে!

ইয়াবা লেনদেনের কৌশল প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, ইয়াবা বহনকারীদের যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়। তবে কাকে বা কোথায় চালানটি পৌঁছে দেওয়া হবে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য জানানো হয় না বহনকারীকে। সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ির কারণে ট্যাবলেট আকারে ইয়াবার পাশাপাশি আসছে তরল ইয়াবাও। দেশি–বিদেশি মাদক পাচারকারীরা ইয়াবার কেমিক্যাল দেশে এনে ট্যাবলেট তৈরি করে বিভিন্নস্থানে বাজারজাত করছে। এরইমধ্যে বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা ইয়াবা তৈরির কেমিক্যাল আটক করছে। এ সিন্ডিকেটগুলো কখনও ট্যাবলেট আবার কখনও নানা কৌশলে ইয়াবা তৈরির কেমিক্যাল মেটাফিটামিন ও সিউডোফিড্রিন দেশে নিয়ে আসে। পরে সীমান্ত এলাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ট্যাবলেট তৈরি করে বাজারজাত করে আসছে।

মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে প্রশংসা অর্জনকারী সদরঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ নেজামউদ্দিন বলেন, অনেকে অন্যান্য ব্যবসা বাণিজ্য ছেড়ে ইয়াবায় জড়িয়ে পড়ছে। এটা করতে গিয়ে যে পরিবার সমাজ ধ্বংস করে দিচ্ছে সেটা তারা বুঝছে না। তাই ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে আনতে সচেতনতা বৃদ্ধির ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ইয়াবা থেকে দেশকে রক্ষা করতে ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন। একসময় এইডস ব্যাপক হারে বেড়েছিল। কিন্তু সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আর এইডস রোগী খুঁজে পাওয়া যায় না। সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ইয়াবার বিরুদ্ধে এমন সচেতনতা বাড়ানো দরকার বলে তিনি জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে এই ইয়াবা ব্যবসা। মিয়ানমারের ৬০ টাকার এই ট্যাবলেট পাচার হয়ে এসে রাজধানী ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৩০০–৪০০ টাকা। সরবরাহ কম ও চাহিদা বাড়লে মাঝে মাঝে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর এ কারণে পেশা পরিবর্তন করে মাদক ব্যবসায় ঝুঁকছে অনেকে। এ সুযোগে সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকা। গত ১৫ মার্চ ইয়াবা ব্যবসায়ী দুই ভাই মো. আলম (৪০) ও মো. জসিম উদ্দিন (২৩) ঢাকায় র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে। তাঁদের বাড়ি কঙবাজারে। বড় ভাই আলমের স্বপ্ন ছিল অল্প সময় বড়লোক হবেন। আর এ জন্যই বেছে নেন ইয়াবা ব্যবসাকে। ব্যবসায় জড়ান ছোট ভাইকেও। রাজধানীতে নিজে ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকছিলেন। ছোট ভাইকে আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেন। নিজের ফ্ল্যাটে জসিম ইয়াবা বিক্রি করতেন, আবার সেখানেই নিরাপদে ইয়াবা সেবনের জায়গাও করে দেন তিনি। কিন্তু র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে স্বপ্ন ভেঙে যায় তাদের। উদ্ধার করা হয় ১ লাখ ২৩ হাজার পিস ইয়াবা।

২৩ জুলাই ল্যাপটপের ব্যাগ থেকে ইয়াবা উদ্ধার করেছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ। ব্যাগের ভেতর ফোমকে বিশেষ কুঠুরি হিসেবে ব্যবহার করে ছড়িয়ে রাখা হয়েছিল ইয়াবা। সেটা খুঁজতে পুলিশের সময় লেগেছে দুই ঘণ্টারও বেশি। ল্যাপটপের ব্যাগে ইয়াবা, খুঁজে পেতে পুলিশের লাগল ২ ঘণ্টা। গ্রেপ্তার করা হয় বাবা, ছেলেসহ তিনজনকে। এদের মধ্যে বাবা বঙিংয়ের সাবেক চ্যাম্পিয়ন।

গত ১৬ এপ্রিল আনোয়ারা গহিরাকেন্দ্রিক ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রধান আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর এলাকার চান মিয়ার ছেলে মোজাহার ধরা পড়ে র‌্যাবের হাতে। নিজের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করলেও দেশের তরুণদের ইয়াবায় আসক্ত করে মোজাহার তাদের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন র‌্যাব–৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ। মোজাহারের দুই ছেলে দুই মেয়ে। এক ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করে। আরেক ছেলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করা এক মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর কাছে বিয়ে দিয়েছেন। আরেক মেয়ে চট্টগ্রামে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে পাশ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছেন। নগরীতে আছে ছয়তলা বাড়ি। এর দ্বিতীয় তলায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন। র‌্যাব অধিনায়ক বলেন নিজের সন্তানরা হচ্ছে উচ্চশিক্ষিত আর দেশের তরুণদের হাতে ইয়াবা তুলে দিয়ে মোজাহার তাদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, মোজাহারের পেঁয়াজ–মরিচের পাইকারি ব্যবসা আছে। এর আড়ালে তিনি ইয়াবার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। নগরীর সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় তার বিলাসবহুল বাড়ি আছে।

৮ এপ্রিল চকরিয়ার নূরুল হুদা নামে এক যুবক ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। সাত বছর আগে যে ছিল বাসের হেলপার। আর এখন চট্টগ্রাম শহরের অভিজাত এলাকার যে ফ্ল্যাটে তার পরিবার থাকে, সেটির ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা। আয়ের উৎস একটাই, ইয়াবা। মাত্র পাঁচ–ছয় বছরের মধ্যে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। গাড়ি আছে দুটি। বিউটি পার্লার খুলে দিয়েছেন স্ত্রীকে। রয়েছে মুঠোফোনের দোকান। জমি কিনেছেন কঙবাজার শহরে, ফ্ল্যাট কিনেছেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম শহরের ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে ব্যক্তিগত গাড়িসহ হুদাকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সেদিন হুদার গাড়িতে ১০ হাজার ইয়াবা ছিল।

ইয়াবা ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান নয়–দশ বছর আগেও ছিলেন বেকার। টেকনাফ মৌলভীপাড়ার চোরাচালানের ঘাট নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর ইয়াবা পাচার শুরু করেন। এখন দুটি মাইক্রোবাস ও চারটি ভারতীয় বিভিন্ন মডেলের দ্রুতগামী মোটরসাইকেলের মালিক। একটি আলিশান বাড়িও বানিয়েছেন। তার ছোট ভাই আবদুর রহমান ও কামাল হোসেন ইয়াবা ব্যবসায় সক্রিয়।

গ্রীনলাইন পরিবহনের এসি বাসে কঙবাজার থেকে ঢাকা যাওয়ার সময় নতুন ব্রিজ এলাকায় তল্লাশির সময় মহিলা ক্রিকেটার মুক্তা ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন ৩০ এপ্রিল সকালে। তিনি প্রায়ই কঙবাজার যাওয়া–আসা করতেন। মুক্তা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনাসের্র ছাত্রী ছিলেন। মাদকাসক্ত হওয়ার পর অনিয়মিত হয়ে পড়ায় তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়। তিনি ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ,মহিলা ক্রিকেট লীগে নিয়মিত অংশ নেন। মহিলা ক্রিকেট আনসার টিমের তিনি একজন নিয়মিত ক্রিকেটার বলে জানান বাকরিয়া থানার ওসি প্রণব চৌধুরী।

৪ মে শুক্রবার চট্টগ্রামের হালিশহরের শ্যামলী হাউজিং সোসাইটির একটি ফ্লাটে ধরা পড়ে ইয়াবার সবচেয়ে বড় চালান। নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে এই অভিযানে ১৩ লাখ ইয়াবাসহ মো. আশরাফ (৩৪) ও হাসান (২৪)নামে দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে আশরাফ ছিলেন সৌদি আরব প্রবাসী। তাদের বাড়ি বান্দরবান পার্বত্য জেলায়।অতিরিক্ত উপ–কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, আশরাফ প্রবাস জীবনে তেমন উন্নতি করতে না পারলেও দেশে এসে মাত্র এক দুই বছরে ইয়াবা পাচার করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন। শ্যামলী হাউজিং সোসাইটির ওই ফ্লাট ছাড়াও নাসিরাবাদে একটি ফ্লাট ও বাকলিয়ায় একটি প্লটের মালিক তিনি। রয়েছে দুটি গাড়িও।

গত বছর ৩১ আগস্ট সিদ্দিকুল ইসলাম নামে এক ইয়াবা ব্যসায়ীর খোঁজ মিলে। যার কৌশলের কাছে বারবার পরাস্ত হতে হয়েছিল পুলিশের কৌশল। তবে শেষরক্ষা হয়নি তার। ইয়াবা পাচারে সিদ্দিকুল ইসলাম গড়ে তুলেছেন পারিবারিক সিন্ডিকেট। সূত্র জানায়,ইয়াবার চালান টেকনাফ থেকে ঢাকায় আনা এবং ঘাটে ঘাটে পৌঁছে দিতে চারটি জিপ ব্যবহার করেন সিদ্দিকুল ইসলাম। একটি জিপে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চালান আনা হয়। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনতে ব্যবহার করেন দুটি জিপ। আর ঢাকায় ঘাটে ঘাটে ইয়াবার চালান পৌঁছে দিতে বাকি জিপটি ব্যবহার করা হয়। ইয়াবাবাহী জিপ পুলিশ রাস্তায় আটকালে অনেক সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের গাড়ি বলে পরিচয় দিয়েও রক্ষা পান তারা। গাড়ি চালানোর জন্য রয়েছে বেতনভুক্ত চারজন দক্ষ চালক। প্রতি চালানেই তাদের আবার দেয়া হয় ঝুঁকি ভাতা। সিদ্দিকের তিন ছেলের দু’জনই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। স্ত্রী রশিদা খাতুনও গ্রেপ্তার হয়েছেন দু’দফা। টেকনাফ থেকে ঢাকায় ইয়াবার চালান নিয়ে আসেন সিদ্দিকের দুই ছেলে রবিউল ইসলাম ও ফরিদুল ইসলাম। একেক সপ্তাহে একেক ছেলে এই দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তার আগে নেয়া হয় অভিনব এক কৌশল। চালান আনতে যাওয়ার আগে রবিউল কিংবা ফরিদুল নিজের মোবাইল নম্বরটি কয়েকদিন আগেই বন্ধ করে দেন। তখন ব্যবহার করেন নতুন সিম ও ফোন সেট। পাশাপাশি ঢাকার কোনো একটি থানায় সিদ্দিক বা তার স্ত্রীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ জিডি করা হয়। যেন চালানসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও আদালতে দেখাতে পারেন, যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনি তিনদিন বা চারদিন আগেই নিখোঁজ হয়েছেন। এমন তথ্যই বের হয়ে এসেছে তাদের গ্রেপ্তারের পর। আর এ পদ্ধতিতে আদালত থেকে সহজেই জামিন পেয়ে যান তারা। এরমধ্যে ছেলে রবিউল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। যদিও ঠিকমতো ক্লাস করেন না, বাবার ইয়াবা ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত তিনি। নিয়ন্ত্রণ করেন ইয়াবা সিন্ডিকেট।

পাঠকের মতামত: