ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

রামুতে ছাত্রীর শ্লীলতাহনিকারী শিক্ষক বহাল তবিয়তে

হাবিবুর রহমান সোহেল, নাইক্ষ্যংছড়ি ::
রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্ব জুমছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর শ্লীলতাহানিকারী ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছৈয়দ আলম এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। ঘটনার একমাস পেরিয়ে গেলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বিদ্যালয়ে অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্ত শিক্ষক ছৈয়দ আলম বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক মেম্বার আবুল কাশেমের নিকত্মীয় হওয়ায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আবুল কাশেম এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় তা স্থানীয়ভাবে মীমাংসের চেষ্টা চলছে।

অভিযোগ মতে, গত ২১ জুন পূর্ব জুমছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছৈয়দ আলম ওই ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে একা পেয়ে শ্লীলতাহানি করে। বিষয়টি কাউকে না জানাতে ভয়ও দেখায় ছাত্রীকে। তারপরও ওই ছাত্রী মাকে বিষয়টি জানালে মা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়েও তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তবে ১জুলাই বিদ্যালয়ের মাসিক বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করে ওই শিক্ষককে জেরা করলে তিনি অভিযোগ স্বীকার করেন। বৈঠকে তাকে ভর্ৎসনা করে ভবিষ্যতে এই ধররেণ অপকর্ম আর করবে না বলে কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম ওই শিক্ষকে মুচলেকা দিতে বলেন। আগামী কাল বুধবার লিখিত মুচলেকা জমা দেয়ার দিন ধার্য্য রয়েছে।

এদিকে বিদ্যালয়ের সাধারণ অভিভাবকেরা অভিযোগ করেছেন, ওই শিক্ষক অতীতেও ছাত্রীদের নানাভাবে যৌন হয়রানিসহ এই ধরণের অপকর্ম করেছে। এভাবে বার বার পার পেয়ে যাওয়ায় সে পুনরায় একই ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাই এবার তার বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নেয়ার দাবি জানাচ্ছে অভিভাবকেরা।

স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক ছৈয়দ আলম বিদ্যালয়ের সভাপতি আবুল কাশেমের চাচাতো বোনের জামাই। এর কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না দিয়ে তিনি মুচলেকার নামে ওই শিক্ষককে বাঁচাতে চেষ্টা করছেন। এই জন্য ছৈয়দ আলমের শ্বশুরবাড়ির লোকজনও নানাভাবে দেনদরবার করছে। তারা মোটা অংকের টাকাও ব্যয় করছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরিয়ম বেগম বলেন, ‘ঘটনার পর ওই ছাত্রী ও তার মা আমাকে প্রথম জানায়। আমি বিষয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে জানিয়েছে। তারা একটা ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।’

বিদ্যালয়ের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘শিক্ষক ছৈয়দ আলম ছাত্রীর সাথে অপকর্ম করার কথা স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যতে আর করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন। তাই বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংস করার চেষ্টা করছি। তবে তাকে লিখিত মুচলেকা দিতে বলা হয়েছে। কাল বুধবার মুচলেকা জমার দিন ধার্য্য রয়েছে।’ এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা মুচলেকা দিয়েই সমাধান করা উচিত কিনা জানতে চাইলে সভাপতি আবুল কাশেম কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানান, লম্পট শিক্ষক ছৈয়দ আলম অতীতে এরকম অপকর্ম আরো ঘটিয়েছে। পার পেয়ে পেয়ে বার বার এধরনের অমার্জনীয় ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাই তার কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার। তা না হলে আগামীতেও একই ঘটনা ঘটাবে। এই অভিভাবকেরা আতঙ্কে রয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে রামু উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিমগীর হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের জানায়নি কেউ। যদি তা হয়ে তাহলে মারাত্মক অপরাধ। নিয়ম মতে ভুক্তভোগী বা এলাকার লোকজন অভিযোগ করলে আমরা তদন্ত করে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবো।’

পাঠকের মতামত: