ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পেকুয়ায় টিআর কাবিখার ৭৯ প্রকল্পের ২১৬টন খাদ্য শষ্য কালোবাজারে: পিআইও একাই হাতিয়ে নিল ৫লক্ষাধিক টাকা!

durnitiনিজস্ব প্রতিনিধি, পেকুয়া ::
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় চলতি অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ে টিআর ও কাবিখার ৭৯ প্রকল্পের বিপরীতে ২১৬ টন খাদ্য শষ্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা সংশি¬ষ্ট প্রকল্প কমিটির লোকজন পিআইওর নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গঠন করে কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারী বিপুল পরিমান খাদ্য শষ্য পানির দরে কালো বাজারে বিক্রি করে দেওয়ায় ওই ৭৯ প্রকল্পের কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে। ৭৯ প্রকল্পের ২১৬ টন টিআর কাবিখার চাল ও গম কালোবাজারে বিক্রি বিক্রি করে প্রকল্প কমিটির লোকজনের কাছ থেকে পেকুয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ একাই হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা। গত কয়েকদিন পূর্বে পিআইওর এহেন দূর্নীতি ও ঘুষ বানিজ্যের খবর এলাকায় চাউর হলে সর্বত্রে ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা পেকুয়ার পিআইওর এহেন ঘুষ বানিজ্যের ঘটনায় দ্রুত উর্দ্ধতন কর্র্তৃপক্ষের নিরপেক্ষ সরকারী তদন্ত দাবী করেছেন।
জানা গেছে, গত এক মাস পূর্বে কুতুবদিয়া উপজেলা থেকে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগে তাকে পেকুয়া বদলী করেন। আর পেকুয়ায় যোগদান করেই সৌভ্রাত দাশ শুরু করেন নানান অনিয়ম দূর্নীতি ও বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্য। কুতুবদিয়ার বিভিন্ন কর্মসৃজন প্রকল্প, টিআর ও কাবিখা প্রকল্প থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে পিআইও সৌভ্রাত দাশের বিরুদ্ধে।
কুতুবদিয়া পিআইও অফিসের সহকারী মো. শামশুল আলম জানান, পিআইও সৌভ্রাত দাশ কুতুবদিয়ায় কর্মরত থাকাকালে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে অনিয়ম দূর্নীতি করে লাখ লাখ টাকা লোপাট করেছেন। যাহা সরেজমিনে তদন্ত করলে সত্যতা পাওয়া যাবে বলে ওই সরকারী কর্মচারী দাবী করেছেন। তিনি আরো বলেন, গত তিন মাস পূর্বে পিআইও সৌভ্রাত দাশের দূর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাকে মারধরও করা হয়।
সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি ১৫-১৬ অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ে পেকুয়া উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী মুহাম্মদ ইলিয়াছ টিআর প্রকল্পের আওতায় পেকুয়া সদর ইউনিয়নে টিআরের ১৫ প্রকল্পের বিপরীতে ৪৪ টন চাল, টইটং ইউনিয়নে ৭ প্রকল্পের বিপরীতে ৮টন, রাজাখালী ইউনিয়নে ৬ প্রকল্পের বিপরীতে ৯টন, মগনামা ইউনিয়নে ৮প্রকল্পের বিপরীতে ৮টন, শিলখালী ইউনিয়নে ১১প্রকল্পের বিপরীতে ১২টন, বারবাকিয়া ইউনিয়নে ৯ প্রকল্পের বিপরীতে ১২ টন ও উজানটিয়া ইউনিয়নের ৭প্রকল্পের বিপরীতে ৭টনসহ সর্বমোর্ট ১০০ টন খাদ্য শষ্য বরাদ্দ দেন। গত মাসের জানুয়ারীর মধ্যেই ওই সব খাদ্য শষ্য সংশি¬ষ্ট প্রকল্প কমিটির লোকজন পেকুয়ার পিআইও অফিস থেকে বরাদ্দের ছাড়পত্রও উত্তোলন করে নিয়েছেন। আর স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী (কাবিখার) আওতায় পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের ৮টি প্রকল্পে বিরীতে ৬৪টন খাদ্য শষ্য বরাদ্দ দেন।
এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ওয়াশিকা আয়শা খান ও চলতি অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ে পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে টিআরের ৫প্রকল্পের বিপরীতে ২৫টন খাদ্য শষ্য, কাবিখার ৩ প্রকল্পের বিপরীতে আরো ২৭টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব বরাদ্দও সংশি¬ষ্ট প্রকল্প কমিটি গত জানুয়ারী মাসের মধ্যেই পেকুয়ার পিআইও অফিস থেকে বরাদ্দের ছাড় পত্র নিয়ে চকরিয়া খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তোলন করে নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্প কমিটির লোকজন পেকুয়ার পিআইও অফিস থেকে বরাদ্দের ছাড়পত্র নিয়ে চকরিয়া খাদ্য গুদাম থেকে খাদ্য শষ্য উত্তোলন করে চকরিয়া কয়েকজন চাল পাচারকারী ডিলারের কাছে পানির দরে বিক্রি করে দিয়েছেন। সরকারী নিয়ম হচ্ছে, কাবিখা প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাজের বিনিময়ে সরাসরি খাদ্য শষ্য দিতে হবে। পেকুয়ার কোন প্রকল্পেই শ্রমিকরা খাদ্য শষ্য পাইনি। ওই সব প্রকল্পের খাদ্য শষ্য কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়ে সংশি¬ষ্ট প্রকল্প কমিটিগুলো নয়ছয় প্রকল্পগুলো যেনতেনভাবে বাস্তবায়ন করেছেন।
গতকাল ১১ ফেব্রে“য়ারী সরেজমিনে পেকুয়ার বিভিন্ন প্রকল্পে পরিদর্শন করে প্রকল্প কমিটির লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পেকুয়ার পিআইও সৌভ্রাত দাশ প্রতিটি প্রকল্পের লোকজনের কাছ থেকে প্রতিটনের বিররীতে ‘অফিস খরচের’ কথা বলে দুই হাজার দুইশত টাকা করে ঘুষ আদায় করেছেন। চকরিয়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাও প্রতি টনের বিপরীতে পাচশত টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন।
টইটং ইউনিয়নের একটি কাবিখা প্রকল্পের সভাপতি ও সদস্য সচিব জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য তাদের অনূকূলে একটি সড়ক ও মসজিদে সৌর বিদ্যুদ স্থাপনের জন্য ৮টন চাল বরাদ্দ দেন। গত জানুয়ারীর মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়েছে। ৮ টন চালের বরাদ্দের ছাড়পত্র নেওয়ার সময় পেকুয়ার পিআইও প্রতিটন থেকে দুই হাজার দুই শত টাকা করে তাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন।
শিলখালী ইউনিয়নের একটি কাবিখা প্রকল্পের সভাপতি অভিযোগ করেছেন, তার অনূকূলে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাস্তা সংস্কারের জন্য ৮টন চাল বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বরাদ্দের ছাড়পত্র (ডিও) নেওয়ার সময় পেকুয়ার পিআইও সৌভ্রাত প্রতিটন থেকে দুই হাজার দুইশত টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন।
এভাবে পেকুয়ার পিআইও সৌভ্রাত দাশ পেকুয়া উপজেলার টিআর ও কাবিখার ৭৯ প্রকল্পের ২১৬ টন খাদ্য শষ্যের বিপরীতে সংশি¬ষ্ট প্রকল্প কমিটির কাছ থেকে প্রতিটন দুই হাজার দুই শত টাকা করে সর্বমোর্ট ৪লাখ ৭৫হাজার দুইশত টাকা ঘুষ নিয়েছেন। যা উর্দ্ধতন কর্তূপক্ষ সরেজমিনে পেকুয়ার টিআর ও কাবিখা প্রকল্প সরেজমিনে তদন্ত করলে সত্যতা মিলবে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে পেকুয়ার পিআইও সৌভ্রাত দাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কৌশলে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ঘুষ নেওয়ার প্রসংগটি এড়িয়ে গিয়ে এ প্রতিবেদককে চা খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে মোবাইলের লাইন কেটে দেন। পরে একাধিকাবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, পেকুয়ার টিআর ও কাবিখা প্রকল্প থেকে পিআইওর ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তদন্ত ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি প্রমানিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: