ঢাকা,সোমবার, ৬ মে ২০২৪

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ নেই ৫৫০ মিটার, সাগরে হারিয়ে যাচ্ছে কাঁকপাড়া

নাজিম উদ্দিন, পেকুয়া:

পেকুয়ায় উপকুলীয় ইউনিয়ন মগনামায় বেড়িবাঁধ নেই ৫৫০ মিটার। এতে করে উপজেলার সাগর তীরবর্তী মগনামা ইউনিয়নের দক্ষিন অংশ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। কুতুবদিয়া চ্যানেলের প্রচন্ড ঢেউ ও তীব্র পানির ¯্রােতে বিলিন হচ্ছে কাঁকপাড়াসহ আশপাশের আরও বেশ কিছু এলাকা। বান্দরবানের পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রিত প্রায় ১৮০০ ফুট বেড়িবাঁধ অরক্ষিত কাঁকপাড়া অংশে। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে মগনামার পশ্চিম ও দক্ষিন অংশের এ সব বেড়িবাঁধ পানির ধাক্কায় বিলীন হয়ে যায়। এতে করে মগনামার বিপুল জনগোষ্টী চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে ওই বেড়িবাঁধ সংষ্কার করা অত্যন্ত জরুরী হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সুত্র জানায়, কাঁকপাড়া বিলীন অংশ বেড়িবাঁধ সংষ্কার কাজ বাস্তবায়ন করতে বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু করা হবে সে সম্পর্কিত বিষয়টি এখনও অমীমাংসিত থেকে গেছে। উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের পোয়ার মুখ নামক খ্যাত কাঁকপাড়া মাজার সংলগ্ন স্থানে প্রায় ৫৫০ মিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে। বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধের এ সব অংশ সমুদ্রের সাথে একাকার হয়েছে। বেড়িবাঁধের কোন ধরনের চিহ্ন ওই ১৮ চেইনের মধ্যে নেই। কুতুবদিয়া চ্যানেলের নদীর চরের সাথে বেড়িবাঁধ মিশে গেছে। স্থানীয় জানায়, কাঁকপাড়াসহ মগনামার পশ্চিমের বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে বিগত ৩/৪ বছর আগে থেকে। কাঁকপাড়া অংশ সম্পূর্ন বিলীন হয়। সাগরের লোনা পানি বেড়িবাঁধের বিলীন অংশ দিয়ে প্রবেশ করে মগনামাসহ পাশর্^বর্তী উজানটিয়া ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। গত তিন বছরে এ দুই ইউনিয়ন একাধিকবার প্লাবিত হয় বর্ষা মৌসুমে। পাউবো টেকসই বেড়িবাঁধ সংষ্কার কাজ বাস্তবায়ন করতে প্রায় ২শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। মাটি ভরাট নদীর ¯্রােতধারা ঠেকাতে সিসি ব্লক জিউ টেক্সটাইল দেয়া হয় বেড়িবাঁধে। শরৎঘোনা থেকে মগনামা জেটিঘাট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১ কিলোমিটারে মাটি ভরাট হয়েছে। দেড় কিলোমিটার সংষ্কার কাজ চলমান রয়েছে। মগনামা জেটিঘাট থেকে চ্যাপ্টাখালী নাশি পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সংষ্কার কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। চ্যাপ্টাখালী নাশি থেকে ঢলন্যাপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মাটি ভরাট কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। ওই অর্থ থেকে পাউবো সংষ্কার কাজ বাস্তবায়ন করছে। তবে কাঁকপাড়ার শেখ আবদুল আজিজ চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দক্ষিনে উজানটিয়ার সীমানা পর্যন্ত প্রায় ৪০ চেইন সংষ্কার কাজের আওতায় আসেনি। এরই মধ্যে প্রায় ২০ চেইন মত কাজ বাস্তবায়নের অর্থ বরাদ্দ দেয় পাউবো। ওই ২০ চেইনের কাজ আরম্ভ করা হয়েছে। আবদুল আজিজ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সোজা দক্ষিনে আরও ১৮ চেইন বেড়িবাঁধ কাঁকপাড়ায় একেবারে নেই। ১৯৯২ সালে সৌদি সরকারের অর্থায়নে এ অংশে বেড়িবাঁধ সংষ্কার হয়েছে। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ওই অংশ সংষ্কার থেকে বঞ্চিত হয়। এ ১৮ চেইন বর্তমানে সাগরের সাথে মিশে গেছে। পাউবো জানায়, অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। তবে টাকার ছাড় পাওয়া যায়নি। খুব শীঘ্রই কাজের কার্যাদেশ দেয়া হবে। গতকাল রবিবার দুপুরে সরেজমিন বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করতে কাঁকপাড়ায় যাওয়া হয়। এসময় দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবানের ৬৫/২বি পোল্ডারের বেড়িবাঁধ মগনামা দক্ষিন ও পশ্চিম অংশে বিলীন হয়েছে। পশ্চিমের অবশিষ্ট বেড়িবাঁধ ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে। গত ২ বছর ধরে এ সব স্থানে সংষ্কার কাজ চলছে। কাঁকপাড়া মাজার পয়েন্টে বেড়িবাঁধ নেই। মৎস্য ও লবণ চাষীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে রিংবাঁধ তৈরী করে। সাগরের লোনা পানি লোকালয়ে প্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয়রা এ রিংবাঁধ তৈরী করে। বর্তমানে প্রতিরোধক হিসেবে এ রিংবাঁধ একমাত্র ভরসা। এদিকে ১৮ চেইন বেড়িবাঁধ বিলীন থাকায় মগনামার হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকির মধ্যে আছে। এক,দুই মাসের মধ্যে বেড়িবাঁধ সংষ্কার কাজ বাস্তবায়ন না হলে নতুন করে সংকট দেখা দেবে মগনামার বিপুল জনগোষ্টীর মাঝে। তারা বেড়িবাঁধের এ অংশ খোলা থাকায় উদ্বিগ্ন। কাঁকপাড়া শেখ আবদুল আজিজ চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয় সাগর গর্ভে বিলীন হচ্ছে। মাজার সাগরে চলে গেছে। প্রতিদিন জোয়ার ভাটা চলছে। বেড়িবাঁধ সংষ্কার দাবীতে জনপ্রতিনিধিরা সোচ্চার হচ্ছে। মগনামা ইউনিয়নের আর্থ সামাজিক বিপন্ন হওয়ার উপক্রম দেখা দেয়ায় দ্রুত বেড়িবাঁধ সংষ্কার দাবীতে সোচ্চার হয়েছেন সর্বস্তরের জনসাধারন। গতকাল রবিবার পেকুয়ায় গনমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিগন। এ সময় চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম জানায়, মগনামা চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঝুঁকি হ্রাস করতে হলে কাঁকপাড়া অংশের বেড়িবাঁধ সংষ্কার করতে হবে। সরকারকে ধন্যবাদ জানায়, দ্রুত সময়ে বেড়িবাঁধের অবশিষ্ট অংশ সংষ্কার করায়। তবে চতুরদিকে কাজ সমাপ্ত হলেও কাঁকপাড়া অংশ খোলা থেকে গেছে। পানি এ অংশ দিয়ে প্রবেশ করলে মগনামা সমগ্র প্লাবিত হবে। আমি গ্রামীন অবকাঠামো রাস্তাঘাট সংষ্কার করেছি। বিপুল সড়ক মাটি ভরাট বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নিচু সড়কগুলো উঁচু করা হয়েছে। বেড়িবাঁধের এ অংশ সংষ্কার না হলে এ সব রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাবে। ফের বিধ্বস্ত হবে গ্রামীন রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্টানসহ অবকাঠামো। এ ব্যাপারে পাউবোর দায়িত্বরত এসও গিয়াস উদ্দিন জানান, টেন্ডার প্রকিয়াধীন। চিন্তার কারন নেই। পাউবো খুব দ্রুত সময়ে কাজ বাস্তবায়ন করবেন। পাউবো বান্দরবানের এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। এ সম্পর্কিত বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে রিং দেয়া হয়। তবে সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

পাঠকের মতামত: