ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেনা উদ্যোক্তারা হুমকির মূখে পাহাড়ের সাদা স্বর্ণ রাবার

ukhiyacox-0722016-300x153ফারুক আহমদ :
উখিয়া সীমান্তে পাহাড় জুড়ে গড়ে উঠা সম্ভবনাময়ী রাবার বাগানে রাবাব উৎপাদন বাড়লেও বাজারে দাম অর্ধেকে নেমে আসায় কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে শিল্প উদ্যোক্তদের। উখিয়া, ঘুমধুম ও তুমব্রু মৌজার বিস্তৃর্ণ পাহাড়ী এলাকায় দেশে সাদা স্বর্ণ হিসেবে খ্যাত রাবার শিল্প এখন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। শুধু উখিয়া বা ঘুমধুমে নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা রাবার বাগানের মালিকগণ পুঁজি সংকটে পড়ে হুমকীর মুখে পড়েছে রাবার উৎপাদন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে যে পরিমান রাবার উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশের চাহিদার ৬০ ভাগ মেটানো সম্ভব হলেও বিদেশ থেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাবার আমদানী করা হচ্ছে। অন্যদিকে রাবার আমদানীতে নামমাত্র আমদানী শুল্ক বসানো এবং কৃষিপণ্য হলেও রাবার বেচার সময় শতকরা ১৫ টাকা ভ্যাট ও ৪ টাকা আয়কর চাপিয়ে দেওয়ার কারণই দেশের রাবার শিল্পের বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।  ভিয়েতনাম দেশের বর্তমান বাজার দরের চেয়ে কম দামে রাবার এদেশে রপ্তানি করছে।
রাবান বাগানের সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে,  কাঁচা রাবারের স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহযোগিতায় গ্লাসকো রাবার এন্ড কোম্পানী নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ১৯৮০-৮১ সালে সরকারের নিকট ৪০ বছরের জন্য লীজ নিয়ে উখিয়ার কুতুপালং টিভি রিলে কেন্দ্রের পার্শ্বে ২৫একর জায়গায় রাবার বাগান সৃজন করে। ওই বাগানের ম্যানেজার রবিউল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়া থেকে বীজ এনে এ বাগানটি গড়ে তোলা হয়। পরবর্তীতে প্রায় ঘুমধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০/২৫টি রাবার বাগান গড়ে উঠেছে। তিনি এসময় জানান,  গত ২ বছর ধরে রাবারে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হচ্ছে। প্রতিকেজি রাবার উৎপাদনে ১৮৮ টাকা খরচ পড়লেও বর্তমানে বাজার দর পাওয়া যাচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। এ অবস্থা চলতে থাকায় গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি। শুধু এ বাগানই নয়,বর্তমানে কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ে দেশের সরকারী-বেসরকারী রাবার বাগান। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বেসরকারী বাগানগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে গত কয়েক বছর ধরে রাবার শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসায় প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানান বাগানের ম্যানেজার রবিউল।
সরেজমিনে রাবার বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানের হাজার হাজার গাছে ঝুলছে ছোট ছোট মাটির পাত্র। সেই পাত্রে কাটা অংশ দিয়ে গাছ বেয়ে বেয়ে পড়ছে ধবধবে সাদা দুধের মতো রাবারের কষ। পাত্রে জমা হওয়া রাবারের কষ সংগ্রহ করে শ্রমিকেরা ভার করে নিয়ে যাচ্ছে কারখানায়। বাগানের ম্যানেজার রবিউল বললেন, মূলত সারা বছরই রাবার উৎপাদন চলে। তবে অক্টোবর থেকে জানুয়ারী, সর্বশেষ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত পাঁচ মাস রাবার উৎপাদনের ভর মৌসুম। মৌসুমে প্রতিদিন উখিয়া ও ঘুমধুমে রাবার বাগান থেকে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার কেজি কষ আহরন করা হয়। শীতে কষ আহরণ বেশী হয়, আবার বর্ষায় উৎপাদন কমে আসে। এসব কষ আহরণে নিয়োজিত রয়েছে নিয়মিত অনিয়মিত প্রায় শতাধিক শ্রমিক। বাগান থেকে সাদা কষ সংগ্রহের পর ৭দিনের মধ্যে তা প্রক্রিয়াজাত করে শুকনো রাবারে পরিণত করা হয়।
শ্রমিকরা জানান, রাবার বাগান থেকে কষ সংগ্রহ করে কারখানায় আনার পরে কষগুলো নিদির্ষ্ট পাত্রে ঢালা হয়। এর পর কষের সঙ্গে পানি ও এসিড মিশিয়ে নির্ধারিত স্টিলের ট্যাং-এ জমা রাখা হয়। সেখানে আলাদা প্লেট বসিয়ে কোয়াগোলাম বা রাবার সিটে পরিণত করা হয়। এরপর রোলার মেশিনের সাহায্যে কষ থেকে পানি বের করে ড্রিপিং শেডে শুকানো হয়। পরে ধুমঘরে তা পোড়ানো হয়। ওই প্রক্রিয়া শেষে রাবার ৫০কেজি ওজনেরবান্ডিল করে বস্তা ভর্তি করে গুদামজাত করা হয়। তিনি জানান,বাগান থেকে কষ এনে শুকনো রাবার সিটে পরিণত করতে সময় লাগে সর্বোচ্চ সাতদিন। এভাবে মৌসুমে প্রতিদিন এ বাগান থেকে ৩০ থেকে ৩৫ মেট্রিকটন শুকনো রাবার উৎপাদন করা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে রামু রাবার বাগানে উপ-ব্যবস্থাপক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নামমাত্র আমদানি শুল্ক বসানোর কারণে আমদানিকারকেরা বিদেশ থেকে চাহিদার তুলনায় বেশী রাবার আমদানী করছে। ফলে দেশীয় রাবারের চাহিদা কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে কৃষিপণ্য হলেও শুকনো রাবার বেচার সময় সরকার ১৫ পার্সেন্ট ভ্যাট ও ৪ পার্সেন্ট আয়কর পরিশোধ বাধ্যতামূলক করেছে। সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত বর্তমানে রাবার শিল্পের উন্নয়নে প্রধান অন্তরায় হিসাবে দাঁড়িয়েছে। তাই ১৯৬০ সাল থেকে টিকে থাকা এশিল্পকে বাঁচাতে আমদানি শুল্ক বাড়ানো এবং রাবারের উপর ভ্যাট ও আয়কর প্রত্যাহার করার দাবি জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: