ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় চুরির অপবাদে আবারও শিশু হত্যা

5e83909e53deca1a11c22e8cd75275e8চকরিয়া নিউজ ডেস্ক ::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় চুরির অপবাদ দিয়ে মুদির দোকানের কর্মচারী এক শিশুকে ব্যাপক মারধর ও অণ্ডকোষ চেপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।  শুক্রবার সকাল আটটার দিকে বরইতলীর ইউনিয়নের শান্তিবাজারস্থ মাস্টার আবদুস সালামের মুদির দোকান সালাম স্টোরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন দোকান মালিক ও তার ছেলে। নিহত শিশুর নাম রিয়াজ উদ্দিন। সে উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের শান্তিবাজার এলাকার নুরুল কবিরের পুত্র। গতরাতে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত থানায় শিশু রিয়াজ উদ্দিন খুনের ঘটনায় মামলা হয়নি। আটক করা হয়নি খুনে জড়িত সন্দেহভাজন কাউকে। এদিকে শিশু রিয়াজ উদ্দিনকে খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে এলাকার লোকজন। তারা দফায় দফায় বিক্ষোভ করেছে শান্তিবাজার এলাকায়।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি নৃশংসভাবে খুন করা হয় উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটস্থ জম জম নামের একটি রেঁস্তোরার কর্মচারী শিশু জয়নাল আবেদীন বাবুকে। খুন করার পর ওই শিশুর লাশ গুম করতে রেঁস্তোরার কাছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর লুকিয়ে রাখা হয়। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের মারফত ওই শিশুর মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর পরিবারের কাছ থেকে পেয়ে পুলিশ জঙ্গল থেকে শিশু জয়নালের লাশ ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে। এ ঘটনায় থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। মাত্র তিন হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদ করায় হোটেল মালিক ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা মিলে শিশু জয়নালকে খুন করে বলে পরিবারের অভিযোগ। এই শিশু হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই ১০ দিনের মাথায় বরইতলী ইউনিয়নে চুরির অপবাদে খুন হলো শিশু রিয়াজ উদ্দিন।

গতকাল শুক্রবার সকালে খুন হওয়া শিশু রিয়াজ উদ্দিনের বাবা নুরুল কবির অভিযোগ করেছেন, তার পুত্র রিয়াজ চারবছর ধরে ওই দোকানে মাসিক আড়াই হাজার টাকার বেতনে চাকুরি করে আসছিল। এই সময়ের মধ্যে প্রতিনিয়ত রিয়াজকে নানা বিষয়ে মারধর করতো। গত তিনদিন আগেও মালিকের ছেলে হাসান মুরাদ শারিরীকভাবে নির্যাতন চালায়। শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে দোকান খোলার পর মালিকের ছেলে দোকানে এসে নানা অজুহাতে তাকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে অণ্ডকোষ চেপে ধরলে রিয়াজ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এই অবস্থায় দোকান মালিক আবদুস সালাম কর্মচারী রিয়াজকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে পৌরশহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রিয়াজের মা নুর আয়েশা ও বোন সাজেদা বেগম বলেন, ‘রিয়াজকে দোকান মালিকের ছেলে শারীরিক নির্যাতন করে আসছিল। শুক্রবার সকালেও রিয়াজকে মারধর করার সময় সিএনজি অটোরিক্সা চালক স্থানীয় বেলাল উদ্দিন ঘটনার সময় এগিয়ে গেলে দোকান থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয় মালিকের ছেলে হাসান মুরাদ।’

তবে দোকান মালিক আবদুস সালাম দাবি করেছেন, কর্মচারী রিয়াজকে তারা কোন মারধর করেননি। ওই শিশু বিষ খেয়েই আত্মহত্যা করেছে। ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়ার ভয়ে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেলে দোকান মালিক আবদুস সালাম ও তার ছেলে হাসান মুরাদ।

হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) দেবাশীষ সরকার জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে অভিযোগ পাওয়ার পর লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ সময় তার শরীরে আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে।

চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুল আজম বলেন, ‘এখনো পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে মামলা রুজু করা হবে।’

বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জিয়া বলেন, ‘শিশু কর্মচারী রিয়াজকে যদি পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় তাহলে দোষীদের অবশ্যই শাস্তির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে পুলিশ। এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। তবে এনিয়ে যাতে কেউ আইন হাতে তুলে না নেয় সেজন্য আমি সকলকে অনুরোধ করেছি। ক্ষোভে ফেটে পড়া লোকজনকে আশ্বস্ত করার পর তারা শান্ত রয়েছে।’

পাঠকের মতামত: