ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় গ্যাস লাইন স্থাপনের সময় ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের ক্ষতিপুরনের দাবীতে বিক্ষোভ

ররািনাজিম উদ্দিন, পেকুয়া ::

পেকুয়ায় স্থাপন করা হচ্ছে গ্যাস সঞ্চালন লাইন। গ্যাসের জাতীয় মজুদ সম্ভার রাখতে সরকার দীর্ঘ পরিকল্পনার আওতায় বর্হিবিশ্ব থেকে গ্যাস আমদানি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্যাসের জাতীয় চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এসব গ্যাস নৌপথে পরিবহনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন। এদিকে জাতীয় গ্রীডে আমদানিকৃত গ্যাস সঞ্চলনের জন্য পেকুয়া উপজেলার উপকুলবর্তী উজানটিয়া ইউনিয়নে গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ আরম্ভ করা হয়েছে। তবে অধিগ্রহনকৃত ভুমির মুল্য পাননি মালিকরা।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের প্রজ্ঞাপন ও অধিগ্রহনের নোটিশ বা নির্দেশনা না দিয়ে গ্যাস লাইন সঞ্চালন চলমান কাজ নিয়ে বিরোধীতার সম্মুখীন হচ্ছেন কাজ বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে গ্যাস সঞ্চালন লাইন উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করিয়ারদিয়ার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। এতে করে ওই দ্বীপের হাজার হাজার একর জমিতে লবন উৎপাদন ব্যহত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপনের জন্য জমি গর্ত করে কুপ খনন করা হচ্ছে। খননকৃত ওই কুপে বসানো হবে সুপ্রশস্থ পাইপ।

জানাগেছে গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপনের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় এর অধিন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বিপিসির অধিনস্থ সংস্থা জিটিসিএল ওই কাজ বাস্তবায়ন ও তদারকি করছে। জানা গেছে ওই প্রকল্পের জন্য ৯৮২কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত প্রায় ৯২কি.মিটার গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হবে। প্রতিদিন ৫শ মিলিয়ন ঘনফুট তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ওই লাইন দিয়ে সরবরাহ করা হবে। আগামি দু’মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন কাজ সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। কাজ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে জমি অধিগ্রহনের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

জানাগেছে করিয়ারদিয়ায় গ্যাস লাইন স্থাপন কাজ শুরু হয়েছে গত ১২জানুয়ারী থেকে। স্থানীয় ভুমির মালিকরা জানিয়েছেন তারা জমি অধিগ্রহনের ওই আদেশটি এখনো তারা পাননি। এমনকি ক্ষতিপুরনও এখনো তাদের অনুকুলে দেওয়া হয়নি। অপরদিকে করিয়ারদিয়ার শতশত লবন চাষিরা গ্যাস লাইন স্থাপন নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে বনিবনা চলছে। তারা কোন ধরনের ক্ষতিপুরন ছাড়া গ্যাস লাইন স্থাপন কাজ বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার কাজ বন্ধের দাবিতে দ্বীপ এলাকায় শতশত লবন চাষি বিক্ষোভ করেছেন। ফকিরাঘোনা, নাপিতারঘোনা, হেদাইত্যাঘোনা, বিছাখালী, কুমবাইশাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় চার শতাধিক লবন চাষি চলমান কাজ বন্ধ করতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। এ সময় উত্তেজিত লবন চাষিদের বিক্ষোভ থামাতে জিটিসিএল এর প্রজেক্ট ম্যানেজার সৌমেন ঘোষসহ বেশ কিছু কর্মকর্তা তৎপর হন। তারা আশস্থ করেছেন চাষিদের ক্ষতিপুরন না পাওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখা হবে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে করিয়ারদিয়া সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়। এ সময় কাজ বন্ধ রাখার দাবিতে চাষিরা পুরানঘোনা এলাকায় জড়ো হতে দেখা গেছে। কাদের হোসেন, দিদার, মোস্তাক, নেজাম, একলাস, নুর হোসেন, নজরুলসহ আরো একাধিক লবন চাষি অভিযোগ করেছেন তারা জমিদারের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে লবন উৎপাদন করছেন। তাদের প্রতি কানিতে ৩৫-৪০হাজার টাকা মুলধন দিয়েছেন। গ্যাস লাইন হচ্ছে লবন মাঠ চিরে। এতে মাঠকে বিভক্ত করা হয়েছে। যাতে কোন ধরনের লবন উৎপাদন সম্ভব নয়। এতে তাদের প্রায় তিনশত কানি লবন মাঠে লবন উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে।

অপরদিকে কাজের জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে বাধ তৈরি করতে হবে। ফলে খাল ও পানি চলাচলের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করিয়ারদিয়ার প্রায় ১২শ কানি মাঠে লবন উৎপাদন একেবারে ব্যহত হবে। চাষিরা দাবি করেছেন লবন উৎপাদন মৌসুম বন্ধ হওয়া ছাড়া ওই কাজ বাস্তবায়ন করা কখনো সম্ভব হবেনা।

করিয়ারদিয়ার লোকজন জানিয়েছেন তারা কোন ধরনের নিয়মনীতি না মেনে ওই কাজ গায়ের জোরে বাস্তবায়ন করছে। আমরা লবন চাষের পাশাপাশি বিপুল এলাকায় মৎস্য চাষের জন্য চিংড়ির আবাদ করছি এখানে। এসব না মানা হলে এগুলো সমুলে বিনষ্ট হবে। কোটি টাকার লবন ও মৎস্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বেকার হবে অসংখ্য দরিদ্র লবন চাষি। এদিকে গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপন নিয়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করিয়ারদিয়ার জনগন ফুঁসে উঠছে। ক্ষতিপুরন না পাওয়ায় তারা চরম ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়েছেন। এনিয়ে কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘাত আশংকা করছেন সচেতন মহল।

উজানটিয়া ইউপির চেয়ারম্যান এম.শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন এত বড় একটি প্রকল্প হচ্ছে ভুমি অধিগ্রহন ও ক্ষতিপুরনের বিষয়টি আমিও ওয়াকিবহাল নয়। আমার পরিষদে এ সংক্রান্ত কোন ধরনের চিঠি কিংবা নোটিশ আসেনি। বৃহত জনগোষ্টির উপর যেসব কাজ বাস্তবায়ন হয় সেসবে লোকজনকে জানানোর জন্য পুর্ব থেকে সংকেত দেয়া হয়। কিন্তু এগুলো এখানে হয়নি।

#################

পেকুয়ায় হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

পেকুয়া প্রতিনিধি ::

পেকুয়ায় হত্যা মামলার এক পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পেকুয়া থানার এএসআই মনিতোষ অভিযান চালিয়ে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাবেকগুলদি চৌমুহনী ষ্টেশন থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম আব্দুল মালেক (৪০)। তিনি সদরের সরকারি ঘোনা এলাকার মৃত.রশিদ আহমদের ছেলে বলে জানা গেছে। পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ আশরাফুজ্জামান জানিয়েছেন গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে। আগামিকাল তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

পাঠকের মতামত: