ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পেকুয়ায় ফুটবল খেলায় সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় থানায় মামলা রেকর্ড, আটক-২

atok,নাজিম উদ্দিন, পেকুয়া:

পেকুয়ায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। গত রবিবার বিকেলে পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের সওদাগর হাটের আধাকিলোমিটার পশ্চিমে বেড়িবাঁধে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম আলী আজগর প্রকাশ মিয়া(৩৫)। তিনি ওই ইউনিয়নের বারাইয়াকাটা এলাকার মৃত আক্তার আহমদের পুত্র। পেকুয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মর্গে প্রেরন করে। পুলিশ পৃথক স্থান থেকে তিনজনকে আটক করে। এদের একজনকে প্রায় তিন ঘন্টা থানা হাজতে আটকিয়ে রাখে। পরে তাকে ছেড়ে দেয়। আটককৃতরা হলেন বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী এলাকার মৃত আলী আহমদের ছেলে জাকের হোসেন ও একই এলাকার জসিম উদ্দিন, ইসমাইলের পুত্র আয়ুব আলী। আয়ুব আলীকে সোমবার দুপুরে থানা হাজত থেকে ছেড়ে দেন পুলিশ। অপর আটককৃতদের আদালতে সোপর্দ করে। এদের মধ্যে আটককৃত জাকের হোসেন ক্ষমতাসীনদল আ’লীগের পেকুয়া উপজেলা শাখার স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক বলে নিশ্চিত করেছেন দলটির পেকুয়ার সাধারন সম্পাদক আবুল কাসেম। এ ছাড়া তিনি একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। উপসহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে সরকারী চাকুরীজীবি তিনি। বারবাকিয়া বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতিও তিনি। ঘটনার জের ধরে পেকুয়ায় টান টান উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আ’লীগ নেতাকে ওই ঘটনায় জড়িত করায় বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ছে রাজনৈতিক দল আ’লীগে। তার গ্রেফতারের ঘটনায় তাৎক্ষনিক ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় ক্ষমতাসীন দল। জাকের হোসেনের গ্রেফতারের এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আ’লীগে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। তারা এ ঘটনায় বিস্মিত ও মর্মাহতভাব পোষন করেছে। জানা গেছে, গত রবিবার বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে বিকেলে ফুটবল ম্যাচ চলছিল। এ সময় দু’দলের দর্শকদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ফুটবল খেলা পন্ড হয়। বারবাকিয়া ইউনিয়নের বারাইয়াকাটা ও পাহাড়িয়াখালী এলাকাবাসীদের মাঝে ফুটবল ম্যাচ চলছিল। এর কিছুক্ষন পর আজগর আলী বারইয়াকাটা থেকে তৈল আনতে বারবাকিয়া যাচ্ছিলেন। বাজারের পশ্চিম পাশের্^ পাহাড়িয়াখালীর উত্তেজিত খেলোয়াড় ও সমর্থকরা তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে। এ সময় তাকে উদ্ধার করে রাতে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। সোমবার ওই ঘটনায় পেকুয়া থানায় একটি হত্যা মামলা রেকর্ড হয়। যার নং -১/১৭। নিহতের বড় ভাই আলী আহমদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করে। মামলায় ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০/১৫ জনকে আসামী করা হয়। এ দিকে অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের টাকা নিয়ে আ’লীগ নেতা ও সরকারী কর্মচারী জাকের হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। মামলায় তাকে ৫ নং আসামী করা হয়। মামলায় বলা হয়েছে তিনি ঘটনার ইন্ধনদাতা। তবে এ বিষয়ে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। মামলার বাদী আলী আহমদ থানা কম্পাউন্ডে লোকজনের উপস্থিতিতে স্পষ্ট বলেছেন আমার ভাইয়ের হত্যাকান্ডের সাথে জাকের হোসেন জড়িত নন। তার ব্যাপারে আমার কোন অভিযোগ নেই। জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, খুব ভোরে পুলিশ আমাকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে এজাহারে স্বাক্ষর নেয়। আমি পড়ালেখা জানি না। পরে জেনেছি আমার মামলায় তাকেও জড়ানো হয়েছে। জাকের হোসেনের ছেলে শাখাওয়াত হোসেন জানায়, আমার পিতা একজন নির্দোষ ব্যক্তি। খেলায় তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। পিতা দোকানে ব্যবসা করছিলেন। রাত ১১ টার দিকে ওসি স্যার ডাকার কথা বলে এস, আই শিমুল বড়–য়া বাড়ি থেকে তাকে থানায় নিয়ে আসেন। বাবার সাথে বিএনপির একটি শক্তিশালী চক্রের বিরোধ রয়েছে। তারা মোটা অংকের টাকা দিয়ে পুলিশ ম্যানেজ করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়েছে। জাকের হোসেনের স্ত্রী হামিদা বেগম জানায়, আমার স্বামীর প্রতি পুলিশের বর্বর আচরন। একজন নির্দোষ মানুষকে পুলিশ টাকা নিয়ে হত্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়। জেলে পাঠানো হয়েছে বিএনপির একজন ডোনারের টাকায়। আমরা মনে করি একজন রাজনীতিবিদ ও সরকারী কর্মচারীর প্রতি আইনের বৈরী আচরন। আমরা এ ঘটনায় বিস্মিত ও মর্মাহত হয়েছি। এটি চরম হয়রানি। পেকুয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান জানান, বাদী এজাহার দেওয়ার প্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে কেউ নিরীহ হয়ে থাকলে পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।

পাঠকের মতামত: