ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মহেশখালীতে সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে বসতি নির্মাণ: পাহাড় ঢালুতে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে বসবাস ৪ শতাধিক পরিবারের

paharaaমহেশখালী প্রতিনিধি :::

মহেশখালী উপজেলার বন বিভাগের মালিকানাধীন প্রায় ১০ হাজার একর সরকারি সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমি স্থানীয় লোকজন অবৈধ ভাবে দখল করে তাতে বসত বাড়ি নির্মাণ, ধান পান চাষ করে আসছে। চলতি বর্ষা নামার সাথে সাথে পাহাড় কেটে এসব বনভূমিতে বসতি ও পানের বরজ স্থাপন এবং চাষাবাদের জন্য জমি তৈরি করলেও তা উচ্ছেদের ব্যাপারে বনবিভাগের তেমন কোন ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে পাহাড় কেটে প্রতিনিয়ত বনভুমি বেদখল হয়ে যাওয়ায় পরিবেশের মারাত্মক তি হলেও তা দেখার যেন কেউ নেই। অপর দিকে পাহাড়ের ঢালুতে মৃত্যু ঝুকি নিয়ে বসবাস করছে অন্তত ৪ শতাধিক পরিবার। অবৈধ ভাবে পাহাড়ে বসবাসকারীরা আবার সরকারি সংরক্ষিত বাগানের গাছ কেটে স্থানীয় অবৈধ করাত কলে বিক্রি করে আসছে।

গত ৪ জুলাই উপজেলার মোহরা কাটায় পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি চাপা পড়ে মোঃ মোনার আলম নামে ১ জনের প্রাণহানি হয়। প্রতি বছর এসব এলাকায় পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় বেশ কিছু প্রাণহানির ঘটনা ঘটে আসলেও স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে বর্ষার আগে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭০ সালের পর থেকে স্থানীয় লোকজন সংরক্ষিত পাহাড় কেটে অবৈধভাবে বনভূমি দখল করে তাতে বসতবাড়ি নির্মাণ,ধান চাষ ও পানের বরজ স্থাপন করে আসছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভূমিহীন, হতদরিদ্র ছিন্নমূল লোকজন এসে সংরক্ষিত বনভুমি অবৈধ ভাবে দখল করে বসবাস করে আসলেও তাদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়ে উপকুলীয় মাতার বাড়ি,ধলঘাট ও কুতুবদিয়ার লোকজন এ পাহাড়ে বসতি স্থাপন করে আশ্রয় নেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার কালামার ছড়া, হোয়ানক, বড় মহেশখালী,ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর এলাকায় স্থানীয় লোকজন পাহাড়ের ঢালুতে সংরক্ষিত বনভূমিতে বসতিস্থাপন করে বসবাস করছে। সরকারি নিয়মানুসারে বনবিভাগের জায়গায় কোন প্রকার পাকা দালান কোঠা স্থাপন করা নিষিদ্ধ থাকলেও হোয়ানকের পানির ছড়া ও বড়ছড়া এলাকার সরাসরি বনবিভাগের আওতাধীন জায়গায় পাকা বাড়ি নির্মাণ করতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান, বনাবভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের আর্থিক ভাবে বশে নিয়ে অবৈধ ভাবে এসব জায়গায় পাকা দালান নির্মাণ করছে।

বন বিভাগের লোকজন তাদেরকে উচ্ছেদের জন্য চেষ্টা করলেও তা লোক দেখানো কান্ড বলে মনে হয়। বন বিভাগের জায়গায় এসব পাকা বাড়ী এখনো বিদ্যমান। অপর দিকে উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের রাজুয়ার ঘোনা,বড়ছড়া,কেরুনতলী ও হরিয়ার ছড়ায় এবং কালারমার ছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলার পূর্বপাশে সরকারি পাহাড় কেটে অবৈধ ভাবে বসতি স্থাপন করছে স্থানীয় লোকজন। আবার অনেকেই পানের বরজ স্থাপনের জন্য জমি তৈরি করতে বর্ষার শুরু থেকেই পাহাড় কাটছে। এসব পাহাড় কাটা বালি ও পলি বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে এসে পাহাড়ি ছরা গুলো ভরাট হয়ে যায়। ফলে পানি চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়ার কারণে রাস্তা ঘাট ভাংছে প্রতি বর্ষা মৌসুমে।

হোয়ানকের রাজুয়ার ঘোনা এলাকার বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় লোকজন বসতি ও পানের বরজ স্থাপনের জন্য রাতের আধাঁরে পাহাড় কেটে বনভূমি দখল করছে। এ ব্যাপারে বনবিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার লোকজন জীবনের ঝুঁিক নিয়ে সংরক্ষিত বনভূমিতে অবৈধ ভাবে বসবাস করে আসছে। কিন্তু এদেরকে পাহাড়ি বনভূমি থেকে একেবারে উচ্ছেদ করতে গেলে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। মহেশখালী বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কালারমার ছড়া, হোয়ানক, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর এলাকায় বন বিভাগের ১৮ হাজার ২শ ৮৬ একর সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০হাজার একরের মত সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমি কোন না কোন ভাবে স্থানীয় জনগণের অবৈধ দখলে।

এসব জায়গাতে তারা দীর্ঘ দিন ধরে পান বরজ, গাছ বাগান,ধান চাষ ও কিছু কিছু সমতল এলাকায় ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু জায়গা বন বিভাগ সামাজিক বনায়নের আওতায় নিয়ে এসে তাতে বাগান তৈরি করা করেছে। এছাড়া অবৈধ দখল হওয়া বনভূমির উপর প্রায় ৩৫ হাজার লোকজন বসতবাড়ি তৈরি করে ঝুঁিক নিয়ে বসবাস করছে। পাহাড় কাটা বন্ধ করার জন্য বনকর্মীরা চেষ্টা করছে।

 

পাঠকের মতামত: