ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

দর্শনীয় স্থানগুলো ফাঁকা বান্দরবান

বান্দরবান  প্রতিনিধি :: Bandarban-Tourist-Spot-PiC_02

পর্যটক নেই বান্দরবানে। দর্শনীয় স্থানগুলোও পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেনি এবার। প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা যায়। নীলাচল, মেঘলা, শৈলপ্রপাত দর্শনীয় স্থানগুলোতে ট্যুরিস্ট গাড়ির লম্বা জ্যাম তৈরি হয়। ঈদের আগের দিন থেকে টানা ছয়-সাতদিন পর্যটকে মুখরিত থাকত পাহাড়ি এ জনপদ। আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট এবং ট্যুরিস্ট গাড়িগুলোও খালি পাওয়া যেতনা।

কিন্তু এবারের ঈদের চিত্র পুরোপুরি উল্টো। কোনো চাপ নেই পর্যটকের। অনেকটাই ফাঁকা বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলো। আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউজ এবং ট্যুরিস্ট গাড়িগুলোর কর্মচারীদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। এমন চিত্র বদলায়নি বুধবার ঈদের তৃতীয়দিনেও। তবে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীলগিরি পর্যটন স্পটগুলোতে স্থানীয় দর্শনার্থীদের ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাজালিয়া এবং দোহাজারি থেকেও বেড়াতে এসেছে ভ্রমণপিপাসুরা। যে কারণে কিছুটা সরব দেখা গেছে দর্শনীয় স্থানগুলো। আর স্পটগুলোর দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও কিছুটা নড়াচড়া দেখা যায়।

হোটেল গ্রীনল্যান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুনুর রশীদ বলেন, রমজান মাসের আগ থেকেই মন্দা চলছিল পর্যটন ব্যবসা। ঈদে জমে উঠবে পর্যটন ব্যবসা, আশায় বুক বেঁধেছিল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তেমনটি ঘটেনি। বাড়তি চাপতো দূরে থাক, পর্যটকের স্বাভাবিক চাপটাও ছিল না এবারের ঈদে। বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের ধাক্কাটা লেগেছে পর্যটন ব্যবসায়। অথচ পরিস্থিতি খুবই স্বাভাবিক রয়েছে এখানে।

পালকি গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাফায়েত হোসেন ও হোটেল ফোর স্টারের পরিচালক রিপন চৌধুরী বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তাজনিত কোনো ধরনের সমস্যা নেই এখান। প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরাও পর্যটকদের বরণ করতে সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু পর্যটকের আশানুরূপ আগমন ঘটেনি। টানা তিন মাসের এ ক্ষতি পর্যটন ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই পুষিয়ে নিতে পারবে না।

এদিকে পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে ছুটে আসে দেশি-বিদেশী পর্যটকেরা। পাহাড় থেকে ঝড়ে পড়া ঝর্ণা, প্রাকৃতিক লেক, ঝুলন্ত সেতু, বাদুর গুহা, দেবতা পাহাড়, আলীর সুরঙ্গতপথ এবং সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ’সহ অসংখ্য পাহাড়। কি নেই এখানে। পর্যটকের মন ভোলানোর সমস্ত আয়োজন রয়েছে রূপের রানী খ্যাত বান্দরবানে। বিগত পাঁচ-দশ বছরে পাহাড়ের অন্যতম অর্থনৈতিক আয়ের খাতে পরিণত হয়েছে এ পর্যটন শিল্প। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়েরাও।

স্থানীয় পাহাড়ি ব্যবসায়ী মেনলং বম জানান, স্থানীয় পাহাড়িদের তৈরি কোমর তাঁতের পোশাক (কাপড়) এবং বাঁশ, কাঠের তৈরির হস্তশিল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্রের ক্রেতা হচ্ছে পর্যটকেরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং বিদেশ থেকে আসা পর্যটকেরাই এসব জিনিসপত্র আত্মীয়-স্বজনদের গিফট দেওয়ার জন্য এবং ঘরের শোপিজ হিসেবে ব্যবহারের জন্য কিনে যায়। কিন্তু পর্যটক না থাকায় বেচা বিক্রি একদম কমেগেছে। কোমড় তাঁত ও হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িত পাহাড়িরাও আর্থিক সংকটে ভুগছেন।

ট্যুরিস্ট জিপ গাড়ি শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল বলেন, পর্যটকবাহী প্রায় তিনশ থেকে চারশ গাড়ি রয়েছে বান্দরবানে। গাড়িগুলো কয়েক শ্রমিক ঈদে দুটি পয়সা বাড়তি রোজগারের আশা করেছিলেন। কিন্তু পর্যটকরা বেড়াতে না আসায় শ্রমিকরা ভীষণ কষ্টে পড়েছেন।

এদিকে পর্যটকদের জন্য জেলা সদরের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে গড়ে তোলা হয়েছে লেকের উপর আকর্ষণীয় দুটি ঝুলন্ত সেতু, মিনি সাফারি পার্ক ও চিড়িয়াখানাও। লেকে স্পিড বুট এবং প্যাডেল বুটে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রের টাওয়ারে উঠে পাহাড়ের সমুদ্র দেখার মজায় আলাদা। পাহাড়ের সাথে আকাশ মিতালী গড়েছে নীলাচলে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও এখানে বেড়াতে এসে হারিয়ে যায় স্বপ্নের দেশে। বাংলার দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক পাহাড় এবং সেনা নিয়ন্ত্রিত স্বপ্নীল নীলগিরি পর্যটন স্পটের সৌন্দর্য রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। অসংখ্য পাহাড়ের মাঝখানে নির্মিত নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র যেন মেঘে ভাসছে। মুহূর্তে মেঘ এসে এখানে ছুঁয়ে যায় কটেজগুলো। জেলা শহর থেকে ৪৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নীলগিরি। আর বাংলার দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক পাহাড়ের সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারণ। এখানেও মুহূর্তে মেঘ এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাবে আপনাকে। শহরের অদূরে অবস্থিত শৈলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানিতে গা ভাসাতে পারেন আপনিও। পাথরের ফাঁকে ফাঁকে ঝর্ণার স্বচ্ছ পানি বয়ে চলেছে অবিরাম ধারায়। পাশে বসেই পাহাড়ি রমণীরা কোমর তাঁতে তৈরি কাপড় বিক্রি করছে। জেলা সদরের বালাঘাটায় নির্মিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান নামে পরিচিত বৌদ্ধ ধাতু স্বর্ণ জাদি জেলায় পর্যটনের ক্ষেত্রে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এছাড়াও রুমা উপজেলায় অবস্থিত রিজুক ঝর্ণা, রহস্যময় কিংবদন্তি বগা লেক, সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ক্যাওক্রাডং ও তাজিংডং বিজয় এবং থানচি উপজেলার দর্শনীয় স্থান নাফাকুম ঝর্ণা, রাজা পাথর, অমিয়কুম, রেমাক্রী খাল, জীবননগর ট্যুরিস্ট স্পট-সহ দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠার অপেক্ষায়। এছাড়াও পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা সাঙ্গু নদী পথে নৌকা ভ্রমণ দারুণ রোমাঞ্চকর। আর বান্দরবানের পাহাড়ে বসবাসরত মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমি, খেয়াং, পাঙ্খো, চাকমা, চাক এবং লুসাইসহ ১৩টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসবাসের বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্র পর্যটকদের কাছে বাড়তি পাওয়া।

জেলা প্রশাসনের এনডিসি এইচএম আল মুজাহিদ বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তাগত কোনো সমস্যায় নেই বান্দরবানে। এখানের পরিস্থিতি খুবই স্বাভাবিক এবং পর্যটক ভ্রমণ বান্ধব। পর্যটকরাও বেড়াতে আসছে এখানে। তবে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কিছুটা প্রভাব পড়েছে বান্দরবানের পর্যটন ব্যবসায়ও। আতঙ্কে আশানুরূপ পর্যটকের আগমন ঘটেনি এবারের ঈদে।

তিনি আরো বলেন, বর্ষায় পাহাড়ের প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। বাংলার দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক এবং জীবননগর পর্যটন স্পট দুটি সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। বর্ষায় এখানে অনায়াসে মেঘ ছুঁয়ে দেখা যায়। ভ্রমণ পিপাসুরা নিরাপদে ঘুরে বেড়াতে পারেন দর্শনীয় স্থানগুলো।

পাঠকের মতামত: