ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ইটভাটার দূষিত ধোঁয়া হবে মূল্যবান এসিড!

তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার :::

ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়াও দূষণমুক্ত করা যাবে সহজে। এমনকি এসব ধোঁয়া বিক্রিও করা হবে। ধোঁয়া প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে উত্পন্ন হবে মূল্যবান এসিড। এই এসিড বিক্রি হবে। শুধু তাই নয়, ইটভাটা নির্গত বিন্দুমাত্র ধোঁয়াও বাতাসে ছড়াবে না। -এমনটা দাবি করেছে কক্সবাজারের হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী।

চারদিকে নানা স্থাপনা হচ্ছে, দালান ওঠছে, গড়ে ওঠছে ইটের শহর। এসব উন্নয়নকাজ হচ্ছে ইটের ওপর নির্ভর করে। আর ইট তৈরি করতে গিয়ে পরিবেশের হচ্ছে মারাত্মক ক্ষতি। একদিকে উন্নয়ন অন্যদিকে পরিবেশের ক্ষতি। উন্নয়ন করতে গেলে পরিবেশের ক্ষতি হবে আর পরিবেশ রক্ষা করতে গেলে উন্নয়ন হবে না।

টেকনাফের হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী এই মহাসমস্যা থেকে উত্তরণের পথ আবিষ্কার করেছে বলে দাবি করেছেন বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুস সালাম। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির ছাত্র নুরুল আলম, নবম শ্রেণির ছাত্রী সৃষ্টি শর্মা ও কান্তা শর্মা দীর্ঘদিন ধরে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া কীভাবে বিশুদ্ধ করা যায়-এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করে।

এক পর্যায়ে তারা আবিষ্কার করে ‘ইটভাটা পরিবেশ দূষণরোধ ও এসিড সংরক্ষণ’ প্রকল্প। কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ৩৮তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ প্রকল্প প্রদর্শন মেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয় এই প্রকল্প।

‘উন্নত আগামীর জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ শিরোনামে মেলার উদ্বোধনী দিনে সবার নজর কাড়ে প্রকল্পটি। ওই স্টলে ভিড় করেন বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী।

প্রকল্প উপস্থাপনকারী নুরুল আমিন বলেছে, ‘ইটভাটা থেকে চার প্রকার বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়। এসব গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এগুলো মানব শরীরে প্রবেশ করলে স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। চার প্রকারের এই গ্যাস হলো সালফার ডাই অক্সাইড, সালফার ট্রাই অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড ও কার্বন ডাই অক্সাইড। এসব গ্যাস বাতাসে মিশতে না দিলে পরিবেশ সুরক্ষা হবে। ’

নুরুল আমিন জানায়, এসব গ্যাস বাতাসে যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য বিশেষ পাইপ দিয়ে গ্যাস ‘ধোঁয়া পৃথকীকরণ প্রকোষ্ঠে’ আনতে হবে। এই প্রকোষ্ঠ থেকে চার প্রকারের ধোঁয়া আলাদা হয়ে পানির পাত্রে চলে যাবে। আর পানির সাথে মিশে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে ইটভাটা থেকে নির্গত দূষিত ধোঁয়া চার প্রকারের মূল্যবান এসিডে পরিণত হবে। এসিডগুলো হচ্ছে সালফিউরাস এসিড, সালফিউরিক এসিড, কার্বানার্স এসিড ও কার্বনিক এসিড। এসব এসিডের চাহিদা ও বাজারমূল্য অনেক বেশি।

প্রকল্প উপস্থাপনকারী অপর দুই ছাত্রী কান্তা শর্মা ও সৃষ্টি শর্মা জানায়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইটভাটা থেকে প্রাপ্ত বিষাক্ত ধোঁয়া প্রক্রিয়াজাত করে পরিবেশ সংরক্ষণ, আর উত্পন্ন হওয়া মূল্যবান এসিড বাজারজাত করার ধারণা দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প ইটভাটায় বাস্তবায়ন করা হলে পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। লাভবান হবেন মালিক আর সুস্থ থাকবে মানবসমাজ।

‘ইটভাটা পরিবেশ দূষণ রোধ ও এসিড সংরক্ষণ’ প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে ইটভাটায় বাস্তবায়ন হলে এবারের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের সার্থকতা হবে বলে মনে করেন দর্শনার্থীরা।

এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজারের ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনা করা হবে।

দেশ ও মানব কল্যাণের জন্য আবিষ্কৃত প্রকল্প বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে তা গুরুত্ব দেওয়া হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা আরো ত্বরান্বিত হবে। ’ সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতাকালে তিনি একথা বলেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজারের ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা এই মেলায় তাদের আবিষ্কার প্রদর্শনের মাধ্যমে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা দেখিয়ে দিয়েছে, সমুদ্র হতে তেল আহরণ, জ্বালানিবিহীন বিদ্যুৎ উৎপাদন, অগ্নিনিরোধক বাড়ি, লবণ পানি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, নিরাপদ রেল ক্রসিং, যানজটমুক্ত সড়ক, সোলার পাওয়ার ব্যাংক, সমুদ্র বাঁচাতে বিজ্ঞান, দ্য গ্রিন কুলার, পরিকল্পিত ইটভাটা হতে নির্গত কালো ধোঁয়াকে প্রক্রিয়াজাতকরণ করে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং মূল্যবান এসিড উত্পন্ন করে বাজারজাতকরণ প্রকল্পসহ ১১৪টি মানবকল্যাণ ও উন্নয়ন প্রকল্প। ’ কালের কন্ঠ

পাঠকের মতামত: