ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় সামাজিক বনায়নের ৮০ হেক্টর বনায়নের গাছ পানির দরে নিলাম!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::cat

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় সামাজিক বনায়নের ৮০ হেক্টর বনায়নের লট (গাছ) পানির দরে নিলাম দেওয়া হয়েছে বলে বনায়ন সংশ্লিষ্ট উপকারভোগী ও এলাকাবীদের সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক বনানের গাছ নিলাম নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্টান বনের প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট গর্জন, শাল ও সেগুন গাছও কেটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতাও পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বন বিভাগ রহস্যজনকভাবে নিরব রয়েছে। তবে স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নিলামকারীদের ২০০৬ সালে সৃজিত সামাজিক বনায়নের গাছ নিলামে দেওয়া হয়েছে। বনায়নে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অন্যকোন গাছ নিলামে দেওয়া হয়নি। সরেজমিনে তদন্ত করে এর সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই নিলামকারীদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করা হবে।
সরেজমিনে এলাকায় পরিদর্শন ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অধিন পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া বন রেঞ্জের টইটং বনবিটের আওতায় বিগত ২০০৬ সালে ৮০ জন উপকারভোগী নির্বাচন করে প্রতি জনকে ১ হেক্টর করে সামাজিক বনায়ন সৃষ্টি করে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর বরাদ্দকৃত প্লটে02 বন বিভাগ অস্টোলিয়া ও আকাশি গাছও সৃজন করে। বন বিভাগ উপকারভোগীদেরকে ১০ বছরের জন্য প্লট বরাদ্দ দিয়েছিল। প্লটের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। এরপর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ ওই ৮০ জন উপকারভোগীদের বনায়নের গাছ কেটে বিক্রির জন্য নিলাম বিজ্ঞপ্তি আহবান করে। পরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ থেকে নিলামের মাধ্যমে ৮০ হেক্টর বনায়নের গাছ পানির দরে অর্থাৎ ১কোটি ৩৭লাখ টাকায় নিলামে কিনে নেন ৩ ব্যক্তি।

নিলাম প্রাপ্তরা হচ্ছেন, মেসার্স রহমান ট্রেডার্স। এ প্রতিষ্টানের মালিক টইটং বড় পাড়া গ্রামের আবদুর রহমান টিপু। তিনি অবশ্য ওই বনায়নের উপকারভোগীদের নিয়ে গঠিত সমিতির সভাপতিও। বন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে তাকে নিলাম পাইয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও নিলাম পেয়েছেন পার্বত্য লামা উপজেলার ফাইতং এলাকার শামশুল আলম ও টইটংয়ের কাটা পাহাড় এলাকার নবী হোছাইন। ১৮ মে পর্যন্ত নিলামকারীরা ৮০ হেক্টর বনায়নের প্রায় অর্ধেক বনায়নের গাছ কেটে ফেলেছে। পরে এসব গাছ সাইজ করে লট আকারে এবিসি মহাসড়কের টইটং পরিষদের দক্ষিণ পার্শ্বে ও সড়কের পাশে একটি কওমী মাদ্রাসার পাশে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। আর সেখান থেকে বন বিভাগ থেকে টিবি নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার গাছ ব্যবসায়ীদের কাছে ট্রাক ও পিকআপ ভর্তি করে গাছ বিক্রি করা হচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ ও স্থানীয় বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে উপকারভোগী সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান টিপুসহ আরো কয়েকজন নিলামের পূর্বে গাছ পরিমাপের সময় ব্যাপক কারসাজির আশ্রয় নেয়। নিলামকৃত বনায়নের গাছের সঠিক পরিমাপ না করে মেঝরম্যানের সময় প্রকৃত গাছের সংখ্যার চেয়ে খুব কম গাছের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও বনায়নের গুটিকয়েক উপকারভোগীদের যোগসাজশে পানির দরে ওই তিন ব্যক্তি নিলাম হাতিয়ে নেওয়ায় সরকার প্রায় দেড় কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

টইটংয়ের পাহাড়ে বিগত ২০১৬ সালে বন বিভাগ কর্তৃক সৃজিত ওই বনায়নের কয়েকজন উপকারভোগীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের বনায়নে গাছ ছিল প্রায় ৫৭% আর বন বিভাগের পরিমামে দেখানো হয়েছে ১৭%। হিসাবের গরমিল দেখিয়ে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে। উপকারভোগীরা আরো দাবী করেছেন, নিলামের পূর্বে সঠিকভাবে গাছ পরিমাপ করা হলে কমপক্ষে তিন কোটি টাকারও বেশি টাকায় তাদের বনায়ন নিলাম দেওয়া যেতো।  তাদের উপকারভোগী সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান টিপু, সহ সভাপতি মৌলনা আহমদ হোছাইন, উপকারভোগীর সদস্য ও বিএনপি নেতা জেএডএম মোসলেম উদ্দিন ও টইটং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীনসহ বন বিভাগের অসাধূ কিছু কর্মকর্তাদের কারসাজিতে গাছের সঠিক পরিমাপের হিসাব দেওয়া হয়নি। পানির দরেই নিলাম হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই তারা এ অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে বলে উপকারভোগীরা দাবী করেছেন। উপকারভোগীরা এ ঘটনায় বন বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবীসহ দুদকের হস্থক্ষেপও কামনা করেছেন।

১৮ মে টইটং ইউনিয়নের সামাজিক বনায়নের এলাকা পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিলামকারীদের ২০০৬ সালে সৃজিত আকাশমনি ও অস্টোলিয়া গাছ কাটার জন্য নিলাম দেওয়া হলেও তারা ইতিমধ্যেই পাহাড়ের বিপুল পরিমান গর্জন, শাল ও সেগুন গাছ কেটে নিয়েছে। কেটে নেওয়ার পর তারা এসব গাছ রাজাখালী মাদ্রাসার দক্ষিণ পার্শ্বের বশির কোম্পানির সমিলে ও ও বাঁশখালীর বিভিন্ন সমিলে মজুদ রেখেছে। যাহা বন বিভাগ কর্তৃক সরেজমিনে তদন্ত করলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে স্থানীয়রা দাবী করেছেন।

এ ব্যাপারে জানার জন্য বারবাকিয়া বন রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা উত্তম কুমার পালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিলাম দেওয়ার পূর্বে বনায়নের গাছ সঠিকভাবেই পরিমাপ করা হয়েছে। গর্জন, শাল ও সেগুন গাছ কাটার জন্য নিলাম দেওয়া হয়নি। যদি এরূপ কাছ কেটে নেওয়া হয় তাহলে নিলামকারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা পাওয়া গেলে রেহাই দেওয়া হবেনা। অবশ্যই বন আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।

এ ব্যাপারে ১৮ মে সন্ধ্যায় মুটোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল আলম চৌধুরীর সাথে। এসময় এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি খুব শিগগিরই বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন।

পাঠকের মতামত: