ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় জামায়াত, বিএনপি, আ’লীগ নেতা ও ভূমি অফিসের দালাল নিয়ে দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি!

comiনিজস্ব প্রতিনিধি, পেকুয়া

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় জামায়াত-শিবির, বিএনপি সমর্থক, আর্থিক প্রতিষ্টানের কর্মচারী, আওয়ামী লীগ নেতা ও ভূমি অফিসের চিহ্নিত দালালদের অন্তর্ভূক্ত করে উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ৯ সদস্য বিশিষ্ট পেকুয়া উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি দুদক কর্তৃক অনুমোদন হওয়ায় বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে উক্ত বিতর্কিত কমিটি বাতিলের দাবী উঠেছে।

 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫-০২/২০১৭ইংরেজী তারিখে দূর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আবু সাঈদ স্বাক্ষরিত ২৩৭ (১৪) স্মারকমূলে ৯ সদস্য বিশিষ্ট পেকুয়া উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি অনুমোদিত হয়েছে। অনুমোদিত কমিটির কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অনুমোদিত কমিটিতে পেকুয়া উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি করা হয়েছে চট্টগ্রামের মেরন সান স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও টইটং ইউনিয়নের পূর্ব টইটং গ্রামের মৌলনা হাসান শরীফের পুত্র ড. লায়ন মুহাম্মদ সানা উল্লাহকে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সানা উল্লাহর বিরুদ্ধে মেরন স্কুলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার বিষয়টি সম্প্রতি প্রমাণিত হওয়ায় কলেজের স্বীকৃতিও বাতিলের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কিছু দিন পূর্বে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের কাছে চিঠিও প্রেরণ করেছে। এছাড়াও চকরিয়া উপজেলায় তার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। আর কমিটি সাধারন সম্পাদক করা হয়েছে, পেকুয়া মিয়া পাড়া গ্রামের মৃত আবদুল হাকিমের পুত্র হোমিও চিকিৎসক আশেক উল্লাহকে। তার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, আশেক উল্লাহ বদরখালী মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাশ করেছেন। এরপর চট্টগ্রাম কলেজে পড়ালেখা করেছেন। বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি মীর মো. নাছির উদ্দিনের খুবই ঘনিষ্ট ছিল।

 গত কয়েক বছর কক্সবাজার ঔষধ প্রশাসন কর্তৃক পেকুয়া বাজারস্থ আশেক উল্লাহর হোমিওর দোকানে মেয়াদোর্ত্তীণ ঔষধ রাখা ও কাগজপত্র সঠিক না থাকায় অর্থ জরিমানাও করেছিল। কমিটির সহ-সভাপতি করা হয়েছে রাজাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি। অথচ দুদুকের গঠনতন্ত্রের ৬ ধারারা (খ) এর (২) এ উল্লেখ রয়েছে কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য হতে পারবেনা। এছাড়াও কমিটি সদস্য করা হয়েছে মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারান সম্পাদক ও মগনামা ইউনিয়নের বেদারবিল পাড়া গ্রামের হাজী নুরুজ্জামানের পুত্র মো. ইসমাইল বিএসসিকে। এছাড়াও কমিটি সহ-সভাপতি করা হয়েছে, পেকুয়া বাজারস্থ জামায়াত পরিচালিত প্যান ইসলামিক হাসপাতালের অন্যতম পরিচালক ও জামায়াত নেতা মাষ্টার এনামুল হক চৌধুরী। তিনি পেকুয়া জমিদার বাড়ির মরহুম শরিফ চৌধুরী পুত্র। কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে, পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের পূর্ব সোনাইছড়ি গ্রামের নুরুল হোসেনের পুত্র ও চট্টগ্রামস্থ প্যারাগন কোচিং সেন্টারের পরিচালক, সাবেক শিবির নেতা রিয়াজ উদ্দিন মনিরকে। পেকুয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির মাঠ কর্মচারী শেখর বিশ্বাসকেও সদস্য করা হয়েছে। পেকুয়া ইউনিয়ন, বারবাকিয়া ও উপজেলা ভূমি অফিসের চিহ্নিত দালাল, উজানটিয়া ইউনিয়নের জৈনন্দিন পাড়া গ্রামের আবদুর রশিদের পুত্র এজাবত উল্লাহকেও সদস্য করা হয়েছে। অপরদিকে মগনামা ইউনিয়নের বিএনপি পরিবারের এক নারীকেও সদস্য কমিটিতে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। অনুমোদনের তারিখ থেকে আগামী তিন বছরের জন্য উক্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

 এ বিষয়ে জানার জন্য পেকুয়া উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ড. লায়ন মুহাম্মদ সানা উল্লাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ‘কমিটিতে বিতর্কিত কেউ আছে কিনা খোঁজ নেওয়া হবে। কমিটিতে সদস্য অর্ন্তভূক্তির ব্যাপারে আশেক উল্লাহর ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি জানান।

 এদিকে পেকুয়ার সচেতন কয়েকজন ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, বিতর্কিতদের নিয়ে পেকুয়া উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি অনুমোদন করা দুদকের উচিত হয়নি। সচেতন অবিলম্বে উক্ত কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে নয়াভাবে কমিটি গঠন করার জন্য দুদুকের ডিজির কাছে আহবান জানিয়েছেন।

 এ বিষয়ে জানার জন্য দূর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মো. আবু সাঈদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পেকুয়া উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটিতে বিতর্কিত কেউ থাকলে তদন্ত করেই শিগগিরই কমিটি পুর্নগঠন করা হবে। এমজুপে

পাঠকের মতামত: