ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় সমন্বিত কৃষিজ উৎপাদনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার বনানী পল্লী

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::ke

পেকুয়ায় বাজারজাত হচ্ছে বনানী ফুডস’র খাদ্যপণ্য। নির্ভেজাল, মানসম্মত খাদ্যপন্য উৎপাদনের নির্ভযোগ্য প্রতিষ্টানে পরিনত হয়েছে বনানী ফুডস। আধুনিক ও প্রযৃক্তিগত উৎপাদন ব্যবস্থায় উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নে বনানী ফুডস যাত্রা সুচনা করেছেন। বনানী পল্লীতে নতুন যুক্ত হয়েছে খাদ্যপন্য উৎপাদন কারখানা। উপজেলার কৃষিজ উৎপাদনে সর্ববৃহত প্রতিষ্ঠান এ বনানী পল্লী। একটি সমন্বিত ও মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প এটি। ১৯৯১সালে শিলখালী ইউনিয়নের আলীচাঁন মাতবর পাড়ায় বনানী পল্লী গড়ে উঠে। এ এলাকার সমাজ সেবক, শিক্ষানুরাগী অধ্যাপক নুরুল আমিন চৌধুরী এ বনানী পল্লী গড়ে তুলেছেন। দারিদ্র বিমোচন, আত¦কর্মসংস্থান স্বাবলম্বী ও আত্মসামাজিক পরিবর্তনের জন্য বনানী পল্লীটি প্রতিষ্টা করেছেন। সে সময় থেকে উপজেলার সর্ববৃহত পল্লী হিসেবে সেটি সমাদৃত হয়। কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত সফলতায় এ প্রতিষ্ঠান অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত সুচিত করেছে। পল্লীতে একাধিক দিঘি রয়েছে। এসব পুকুরে উৎপাদিত হচ্ছে মৎস্য। বিজ্ঞান সম্মত মৎস্য চাষ বনানী পল্লীকে আরো অনেক দুর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। উন্নত জাতের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সম্প্রসারন হচ্ছে এ পল্লীতে। উৎপাদন ব্যবস্থাকে বিজ্ঞান সম্মত করতে উদ্যেগ নেন বনানী পল্লী কর্তৃপক্ষ। ডেইরী ফার্ম সংযুক্ত আছে এ পল্লীতে। প্রায় দু’শতাধিকের বেশি উন্নত প্রজাতির গাভী ডেইরীতে আছে। প্রত্যেকটি গাভি প্রতিদিন ২০-২৫কেজি দুধ দিচ্ছে। এ পল্লী থেকে প্রতিদিন ৫-৬শ কেজি দুধ উৎপাদন হচ্ছে। এসব দুধ বিক্রি হচ্ছে পেকুয়াসহ আশে পাশের উপজেলায়। বনানী পল্লীর দুধের সমাদর পেকুয়ায় আলাদা। নির্ভেজাল দুধ সরবরাহ দেয়ায় এ প্রতিষ্টানের দুধ সর্বত্রে সরবরাহ চলছে। বনানী পল্লীতে পোলট্রি খামার আছে। ব্রয়লার, লেয়ার দু’ধরনের মরগির শেড আছে। ১৪-১৫হাজার মুরগি থেকে প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে ১০-১২হাজার ডিম। এসব ডিম পেকুয়াসহ বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত হচ্ছে। বনানী পল্লীতে কবুতরও পালন হচ্ছে। উন্নত জাতের কবুতর রয়েছে পল্লীতে। সে সাথে ছাগল ও হাঁস পালনও চলছে। সমন্বিত মৎস্য চাষ ত্বরান্বিত করতে নিচে মাছ, উপরে হাঁস ও মুরগি। হাঁস-মুরগির বিষ্টা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মাছ উৎপাদনের জন্য ফিড ও বিভিন্ন ক্যালসিয়াম, নাইট্রোজেন, প্রসফেক্ট ও পটাসিয়ামের যোগান দেয়া হচ্ছে এসব পুকুরে। পুকুরের পাড়ে সৃজিত হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ গাছ। পেঁপে, কাঠাঁল, আম, কলা,লিচু, জামরুল, আতা, শরিফা, আমলকি, কামরাঙ্গা, হরিতক, জামসহ হরেক রকম ফলজ গাছ। এছাড়া বনানী পল্লীতে উৎপাদিত হচ্ছে বিভিন্ন সবজি। উচ্চ ফলনশীল জাত ও দেশীয় জাতের সমন্বয়ে কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থাকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে গেছে এ প্রতিষ্টান। বনানী পল্লীকে ঘিরে উপজেলার পাহাড়ি ইউনিয়ন শিলখালীতে সঞ্চারিত হয়েছে অর্থনীতির গতিধারা। সমন্বিত উৎপাদন ব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিক। চল্লিশ জনের অধিক চাকুরিজীবি এ প্রতিষ্টানে স্থায়ী হিসেবে কাজ করছেন। অস্থায়ী হিসেবে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। উৎপাদন ব্যবস্থাকে সহজতর করতে এ সব শ্রমিকরা এ খামারে নিয়োজিত রয়েছেন। বনানী পল্লী শিলখালীসহ সমগ্র পেকুয়া উপজেলায় অর্থনীতির প্রানভ্রমুরা হিসেবে পরিগনিত হচ্ছে। দারিদ্র বিমোচনে ভুমিকা রাখছে এ প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে বেকারী পন্য উৎপাদন ব্যবস্থা। বনানী ফুডস নামে এ প্রতিষ্টান ইতিমধ্যে খাদ্য উৎপাদন শুরু করেছে। বিএসটিআই থেকে অনুমোদন পেয়েছে খাদ্য উৎপাদনের জন্য। বনানী পল্লীতে গড়ে উঠেছে বেকারী। মনোরম ও প্রাকৃতিক পরিবেশে এ বেকারীর উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ২৭টি পন্য তারা ওই বেকারী থেকে বাজারজাত করছে। বায়োগ্যাস থেকে উৎপাদিত হচ্ছে বেকারীর পন্য। প্রতিষ্টানের গরু ও মুরগির বিষ্টা থেকে জ¦ালানী এ বায়োগ্যাস সরবরাহ চলছে বেকারীতে। উৎকৃষ্ট মানের ময়দা, চিনি, বাটার, গ্লুকোজ, জেলি, ইষ্ট, ব্রেড ইমপ্রুভার ও লবন হচ্ছে মুল উপদান। এছাড়া এসব পন্যতে উপদান হিসেবে মিশ্রন হচ্ছে নিজস্ব খামার থেকে উৎপাদিত ডিম, দুধ, কলাসহ কৃষিপন্য। সর্বোপুরি এ কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে টাটকা খাদ্যপন্য। মান নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রতিদিন পরিদর্শন করা হচ্ছে বনানী ফুডস কারখানা।

বিশেষজ্ঞরা মান সম্মত খাদ্য উৎপাদনে বনানী ফুডস’র ভুয়েসী প্রশংসা করছেন বলে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ডেইরী, বেকারী, পোলট্রি, কৃষি, মৎস্য, হর্টিকালচার বনানী পল্লীর সমন্বিত উৎপাদন ব্যবস্থা। এ প্রতিষ্টানটি আরো অধিক সম্প্রসারিত হচ্ছে পেকুয়ায়। বনানী পল্লীর ম্যানেজার আব্দু রহমান, সিও মেজবাহ উদ্দিন ও কারখানার পরিচালক মো.সেলিম উদ্দিন জানায় বনানী ফুডস’র খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কেক, বিস্কুট, পাউরুটি, বন, সুইট টোস্ট, মটরভাজা, বেলা, বরফিসহ ২৭টি পন্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এর পরিধি বৃদ্ধি পাবে। পরিবেশ বান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা এ কারখানায়। বনানী পল্লী দুধ, ডিম, কলা, ও সবজি পন্য মেশানো হচ্ছে মুল উপদান হিসেবে। আর ময়দা ও চিনিসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের। খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে অত্যন্ত মানসম্মত। তবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনা করা হয়েছে পন্য বাজারজাতে।

বনানী পল্লীর প্রতিষ্টাতা অধ্যাপক নুরুল আমিন চৌধুরী জানান মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য এ সমন্বিত উৎপাদন উদ্যেগ। আজকে বিশাল পরিসরে এ প্রতিষ্টান ছড়িয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে বহু মানুষের। উৎপাদন ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রোটিন, আমিষ ও ক্যালরি সহায়তায় এ প্রতিষ্টান অগ্রনী ভুমিকা রাখছে। মানুষের পরিবর্তনের জন্য আশা রাখছি এটি অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। তবে সহযোগিতার প্রয়োজন।

পাঠকের মতামত: