ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

পাসপোর্ট পাওয়ার চেষ্টায় রোহিঙ্গারা

passঅনলাইন ডেস্ক :::

দালালদের মাধ্যমে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে গত ছয় মাসে যাচাই-বাছাইয়ে দেড় শতাধিক রোহিঙ্গার আবেদন শনাক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, একটি পাসপোর্ট করে দিতে দালালেরা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা।
কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২৬ জুন টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা পরিচয়ে ‘কাউসার’ নামের এক নারী পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। পরে পুলিশি তদন্তে (ভেরিফিকেশন) ধরা পড়ে তিনি মিয়ানমারের নাগরিক। ২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের সাদেক হোসেন নামের এক ব্যক্তি। আবেদনের সঙ্গে জাতীয়তা সনদ এবং ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপিও যুক্ত করেন। কিন্তু পুলিশের তদন্তে শনাক্ত হয় সাদেক মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ায় ভুয়া ঠিকানা দেখিয়ে গত বছরের ২৪ নভেম্বর পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন রোহিঙ্গা মো. জুনাইদ। পুলিশি তদন্তে পরিচয় রোহিঙ্গা শনাক্ত হওয়ার পর তাঁরা আর পাসপোর্ট অফিসে আসেননি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শহরের বাহারছড়া এলাকায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, আবেদনপত্র জমা দিতে মানুষের দীর্ঘ সারি। কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম লাইনে দাঁড়ানো লোকজনের আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করছেন। রোহিঙ্গা হিসেবে কাউকে সন্দেহ হলে লাইন থেকে তাঁকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন। আবেদনপত্র জমা দিতে আসা লোকজনকে ‘দালাল’ থেকে সাবধান থাকতে বলছেন তিনি। লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কেন দালালকে টাকা দিচ্ছেন? শিক্ষিত হয়েও কেন দালালের মাধ্যমে আবেদনপত্র পূরণ করছেন?’
কার্যালয়ের ভেতরে-বাইরে লেখা ‘আর্থিক লেনদেন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, দালাল আপনার বন্ধু হতে পারে না।’
গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের তিনটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় ৯ পুলিশসহ ১৮ ব্যক্তি নিহত হয়। এরপর থেকে সে দেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ রাজ্যে অভিযান শুরু করে। তাদের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত অতিক্রম করে টেকনাফ ও কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে ঢুকে পড়ে। গত চার মাসে রাখাইন রাজ্য থেকে টেকনাফ ও উখিয়ায় পালিয়ে আসে অন্তত ৯০ হাজার রোহিঙ্গা। এর মধ্যে টেকনাফ ও উখিয়ার চারটি রোহিঙ্গাশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৬৭ হাজার রোহিঙ্গা। এ ছাড়া কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন পাহাড়সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে থাকছে আরও অন্তত ৪ লাখ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের একটি অংশ সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
গতকাল দুপুরে আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে কথা হয় আবেদন জমা দিতে আসা মো. শফি নামে এক যুবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর ভাই সৌদি আরব থাকেন। তিনিও সেখানে যেতে চান। তাই পাসপোর্ট করাতে এসেছেন। কিন্তু স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের নাম বলতে না পারায় রোহিঙ্গা সন্দেহে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বসিয়ে রাখা হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলার সিকদারপাড়া থেকে আবেদনপত্র জমা দিতে আসা মো. রিয়াদ এবং মহেশখালীর তেলিপাড়া থেকে আসা মো. হানিফ বলেন, রোহিঙ্গারা ভুয়া ঠিকানা দিয়ে দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করার আবেদন করেছেন। এ জন্য সবাইকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুই শতাধিক আবেদনপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ আবেদনপত্র পূরণ হয়েছে দুই-তিন জনের হাতে। সত্যায়িতও হয় দুই-তিনজনের নামে। তিনি বলেন, ভুয়া জন্মসনদ, জাল জাতীয়তা সনদ ও এনআইডি যুক্ত করে দালালেরা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট আবেদন জমা দেয়। তবে যাচাই-বাছাইয়ে তা ধরা পড়ে।
২০১৬ সালের ৫ আগস্ট কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের সাত মাসে পাসপোর্ট আবেদন জমা পড়েছে ১৯ হাজার ২৩৭টি।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি পাসপোর্ট করতে গিয়ে বরিশালে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে চার রোহিঙ্গা। ১৭ জানুয়ারি চার রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থানায় হস্তান্তর করে বরিশালের পুলিশ। আটক রোহিঙ্গাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সৌদি আরব পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট করাতে তাদের বরিশাল নিয়ে যায় দালালেরা।
ওসি বলেন, পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে গত কয়েক মাসে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য থানায় যেসব আবেদন পাঠানো হয়েছে এর প্রায় ৩ শতাংশই রোহিঙ্গাদের।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিদারুল আলম বলেন, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাসে কয়েক হাজার পাসপোর্ট আবেদনপত্র যাছাই-বাছাই করেছেন তাঁরা। ১ হাজার ১৩৯টির ব্যাপারে আপত্তি জানানো হয়েছে। আপত্তি জানানো আবেদনের মধ্যে ১৫ শতাংশই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা।

পাঠকের মতামত: