ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

‘শব্দ সন্ত্রাসে’ অতিষ্ঠ পর্যটন নগরী কক্সবাজারের মানুষ

2a3be9bd1fb9a2238beef7c51d82a23bআহমদ গিয়াস, কক্সবাজার ।।

গাড়ির হাইড্রলিক হর্ণ, উচ্চস্বরের মিউজিক বা মাইকিংসহ মাত্রাতিরিক্ত নানা যান্ত্রিক শব্দে অতিষ্ঠ পর্যটননগরী কক্সবাজারের মানুষ। দিন নেই রাত নেই, অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলছে এই শব্দ সন্ত্রাস। এর ফলে বধির হওয়া, হৃদরোগ ও খিটখিটে মেজাজে আক্রান্ত হওয়া, মানসিক প্রতিবন্দী ও বিকলাঙ্গ হওয়া এবং মাথাব্যথা ও অনিদ্রাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। মাত্রাতিরিক্ত শব্দ উৎপাদন করা পরিবেশ আইনে সুস্পষ্ট অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হলেও এই আইনের কোন প্রয়োগ নেই। ফলে কক্সবাজারে শব্দ সন্ত্রাসের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

কক্সবাজারে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি করে চলেছে শব্দ দূষণ। যানবাহনের হাইড্রলিক হর্ণ, পিকনিক পার্টি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত সাউন্ড সিস্টেম, বিমান, যানবাহন ও মোটরের মাত্রাতিরিক্ত উচ্চ শব্দে ঘটছে শব্দ দূষণ। বিশেষ করে শীতকালীন পর্যটন মৌসুম উপলক্ষে উচ্চশব্দে মাইক বাজিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পিকনিকের গাড়ী আসা, বিয়েসাদীসহ অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে সাউন্ড সিস্টেমে উচ্চশব্দে মিউজিক বাজানো এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান বেড়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে কক্সবাজারে মারাত্মক শব্দ দূষণের ঘটনা ঘটছে। এতে প্রতি মুহূর্তে শত শত শিশুর শ্রবণ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাতে ঘুমাতে না পেরে মাথাব্যাথায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ঘটছে মারাত্মক ব্যাঘাত। রোগীদের শিকার হতে হচ্ছে অবর্ণনীয় যন্ত্রণার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীতকাল আসার সাথে সাথে জেলাব্যাপী শুরু হয়েছে বিয়েসাদীসহ নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর এসব অনুষ্ঠানের পাশাপাশি চলতি ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কক্সবাজারে শুরশু হয়েছে পর্যটনের সুপার পিক সিজন। ফলে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় মধ্যরাতে বাজানো সাউন্ড সিস্টেমের গানের আওয়াজের সাথে পিকনিক পার্টির গানের আওয়াজে গত পক্ষকাল ধরে ঘুমাতে পারছেন না মানুষ। বর্তমানে কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি শব্দ দূষণ হচ্ছে শহরের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা, বাস টার্মিনাল ও স্টেশন এবং সমুদ্র সৈকত এলাকা ও জেলার প্রধান প্রধান সড়কে। এছাড়া বিমান বন্দরে বিমান ওঠানামার সময়েও ঘটছে উচ্চমাত্রার শব্দ দূষণ। তবে মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠেছে গাড়ীর হাইড্রলিক হর্ণ এবং উচ্চস্বরে সাউন্ড সিস্টেম ও মাইকের আওয়াজ।

এবিষয়ে শহরতলীর দরিয়ানগর বড়ছড়া এলাকায় অবস্থিত ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বলেন, এসেছি ভালভাবে পড়ালেখা করতে। কিন্তু এখন মধ্যরাতে বাধ্য হয়ে শুনতে হচ্ছে চটুল গান।

স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে, শব্দ দূষণ বাংলাদেশে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একটি প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। প্রকৃতপক্ষে শব্দ দূষণের কারণে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বধিরতা থেকে শুরু করে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া পর্যন্ত বেশ কিছু মারাত্মক রোগের শিকার হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল (ডিবি) হলেই সাধারণত মানুষ ঘুমাতে পারে না। ৮৫ ডিবিতে শ্রবণ শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে এবং এর মাত্রা ১২০ ডিবি হলে কানে ব্যথা শুরু হয়। যদি তিন বছরের কম বয়ষ্ক শিশু কাছাকাছি দূরত্ব থেকে ১০০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ শোনে, তাহলে সে তার শ্রবণ ক্ষমতা হারাতে পারে। বেতার, টেলিভিশন, সাউন্ড সিস্টেম ও মাইকের উচ্চ শব্দ, কলকারখানার শব্দ এবং উচ্চ মাত্রার চিৎকার শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শব্দের তীব্রতা মাপার একক ডেসিবেল (ডিবি) অনুযায়ী, কক্সবাজার শহরের যেকোন ব্যস্ত সড়কে সৃষ্ট শব্দের মাত্রা ৬০ থেকে ৮০ ডিবি, যানবাহনের শব্দ মিলে তা ৯০ ডিবিতে দাঁড়ায়, লাউড স্পিকারের সৃষ্ট শব্দ ৯০ থেকে ১০০ ডিবি, কল কারখানায় ৮০ থেকে ৯০ ডিবি, রেস্তোরাঁ এবং সিনেমা হলে ৭৫ থেকে ৯০ ডিবি, মেলাউৎসবে ৮৫ থেকে ৯০ ডিবি, স্কুটার বা মটরসাইকেলের ৮৭ থেকে ৯২ ডিবি এবং ট্রাকবাসের সৃষ্ট শব্দ ৯২ থেকে ৯৪ ডিবি মাত্রার শব্দ উৎপাদন করে। কিন্তু শব্দের ক্ষতিকর মাত্রা হলো: শয়নকক্ষে ২৫ ডিবি, বসার ও খাবার ঘরে ৪০ ডিবি, অফিসআদালতে ৩৫ থেকে ৪০ ডিবি, শ্রেণীকক্ষে ৩০ থেকে ৪০ ডিবি, লাইব্রেরীতে ৩৫ থেকে ৪০ ডিবি, হাসপাতালে ২০ থেকে ৩৫ ডিবি, রেস্তোরাঁয় ৪০ থেকে ৬০ ডিবি এবং রাত্রিকালে শহর এলাকায় ৪৫ ডিবি। যখন শব্দ এই সীমা অতিক্রম করে তখনই শব্দ দূষণ ঘটে।

শব্দ দূষণের বিষয়ে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মো. নুরুল আলম বলেন, সীমার বাইরের শব্দ দূষণ মানুষের উপর বহুমাত্রিক নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। এর ফলে নানা দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। শব্দ দূষণ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো, মানসিক অস্থিরতা তৈরি, শ্রবণ ক্ষমতা ধ্বংস করা এবং মানসিক ভারসাম্যকেও বিনষ্ট করতে পারে। শব্দ দূষণ খিটখিটে মেজাজ সৃষ্টিরও কারণ। এছাড়া এরফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বাধাগ্রস্ত হয় এবং তাদেরকে লেখাপড়ার প্রতি উদাসীন করে তোলে। শিশুদের মাঝে ভয়রোগও তৈরি করে।

বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের জরীপ অনুসারে, উচ্চ শব্দ জনসাধারণের মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার কারণ। এটি উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ হৃদস্পন্দন, মাথাব্যথা, বদহজম ও পেপটিক আলসার সৃষ্টিরও কারণ। এমনকি গভীর ঘুমকেও ব্যাহত করছে। যেকোন ব্যক্তি যেকোন স্থানে আধঘণ্টা বা তার অধিক সময় ধরে ঘটা ১০০ ডিবি বা তার অধিক শব্দ দূষণের ফলে বধির হয়ে যেতে পারে। উচ্চমাত্রার শব্দের কর্ম পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলে যেকোন ব্যক্তির সম্পূর্ণ বধিরতা দেখা দিতে পারে। যেকোন ধরনের শব্দ দূষণ গর্ভবতী মায়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

জরীপে আরো দেখা গেছে, বড় বিমান বন্দরের সন্নিকটে বসবাসকারী গর্ভবতী মায়েরা অন্যান্য স্থানে অবস্থানকারী মায়েদের তুলনায় অধিক সংখ্যক পঙ্গু, বিকৃত এবং অপরিণত শিশু জন্ম দিয়ে থাকে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপ অনুসারে, বাংলাদেশের জন্য যথার্থ শব্দমাত্রা শান্ত এলাকায় দিবাভাগে ৪৫ ডিবি ও রাত্রিকালে ৩৫ ডিবি, আবাসিক এলাকায় দিবাভাগে ৫০ ডিবি ও রাত্রিকালে ৪০ ডিবি, মিশ্র এলাকায় (আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা) দিবাভাগে ৬০ ডিবি ও রাত্রিকালে ৫০ ডিবি, বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাভাগে ৭০ ডিবি ও রাত্রিকালে ৬০ ডিবি এবং শিল্প এলাকায় দিবাভাগে ৭৫ ডিবি ও রাত্রিকালে ৭০ ডিবি। কিন্তু কথিত স্বাস্থ্যনগরী কক্সবাজারে শব্দ দূষণের মাত্রা এখন ভয়াবহ।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী কোনো এলাকা ৬০ ডেসিবেল মাত্রার বেশি শব্দ হলে সেই এলাকা দূষণের আওতায় চিহ্নিত হবে। সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, অফিস কক্ষে ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবেল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষে ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবেল, হাসপাতালে ২০ থেকে ৩৫ ডেসিবেল, রেস্তোরাঁতে ৪০ থেকে ৬০ ডেসিবেল শব্দ মাত্রা সহনীয়। ৬০ ডেসিবেলের বেশি মাত্রার শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তিকে নষ্ট করে দিতে পারে এবং ১০০ ডেসিবেল শব্দে চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শব্দ দূষণের গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে ১৯৯৭ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে শহরকে ‘নীরব এলাকা’, ‘আবাসিক এলাকা’, ‘মিশ্র এলাকা’, ‘শিল্প এলাকা’ ও ‘বাণিজ্যিক এলাকা’, এ ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এসব এলাকায় দিন ও রাত ভেদে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাসিক এলাকায় ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ডেসিবেল, শিল্প এলাকায় ৭৫ ডেসিবেল, নীরব এলাকায় ৪৫ ডেসিবেল, আবাসিক কাম বাণিজ্যিক এলাকায় ৬০ ডেসিবেল, রাতের জন্য সর্বত্র ১০ ডেসিবেলের কম। এই আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকাকে নীরব এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এসব জায়গায় মোটরগাড়ীর হর্ণ বাজানো বা মাইকিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরপর ২০০৬ সালে বাংলাদেশ শব্দ দূষণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এই নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা হলো ৫৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। একইভাবে নীরব এলাকার জন্য এ শব্দসীমা যথাক্রমে সর্বোচ্চ ৫০ ও ৪০ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় ৬০ ও ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ও ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় ৭৫ ও ৭০ ডেসিবেল সর্বোচ্চ শব্দসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এর উপরে শব্দ সৃষ্টি করাকে দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় বলা আছে, আবাসিক এলাকার সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণকাজের ইট বা পাথর ভাঙার যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। যানবাহনে অপ্রয়োজনে উচ্চ শব্দে হর্ণ বাজানো যাবে না। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা যবে না। এই বিধির আওতায় স্কুলকলেজ, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিসআদালতকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের চতুর্দিকে ১০০ গজের ভেতরে কোনো প্রকার হর্ণ বাজানো যাবে না। আরো বলা হয়েছে, কোনো উৎসব, সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকার, এমপ্লিফায়ার বা কোনো যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করতে হলে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে। তবে এসব কার্যক্রম সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টার বেশি চলবে না। পাশাপাশি রাত ১০টার পর কোনোভাবেই শব্দ দূষণকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু কক্সবাজারে এসব বিধিমালা মানা হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের বিশিষ্ট আইনজীবী অধ্যাপক আবদুল মন্নান বলেন শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে রয়েছে বেশ কিছু আইন ও নীতিমালা থাকলেও নাগরিকদের অসচেতনতা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংগঠনের উদাসীনতার কারণে এসব আইনের কোন প্রয়োগ হচ্ছে না।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, শব্দ সন্ত্রাস বা দূষণের কারণে কক্সবাজার শহর দিন দিন বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এখানকার মানুষ স্বাস্থ্যহানী ও স্বাস্থ্যঝুঁকির শিকার হচ্ছে। অথচ কক্সবাজার একটি স্বাস্থ্যকর এলাকা হিসাবে পরিচিত।

তিনি বলেন, হেলথি টাউন বা স্বাস্থ্যসম্মত নগরী হিসাবে কক্সবাজারের সুনাম ধরে রাখতে হলে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কক্সবাজারে এত শব্দ দূষণ ঘটলেও পরিবেশ অধিদপ্তর রয়েছে নির্লিপ্ত।

পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াসউদ্দিন বলেন, পাহাড় কাটা নিয়ে মাতামাতি হয়। কিন্তু শব্দ দূষণসহ অন্যান্য পরিবেশ দূষণ নিয়ে কথা কেউ বলে না।

পাঠকের মতামত: