ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

এক মাসে মিয়ানমার থেকে চীনে পালিয়েছে প্রায় ১৫০০০ মানুষ-জাতিসংঘ

rohhবিশ্ব ডেস্ক:
মিয়ানমারে জাতিগত গোষ্ঠীর শিশুরামিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার সংঘাত জোরালো হওয়ার পর গত মাসে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চীনে পালিয়েছে। মিয়ানমারে জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) এর একজন মুখপাত্র তাদের অনুমানভিত্তিক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, ইমেইলের মাধ্যমে তাদের কাছে এই তথ্য পাঠিয়েছেন (ওসিএইচএ) এর মুখপাত্র।
গত ২০ নভেম্বর চীন সংলগ্ন মিয়ানমার সীমান্তে কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী সেনা চৌকি ও পুলিশ চৌকিতে হামলা করার পর শান রাজ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার জাতিগোষ্ঠীগুলোর সশস্ত্র সংগঠন কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি (আরাকান আর্মি) তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মির সঙ্গে সেনাবাহিনীর ওই সংঘর্ষ হয়। লড়াই থেকে বাঁচতে ওই অঞ্চলের অসংখ্য বাসিন্দা এলাকা ত্যাগ করে চীনের দিকে যেতে শুরু করেন। মানবিক কারণে চীনও সীমান্ত পেরিয়ে চলে যাওয়া এসব লোকদের আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
এই প্রেক্ষাপটে সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) ওসিএইচএ জানায়, গত ২০ নভেম্বর থেকে মিয়ানমারের শান রাজ্যের উত্তরাঞ্চলীয় অংশের ১৫ হাজার মানুষ নতুন করে শরণার্থী হয়েছে এবং আরও ২৪০০ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এছাড়া অনেকে নদী সাঁতরে মালয়েশিয়া পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করার সময় ডুবে মারা গেছেন।
ইমেইলেওসিএইচএ-এর মুখপাত্র পিয়েরে পেরন বলেন,উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য কাচিন ও শানে সংঘাতের কারণে যেসব লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটছে না, বরং দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে’।
মিয়ানমারের শান রাজ্যে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘাতের কারণে হাজার হাজার মানুষ ঘরহারা হয়েছে। এ রাজ্যে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বসবাস যারা চীন ও থাইল্যান্ড সীমান্তে তৎপরতা চালিয়ে থাকে।
পেরন বলেন, ‘গত কয়েক বছরে সংঘাতপূর্ণ এলাকা কাচিন ও শানে যে পরিস্থিতি ছিল তার চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত লাখো মানুষের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়াও এখানে বাধাগ্রস্ত।’
এছাড়া ২০ নভেম্বরের ঘটনার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীও শান রাজ্যে অভিযান জোরালো করার ঘোষণা দেয়। আর তাতে পরিষ্তিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শান রাজ্যে গত মাসে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্তত ১৭০ বার সংঘর্ষ হয়েছে।
এদিকে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতিরও কোনও সুরাহা হয়নি। সেখান থেকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে রোহিঙ্গারা। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টির হিসেব অনুযায়ী, গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনী যে ধরনের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল হতে পারে বলে মনে করছে সংগঠনটি। জাতিসংঘও একই ধরনের সতর্কতা দিয়েছে। জাতিসংঘ আরও বলেছে মিয়ানমার জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।

উল্লেখ্য, এ বছর অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি,এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইসলামি চরমপন্থা দমনে কাজ করছেন বলে দাবি করছেন তারা। আর তা এমন কঠোর প্রক্রিয়ায় চালানো হচ্ছে যে সেখানে সংবাদমাধ্যমকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধের আদেশ দিতে এবং জাতিসংঘের সঙ্গে নিরপেক্ষ তদন্ত শুরুর উদ্যোগ নিতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তবে মুসলিম রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ‘আরও সময়’ চেয়েছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা হত্যা ও নির্যাতন নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ ও ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে সু চি আসিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলোর মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন। সোমবার ইয়াঙ্গুনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সু চি বলেন, রাখাইন প্রদেশে ত্রাণকর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হবে, কিন্তু তারা সব জায়গায় যেতে পারবে না। আরাকানের যে সমস্ত জায়গায় রোহিঙ্গাদের হত্যা এবং ধর্ষণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে, সে সব জায়গায় প্রবেশাধিকারের সম্ভাবনা তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: