জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার ::::
চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের রামু উপজেলার রশিদ নগর ইউনিয়নের পানিরছড়া মোড়ে ইউনিক পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী চেয়ার কোচ ২ কৃষককে বাঁচাতে গিয়ে মহাসড়কের উপর গাড়িটি উল্টে গেলে ৪ যাত্রী নিহত ও ৩৪ যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদেরকে রামু উপজেলা হাসপাতাল ও কক্সবাজার সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লিখাঅবধি ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতদের মধ্যে আরো মৃত্যুর আশংকা প্রকাশ করছেন স্ব স্ব হাসপাতালের ডাক্তাররা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ১১ ডিসেম্বর দুপুর দেড় টার দিকে চট্রগ্রাম থেকে কক্সবাজারমূখী ইউনিক পরিবহন (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-০১০৫) গাড়িটি ঘটনাস্থল অতিক্রম করার সময় ২ কৃষক ধানের ভার নিয়ে রাস্তা পারাপারের সময় তাদেরকে বাঁচাতে গিয়ে চালক দ্রুত ব্রেক করে থামাতে গিয়ে গাড়িটি রাস্তার উপর উল্টে যায়। পরে ঘটনাস্থলে স্থানীয় জনগন, সেনাবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ এসে গাড়িটি গ্যাস দিয়ে কেটে আহত যাত্র দের উদ্ধার করে এম্ভুলেন্স যুগে রামু ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।
ঘটনা পরবর্তী মহাসড়কের উভয় পাশে শতশত যানবাহন আটকা পড়ে। দীর্ঘ ৩ঘন্টা পর গাড়িটি রাস্তা থেকে সরিয়ে নিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
এসময় রাস্তার উভয় দিকে হাজার হাজার পর্যটকসহ যাত্রী সাধারণের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। নিহত ৪জন যাত্রীর পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার বাসিন্দা কাশেম (৪২) ও চকরিয়া উপজেলার পূর্ব ভেওলার মৃত কবির আহামদের স্ত্রী নূরুন্নাহার (৪০)। পেকুয়া উপজেলার টেটং ্ইউনিয়নের মো. শফিকের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা (২২) ও কুতুবদিয়ার উপজেলার লেমশিখালী ইউনিয়নের মৃত এবাদুল্লাহর পুত্র মো. ফারুক (২০) নিহতদের লাশ রামু ও সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। চার জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তুলাতলী হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক আবদুল আওয়াল জানান, ইউনিক পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে আহত হয়েছেন ৩৪ জন। নিহতদের মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।
এছাড়া আহতরা হলো রফিকুল ইসলামের ছেলে ইসা বাহাতউল্লাহ, আবুল,এনায়েতের ছেলে মোঃ শোয়েব, মৃত ইদ্রিসের ছেলে মনির আলম, কাদের হোসেনের ছেলে নুরুল আলম, মৃত আজিজুর রহমানের ছেলে জামাল হোসেন, মৃত মোঃ হোছনের ছেলে বাদসা মিয়া, আবদুল হান্নানের ছেলে জন্নাতুল মাউয়া, আবদুল হান্নানের ছেলে মেহেদী হাসান, মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে শাকিব, আজিজুর রহমানের ছেলে সৈয়দ নুর, সৈয়দ আহমদের ছেলে মমতাজ, আহমদ কবিরের ছেলে মোঃ আবদুল জলিল, হাকিম আলীর ছেলে নুরুল আমিন, মোঃ আবুল কাসেমের ছেলে সুমন, মমতাজের ছেলে মনির, আবদুর রশিদের ছেলে নাসির উদ্দিন, আবুল হোসেনের ছেলে উম্মে কুলসুম, মোঃ শফিকুর রহমানের মেয়ে মিনফাতুল জন্নাত, মৃত আকরামের ছেলে মোঃ শফিকুর রহমান, মো: জলিলের ছেলে আবুল হোছন, শাহ আলমের ছেলে রনি, মৃত মোঃ হোছনের ছেলে লেডু মাঝি, তৈয়ব আলীর ছেলে আবদুল হাকিম, জাফর আলমের স্ত্রী নুসরাত ও রনজিত মল্লিকের ছেলে উত্তম কান্তি মল্লিক। তাদের বাড়ি রামু, কক্সবাজার শহর, চকরিয়া, টেকনাফ, চট্টগ্রাম, কুতুবদিয়া, ডুলাহাজারা, নোয়াখালী, রংপুর ও ভৈরব জেলার বলে জানা গেছে।
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন, রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহজাহান আলী, উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি মোঃ নিকারুজ্জামান, সেনাবাহিনী ও বিজিবির কর্মকর্তা, রামু থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর, হাইওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আযাদ, রশিদ নগর চেয়ারম্যান এমডি শাহ আলম।
চার জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তুলাতলী হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক আবদুল আওয়াল জানান, ইউনিক পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে আহত হয়েছেন ৩৪ জনেরও অধিক যাত্রী। রোববার (১১ ডিসেম্বর) বেলা দেড়টায় রশিদনগরের পানিরছড়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী বাসটি উল্টে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ও আহতদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এদিকে দুর্ঘটনার সংবাদ প্রাপ্তির সাথে সাথে জিওসি, ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং এরিয়া কমান্ডার কক্সবাজার এরিয়া মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, পিএইচডি এর দিক নির্দেশনায় দ্রুততম সময়ে উদ্ধারকার্যে সহায়তার জন্য সেনা এ্যাম্বুলেন্স, সেনা উদ্ধারযান এবং সেনাসদস্যদের ঘটনাস্থলে প্রেরণ করা হয়। দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে সেনা এ্যাম্বুলেন্স, সেনা উদ্ধারযান, সেনাসদস্যদের পৌছানো এবং উদ্ধারকার্যে সার্বিক সহায়তার জন্য হতাহতের সংখ্যা অনেক কম হয়। উল্লেখ্য যে, কর্নেল স্টাফ, ১০ পদাতিক ডিভিশন কর্নেল মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ, এসপিপি, পিএসসি সরজমিনে উপস্থিত থেকে উদ্ধার কার্যক্রম তদারকি করেন।
পাঠকের মতামত: