ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

মোবাইল অপব্যবহারে মরছে মানুষ, পর্নোতে যুবসমাজ, ভাঙ্গছে সংসার

99ফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার :::
মোবাইল ছাড়া চলে কি মুহূর্ত! আজকের জীবনে মোবাইল হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। জীবনের নানা ঘটনায় ত্বরিত সমাধান এনে দেয় এই ছোট্ট যন্ত্রটি। কিন্তু সেই যন্ত্রের অপব্যবহার মৃত্যু পর্যন্ত ঘটায়। কখনও কখনও তছনছ করে দেয় সাজানো জীবন। গত এক বছরে সারাদেশে রেললাইন ও গাড়ীর চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেছে হাজারো মানুষ। সংখ্যাটি আঁতকে ওঠার মতো। এদের সব কি দুর্ঘটনা কিংবা আত্মহত্যা (?)। সংশ্লিটরা বলছেন না, এদের অনেকেই, মোবাইলে কথা বলতে গিয়ে আনমনা অবস্থায় চলে গেছেন না ফেরার দেশে। বিশেষ করে গাড়ী ও ট্রেন চালকরায় হয়েছেন এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। কক্সবাজার শহরে এই রকম অবস্থায় টমটম ও রিক্সা উল্টিয়ে হতা হত কয়জন তার কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে পঙ্গুর সংখ্যা কম না। শুধু তাই নয়, উঠতি তরুণ-তরুণীরা মোবাইল নামের এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খোশগল্পে মেতে থাকছে। রাতজেগে কথা বলায় স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ও বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ যোগ দিতে পারে না সকালের গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসেও। পরীক্ষায় নেতিবাচক ফল আসায় এদের অনেককে বাধ্য হয়ে একই শ্রেণীতে থেকে যেতে হচ্ছে বছরের পর বছর। দেশ বা দেশের বাইরে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধব সকলের খোঁজখবর নিতে হলে মোবাইলই সব থেকে ভাল মাধ্যম। এর বাইরেও ইন্টারনেটের দুনিয়া এখন চলে এসেছে মুঠোফোনে। চাইলেই দুনিয়াকে খুঁজে পাওয়া যায় অল্প ডিসপ্লেতে। ঘরে-বাইরে, অফিস-আদালতে সর্বত্রই এর ব্যবহার যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে অপব্যবহার। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোবাইল থেকে বের হওয়া রেড্রিফ্রিকোয়েন্সির ফলে ব্রেন টিউমার হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে ওঠে। এমনকি হতে পারে ক্যান্সারও। যন্ত্রটি ব্যবহার করে মাত্রাতিরিক্ত কথা বলার কারণে অস্থিরতা, মনসংযোগ না থাকা, গুরুত্বপূর্ণ কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করতে না পারাসহ নানাবিধ সমস্যার শিকার হচ্ছে মানুষ। খোজনিয়ে জানা গেছে, টেকনাফ উপজেলার অজ পাড়া পল্লী গ্রামের একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্র নিয়মিত মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ফোনে কথা বলা ছাড়ও ইন্টারনেট ব্যবহারেও পারদর্শি ওই শিক্ষার্থী। বাবা – মা -ই তাকে মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছেন বলে জানান তিনি। এই শিক্ষার্থী বলেন তার শ্রেণীতে অনেকেই মোবাইল ফোন সেট ব্যবহার করে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসের বিরতিতে কিংবা টিফিন টাইমে লুকিয়ে লুকিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলে। এদের অনেকেই আবার মোবাইলে খারাপ ছবি ও দেখে এবং অন্যদের দেখতে উৎসাহিত করে। চিত্রটি শুধু টেকনাফ নয়, কক্সবাজারসহ সারাদেশের স্কুল শিক্ষার্থীদের একই অবস্থা। এক সময় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বই পড়তে  পড়তে ঘুমিয়ে পড়তো। এখন তারা মোবাইল টিপতে টিপতে গভির রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। ব্লগ, ফেইসবুক ও টুইটার ব্যবহারের কারণে শিশু- কিশোর – কিশোরী অতরুণদের ধ্যান-জ্ঞান হয়ে পড়ছে মোবাইল। এতে করে মেধা বিকাশের যে বই পড়া অপরিহার্য সেটা ক্রমশই কমে আসছে । দেশের শহর থেকে শুরু করে একে বারেই অজপাড়া গাঁয়েও শিশু-কিশোরদের হাতে থাকে মোবাইল ফোন। এসব শিশু মোবাইলে ছবি তোলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। অভিভাকরা সন্তানের আবদার পূরণের জন্য কোমলমতি এইসব শিশুদের হাতে আতœ বিধ্বংসী এই যন্ত্রটি তুলে দিলেও কেউকি একবার ভাবছেন? এতে সন্তানের লাভের চেয়ে ক্ষতি কত বেশি হচ্ছে। জানাগেছে,  বিশে^র উন্নত দেশগুলোতে ১৮ বছরের কম বয়সীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ। । শিক্ষার্থীদের জীবন মান নিয়ে গবেষণা করেন, এই রকম একটি সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে গ্রামের স্কুল গামী শিক্ষার্থীদের শতকরা ৫৪ ভাগ নিয়মিত পর্ণোগ্রাফি দেখে। সংস্থাটি বলছে, গ্রামের ছেয়ে শহরের এই চিত্র ভয়াবহ। তারা সুস্থ যৌন শিক্ষার বিপরীতে একটি বিকৃত যৌন শিক্ষার মধ্যদিয়ে বেড়ে উঠছে, যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য হুমকি স্বরূপ।

পাঠকের মতামত: