ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করায় এলাকা ছাড়া বাদির পরিবার

imagesনাজিম উদ্দিন, পেকুয়া :::

পেকুয়ায় ইউপি চেয়রম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করায় এলাকা ছাড়া হয়েছে বাদির পরিবার। পাউবোর স্লুইচ গেইটের বিরোধ নিয়ে মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম ও ইউপি সদস্য নুর মুহাম্মদ মাদুসহ স্থানীয় ৫-৭জনের সাথে ওই ইউনিয়নের শরতঘোনা এলাকার মৃত.মো.আলীর ছেলে লিয়াকত আলীর মধ্যে দ্বন্ধ চলছিল। এনিয়ে চলতি বর্ষা মৌসুমে দু’পক্ষের মধ্যে আধিপত্যকে কেন্দ্র করে একাধিকবার উত্তেজনা দেখা দেয়।

গত ঈদ-উল ফিতরের দিন শরতঘোনা এলাকায় ইউপি সদস্য নুর মুহাম্মদ মাদুর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসীরা লিয়াকত আলীর ছেলে তোফাইল আহমদ (২২)কে নির্দয় পিটিয়ে আহত করে। উত্তেজিত লোকজন ওই যুবককে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তার আর্ত চিৎকারে মা ছকিনা বেগম ছেলেকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে। ওই সময় নুর মুহাম্মদ মাদুসহ দুর্বৃত্তরা ছকিনা বেগমকে মারধরসহ করে শ্লীনতাহানি করে। এ সময় স্থানীয়রা মা-ছেলেকে উদ্ধার করে পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এনিয়ে ছকিনা বেগম বাদি হয়ে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত ১০জুলাই একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং-৮৯০/১৬।

মামলায় মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম, ইউপি সদস্য যুবদল নেতা নুর মুহাম্মদ মাদু, শরতঘোনা এলাকার এছার মাঝি, শাহাব উদ্দিন ও মোকতার আহমদকে আসামি করে। মামলার খবর জানা জানি হলে আসামিরা আরো অধিক ক্ষিপ্ত হন। এর জের ধরে গত ২৯জুলাই আসামিরা মামলার বাদি মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মহিলা মেম্বার পদে পরাজিত প্রার্থী ছকিনা বেগমকে সন্ধ্যায় ফের মারধর করে গুরুতর আহত করে। ওই ঘটনায় একই আদালতে ছকিনা বেগম বাদি হয়ে অপর একটি মামলা দায়ের করেন। একই ঘটনা নিয়ে আসামিরা অধিক বেপরোয়া হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে গত ৪০দিন ধরে বাদি ছকিনা বেগম ও তার পরিবার মগনামা ছাড়া হয়েছে।

পাউবোর স্লুইচ গেইটের তদারকি থেকে চাঁদা না দেয়ায় ছকিনা বেগমের স্বামী লিয়াকত আলীকে গত দু’মাস আগে উচ্ছেদ করা হয়েছে। স্লুইচ গেইটকে কেন্দ্র করে শরতঘোনা এলাকায় গত ৪০দিনের ব্যবধানে তৃতীয় দফা ঘটনা সংঘটিত হয়। গত ১৮জুলাই ইউপি সদস্য মাদুর নেতৃত্বে ৬-৭জনের অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা লিয়াকত আলীর বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় তারা লিয়াকত আলীকে ব্যাপক মারধর করে। স্বামীকে বাচাতে গেলে ওই দুর্বৃত্তরা স্ত্রী ছকিনা বেগমকে ফের মারধর করে আহত করে।

ওই ঘটনায় লিয়াকত আলী বাদি হয়ে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে গত ২০জুলাই একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। আদালত দায়েরকৃত এজাহারটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রের্কড করতে পেকুয়া থানা ওসিকে নির্দেশ দেন। এদিকে ১ম ঘটনা পর থেকে বাদি পক্ষ ঘর ছাড়া হয়েছেন। মামলা দায়ের হওয়ায় আসামিরা আরো অধিক হিং¯্র হয়েছেন। একের পর এক হামলা ও নির্যাতন সংঘটিত হওয়ায় বাদি চরম বিচলিত।

এ ব্যাপারে লিয়াকত আলী জানায় আসামিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। চাঁদা না দেয়ায় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আমাকে স্লুইচ গেইট থেকে উচ্ছেদ করে। পানি উন্নয়ন র্বোড রাজস্ব নিয়ে আমাকে তদারকির দায়িত্ব দেন। আমাকে ও আমার পরিবারকে এলাকায় যেতে দেয়া হচ্ছেনা। আমি বিষয়টি ওসি স্যারকে একাধিকবার বলেছি। মুঠোফোনে প্রান নাশের হুমকি দিয়েছে এর রের্কড পুলিশকে দিয়েছি। আদালতের নির্দেশনা থাকা স্বত্তেও পুলিশ আসামিদের ধরছেনা। তারা বীরদর্পে পুলিশের সামনে চলাফেরা করছে। কোন ধরনের ব্যবস্থা না নেয়ায় আসামিরা আরো বেপরোয়া হচ্ছে। আসামিদের সাথে পুলিশের সখ্যতা আছে। এত অনুরোধ করার পরও পুলিশ আসামি ধরছেনা। আসামিদের সাথে আপোষ করতে চাপ প্রয়োগ করছে ওসি।

ছকিনা বেগম জানায় আমাকে একাধিকবার শ্লীনতাহানি ও মারধর করা হয়েছে। মামলা করায় আসামিরা হাকাবকা করছে। বর্তমানে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্রে আশ্রয় নিয়েছি। মাদু মেম্বার একজন খুনি। এর আগে সে নিজের ভাইকে খুন করে। তার বিরুদ্ধে ডাবল মার্ডার, নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা আছে। থানায় গিয়ে ওসির টেবিলে পবিত্র কোরান ছুয়ে চোখের পানি ফেলে আমাদের অভিযোগগুলো বলেছি। ওসি স্যার এরপরও আসামিদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। গরীবের বিচার নেই থানায়। সবকিছু টাকা ওয়ালা ও ক্ষমতাবানদের ইশারায় হয়। আমরা বিচার কোথায় পাব।

পাঠকের মতামত: