ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

স্কুলে যাওয়া ‘স্বপ্ন’ তাদের

ৃৃৃৃৃইমরান হোসাইন.

বয়স ৬ কী ১১, স্কুলে গিয়ে নানা রঙের বই পড়া আর ছড়ায় সহপাঠীদের সঙ্গে হৈ-হুঁল্লোড়ে মেতে থাকার সময়! কিন্তু তিন বেলা এক মুঠো ভাতই যেখানে জুটে না, সেখানে স্কুলে যাওয়া তো এক ধরনের ‘বিলাসিতা’!

 স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন মনের কোণে থাকলেও এখন শুধু শুয়ে-বসে বা খেলাধূলা করেই কাটছে এইসব শিশু, কিশোর-কিশোরীদের সময়। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু তাদের বই-খাতার সাথে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে তাদের ছোট ছোট স্বপ্নগুলোও। গত ২১মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু উপকূলে আঘাত হানলে ঘর-বসতি হারিয়ে পরিবারের সাথে পাশ্ববর্তী কাঁকপাড়া সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নেয় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

 পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কাঁকপাড়া এলাকায় বাবা-মায়েদের সাথে ঠিকে থাকার সংগ্রামে যুদ্ধ করছে মোঃ রিফাত(৯), আসমা বেগম(১০), জমির হোসেন(৮) ও জিয়াবুল করিম(৬)সহ প্রাথমিক পর্যায়ের প্রায় ত্রিশ শিক্ষার্থী। তারা সবাই মগনামা ইউনিয়নের সর্বদক্ষিনে সাগরের কোলঘেষা কাঁকপাড়া গ্রামের শেখ আব্দুল আজিজ চৌধুরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী। বর্তমানে, হেলায়-খেলায় দিন শেষ করছে তারা। কেউ জড়িয়ে পড়ছে হারখাটুনি শ্রমের কাজে। যাদের পরিবার একটু বেশি অসচ্ছল, তাদের ক্ষেত্রে এর প্রবণতা একটু বেশী। আবার, উপার্জনক্ষমদের জীবিকার মাধ্যম সীমিত হয়ে আসায় শিশুশ্রমের মাত্রা বাড়ছে। ক্ষেত্র বিশেষে শিশুদের আয় দিয়েই জ্বলে উনুন, এখন যেন বেঁচে থাকাটাই তাদের কাছে একটা স্বপ্ন।

 সরেজমিনে দেখা যায়, বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝুকি নিয়ে মাছ ধরার কাজ করছে বেশ কয়েকজন শিশু। সাইক্লোন সেন্টারের একটি কক্ষে একসাথে থাকছে একাধিক পরিবার। জনসংখ্যা আধিক্য, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক না থাকা ও বিশুদ্ধ পানির অপ্রতুলতার দরূণ দেখা দিয়েছে অনেক রোগব্যাধি। এছাড়াও সাইক্লোন সেন্টারটি নিজেও রয়েছে ঝুকিতে। বেড়িবাঁধের বিলীন হওয়া অংশ দিয়ে জোয়ার-ভাটা অব্যাহত থাকায় সাইক্লোন সেন্টারটির নিচের মাটি এক-তৃতীয়াংশ সরে গেছে। যে কোনো সময় এটি ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে! এরমধ্যে নেই কোনো ভালো খাবারের ব্যবস্থাও। খাদ্য সংকটেও ভোগছে কয়েকটি পরিবার। এভাবে নিরন্তর ছুটে চলছে তাদের এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন…।

 শিশু রিফাতের ভাষায়, ‘এইবারই পরতম বার তুয়ান দেইক্কি (প্রথম বার তুফান দেখেছি)। ইস্কুলত ত যাইতাম মনে হয়(স্কুলে তো যেতে ইচ্ছে হয়), হিন্তু যাইয়ুম ক্যান গরি(কিন্তু কীভাবে যাব)? খাইতাম ন পারির(খেতে পারছি না),তুয়ানে ত বেইগ্নি বাআই লই গেইয়ই(তুফানে সব ভাসিয়ে নিয়েছে)।’

 শিশু রিফাতের বাবা জালাল উদ্দীন জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র আঘাতে মগনামার সাগরঘেষা ওই এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জ্বলোচ্ছাসে তাদের ভিটে-বাড়ির চিহ্নও রাখেনি। তাই বাধ্য হয়ে পরিবার নিয়ে সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মত ওই স্কুলেও দশটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তাই, ইচ্ছে থাকার সত্ত্বেও শিশুদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না তিনি। তিনি আক্ষেপ করে আরো জানান, ঘূর্ণিঝড় আঘাত করার পরে প্রায় একমাস কেটে গেলেও আমাদের পূর্ণবাসন করা হয়নি। তাদের পূর্ণবাসন করতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি দাবীও জানান তিনি।

 শেখ আব্দুল আজিজ চৌধুরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’য় সৃষ্ট জ্বলোচ্ছাসে স্কুলের বই-খাতা ও প্রয়োজনীয় কাগজ ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। আর ক্ষতিগ্রস্থ কিছু পরিবার স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। তাই এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। উপকূলীয় এই এলাকায় শিক্ষার হার খুবই কম। আর ঝড়ে পড়ার হার বেশী। কোনরকম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকাতে পারলে হলো, পড়ালেখা শেষ। তাই, আমাদের র্টাগেট থাকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর জ্ঞান বাড়ানো এবং তাদের উদ্ভোদ্ধ করা। খুব শীঘ্রই স্কুলে পাঠদান শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: