ঢাকা,শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় আদালতের মামলা তদন্তের নামে

ধর্ষিতা নারীকে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব তদন্ত কর্মকর্তার

কক্সবাজার প্রতিনিধি :
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এক নারীকে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব ও ঘুস দাবির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই পুলিশ কর্মকর্তাসহ দুইজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী এক নারী।

সম্প্রতি এলাকায় এ ঘটনা জানাজানি হলে সর্বত্রে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার নাম মো. শামীম মিয়া। তিনি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজার কার্যালয়ে উপ-পরিদর্শক পদে কর্মরত রয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই নারী ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজারের চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য চকরিয়া-পেকুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দিয়েছেন। মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়াও আসামি করা হয়েছে মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটা এলাকার মৃত রামপদ দের ছেলে উজ্জ্বল কুমারকেও। মামলার বাদী ভুক্তভোগী নারীর (২৮) বাড়ি চকরিয়া পৌরসভার পালাকাটা গ্রামে।

মামলার আবেদনে ভুক্তভোগী নারী দাবি করেছেন, মহেশখালী পৌরসভার গোরকঘাটা এলাকার উজ্জ্বল কুমার নামের এক যুবক প্রলোভনে ফেলে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ করায় তিনি বাদী হয়ে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ ২০২২ সালের ২২ এপ্রিল একটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা তদন্তসাপেক্ষে প্রমাণিত হয় এবং মামলাটি বর্তমানে একই আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

এরপর আসামি উজ্জ্বল কুমার গত বছরের ২৬ জুন চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হয়রানির উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলা দায়ের করেন। উজ্জ্বল কুমারের দায়েরকৃত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম মিয়াকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মামলার আবেদনে ভুক্তভোগী নারী আরও উল্লেখ করেছেন, মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে পুলিশের এসআই শামীম মিয়া মামলা তদন্তকালীন তার সঙ্গে শারীরিকভাবে মেলামেশার প্রস্তাব দেন এবং এক লাখ টাকা ঘুস দাবি করেন।

পিবিআইয়ের পুলিশ ওই কর্মকর্তা ২০২২ সালের ৯ আগস্ট কক্সবাজারে অজ্ঞাত বাসায় তাকে ডেকে নিয়ে যায় এবং তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঘুস দাবি করেন এবং অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন। তার দাবি মতে ঘুসের টাকা না দিলে মামলার প্রতিবেদন বিরুদ্ধে দেওয়ার হুমকি দেয় ওই পুলিশ কর্মকর্তা। ওই পুলিশ কর্মকর্তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিগত ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল ভুক্তভোগী নারীকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন এসআই শামীম মিয়া।

এরপর গত ৩ নভেম্বর ভোর অনুমান ৪টা ৪১ মিনিটে ভুক্তভোগী নারীর ইমো নাম্বারে ভিডিও কল দেয় পুলিশ কর্মকর্তা শামীম মিয়া। এরপর পুলিশ কর্মকর্তা উক্ত নারীর ইমো নাম্বারে ‘কেমন আছো, আসো আমার পাশে, আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দাও আমাকে আদর দাও, কেন দেবা না তোমার মনে চায় না, তাহলে আসো আমার বুকে আসো তোমার সঙ্গে সেক্স করব, কেন রাগ করেছ বল, ভিডিও কল দিয়ে তোমার দুধগুলো দেখাও আমার ভালো লাগবে আমার ঘুম আসতেছে না; এই মুহূর্তে আমার দরকার’ এসব আপত্তিকর খুদে বার্তা প্রেরণ করেন।

উক্ত খুদে বার্তার বিপরীতে মামলার বাদী ভুক্তভোগী নারী লিখেন- ‘আপনি আমার বিপক্ষে মিথ্যা মামলার আসামি বানাইছেন, এতে আমার মানহানি হয়েছে’ বলে রিপ্লাই দেন। এরপর পুলিশের ওই কর্মকর্তা পুনরায় ওই নারীকে ইমোর মেসেনজারে লিখেন- ‘তোমাকে অনেক সুযোগ দিয়েছি তুমি আমাকে বলনি কেন, কেন বোঝ না তুমি জানো না শামীম ভাই কক্সবাজারে ব্যাচেলর থাকত, শামীম ভাইয়ের কি মন নাই’ মর্মে আরও বিভিন্ন অশ্লীল বার্তা প্রেরণ করেন। এভাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য সংবলিত খুদে বার্তা ওই নারীর ইমো নম্বরে মেসেনজারে প্রেরণ করে।

ভুক্তভোগী নারী বলেন, ধর্ষণ মামলার আসামি উজ্জ্বল কুমারের সঙ্গে যোগসাজশ করে পুলিশ কর্মকর্তা শামীম মিয়ার তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে না পেরে ও দাবিকৃত এক লাখ টাকা ঘুস না পেয়ে আদালতে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এরপর ইমো নাম্বারে অশ্লীল বার্তা পাঠিয়ে তার জীবন বিষিয়ে তুলেছেন। তিনি এ ঘটনায় ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিচার দাবি করেছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম বলেন, ওই নারীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। মামলা তদন্তে করতে গিয়ে ওই নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেই। এরপর বিভিন্ন সময় ওই নারীর ইমো নাম্বারে কথা হয় তার সঙ্গে। বিভিন্ন সময় গভীর রাতেও ওই নারীর সঙ্গে মেসেনজারে তার কথা হয়েছে। মেসেনজারে ভুলবশত ওই নারীর সঙ্গে তার কিছু অশ্লীল বাক্য বিনিময় হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তা শামীম মিয়া স্বীকার করেন।

এ সময় তিনি তার বিরুদ্ধে নিউজ না করার অনুরোধ করেন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, ৬ মাস পূর্বে এসআই শামীম কক্সবাজার পিবিআই থেকে বদলি হয়ে নোয়াখালী জেলার পিবিআই অফিসে যোগদান করেছেন। তিনি ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানেন না।

ভুক্তভোগী নারীর দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চকরিয়া-পেকুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রকিব উর রাজা বলেন, নির্বাচনের কারণে মামলার আসামিদের নোটিশ দিয়ে ডাকা হয়নি। দুয়েক দিনের মধ্যে তার কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য মামলার আসামিদের ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো হবে।

পাঠকের মতামত: