ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়া বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেই চলছে সেই শাবকটির চিকিৎসা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

চট্রগ্রামের বাঁশখালী পাহাড়ের চূড়া থেকে খাদে পড়ে আহত বন্য হাতির শাবকটিকে সুস্থ করে তোলার জন্য প্রেরণ করা হয় চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। এখানে হস্তাস্তরের পর থেকে শাবকটি তেমন খাবারও (ল্যাকটোজেন–১ দুধ) খাচ্ছিল না। অনেক চেষ্টার পর একটু একটু দুধ গ্রহণ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল অপ্রতুল। এতে হাতিটিকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কায় রয়েছেন পার্ক কর্তৃপক্ষ।

অবশ্য উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য পার্কে প্রেরণের চারদিন পর গতকাল সোমবার সকালে প্রথমবারের মতো মল ত্যাগসহ প্রশ্রাবও করেছে। এতে একটু করে হলেও আশার সঞ্চার করেছে সেবায় নিয়োজিত বন্য প্রাণি চিকিৎসকসহ যত্ন–আত্তিতে নিয়োজিতদের। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং বন্য প্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, পার্কে প্রেরিত হাতি শাবকটির বয়স আনুমানিক দেড় মাস। জন্মের চার বছর পর্যন্ত হাতি শাবক মায়ের দুধ খেয়ে বেড়ে উঠে। এর পর বাহ্যিক খাবারে অভ্যস্ত হয়। কিন্তু হাতি শাবকটিকে এখানে প্রেরণের পর থেকে পরিমাণ মতো দুধও খাচ্ছিল না। এর পরও বোতলে ভরে প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর ল্যাকটোজেন–১ খাওয়ানো শুরু করা হয়।

ডিএফও রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, শাবকটি এতই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, ভালো মতো দুধও খাচ্ছে না। এর পরও অনেক চেষ্টার পর একটু একটু করে তরল দুধ খাওয়ানো হয়। সাথে ভিটামিন জাতীয় ওষুধও খাওয়ানো হচ্ছে। আশা করছি, শাবকটিকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে। তবে তা একেবারেই নির্ভর করছে শাবকটি ভাগ্যের ওপর।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, হাতি শাবকটিকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এজন্য বন্য প্রাণি চিকিৎসক এবং দুইজন কর্মচারীকে নিয়োজিত রাখা হয়েছে। বর্তমানে শাবকটি পার্কের বন্য প্রাণি হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেডে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদানসহ যত্ন–আত্তি করা হচ্ছে। যাতে মানুষের সংষ্পর্শে আসা এই শাবকটি সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠতে পারে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে সৃষ্টিকর্তার ওপর।’

চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বন্য প্রাণি চিকিৎসক (ভেটেরিনারি সার্জন) হাতেম সাজ্জাদ জুলকার নাইন এর বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেন নি। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

শাবকটি সুস্থ হলেই আছে চমক : পার্ক প্রধান রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, দেড় মাস বয়সী এই হাতি শাবকটি পুরুষ। তাই এই শাবকটিকে সুস্থ ও বড় করে তোলাই হচ্ছে চ্যালেঞ্জ। এটির নাম দেওয়া হবে ‘পদ্মা’। এটিকে যদি বড় করে তোলা যায়, তাহলে সঙ্গী হিসেবে দেওয়া হবে পার্কে থাকা ২ বছর ১১ মাস বয়সের স্ত্রী লিঙ্গের ‘যমুনা’কে। এই শাবকটিকেও পার্কে প্রেরণ করা হয়েছিল টেকনাফের ন্যাচার পার্ক এলাকা থেকে। জন্মের মাত্র তিন মাস বয়সেই পাহাড়ের চূড়া থেকে পড়ে একই দশায় নিমজ্জিত হয় বাঁশখালীর শাবকটির মতোই।

টেকনাফ থেকে বিজিবি কর্তৃক উদ্ধারের পর শাবকটিকে বেশ আহত অবস্থায় প্রেরণ করা হয় সাফারি পার্কে। এখানে আনার পর থেকে শাবকটিকে অনেকদিন ধরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ সেবা–শশ্রুষা দিয়ে বড় করে তোলা হয়। শাবকটিকে দূর থেকে ‘যমুনা’ বলে ডাক দিলেই দৌঁড়ে মাহুতের কাছে চলে আসতে দেখা যায়।

 

পাঠকের মতামত: