ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ত্রাণ চাইনা! পরিত্রাণ চাই !

চার ইউনিয়নে নিয়মিত ঢুকছে জোয়ারের পানি

Pekua Pic 26-06-16  (6)ইমরান হোসাইন, পেকুয়া :::

পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের বকশীঘোনা গ্রামের আজাহার উদ্দিন। ছয় জনের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। লবণ চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। কিন্তু বানের পানি মাঠের লবণের সাথে বাসিয়ে নিয়ে যায় তার ভাগ্য। তারপরেও ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু বেড়ীবাঁধের ভাঙ্গা অংশসমূহ দিয়ে নিয়মিত জোয়ারের পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকার তার ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হতাশকন্ঠে তিনি জানান, এভাবে আর কয়দিন কাটাবো ? কিছুদিন পরে হয়তো পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে। তার সাথে সহমত পোষণ করে একই কথা জানান স্থানীয় অনেক লবণ চাষী ও মৎস চাষী। তারা বলেন, আমরা যাতে আবারো ভিটের ওপর বসতবাড়ি নির্মাণ করতে পারি সেজন্য সরকারের সহযোগিতা দরকার। তারা সাগরে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধ টেকসইভাবে নির্মাণেরও জোর দাবি জানান।

মগনামা ইউনিয়নের শরৎঘোনা গ্রামের কৃষক কাইছার উদ্দিন, নবী হোসেনও জানান একই কথা, তারাও সঠিক সময়ে চাষাবাদ করতে পারছেন না। পরিবার নিয়ে কিছুদিন পরে তারা খাবেন কি। তারা ক্ষোভের সাথে জানান, আমরা তো এতদিন ত্রাণের চাল খেয়ে দিনানিপাত করিনি। তার সাথে কন্ঠ মিলিয়ে উপস্থিত বেশ কয়েক স্থানীয় কৃষক বলেন, আমাদের ত্রাণের প্রয়োজন নাই, আমাদের এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা করুন। আমরা আবার ঘুরে দাড়াতে চাই। আমাদের জীবিকা আমরাই নির্বাহ করতে চাই। আমাদের ত্রাণের চাইতে পরিত্রাণই জরুরী।

প্রসঙ্গত, গত ২১মে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র বিরূপ প্রভাবে সাগরের পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে জলোচ্ছ্বাসের প্রচন্ড ধাক্কায় উপজেলার উপকূলবর্তী তিন ইউনিয়নসহ পেকুয়া সদর ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) নিয়ন্ত্রিত বেড়িবাঁধের বিপুল অংশ বিলীন হয়ে যায়। বিলীন হওয়া অংশ দিয়ে সাগরের লোনা পানি জোয়ার-ভাটা সাথে সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করছে বিগত দশ দিন ধরে। এতে, উপজেলার উজানটিয়া, মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়ন প্লাবিত হচ্ছে নিয়মিত।

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে সৃষ্ট প্লাবনের পানি কমে গেলেও এসব ইউনিয়নে বেড়ীবাঁধের অন্ত্যত ৩০টি ছোট-বড় ক্ষতিগ্রস্থ বেড়ীবাঁধে অংশ দিয়ে জোয়ারভাটা অব্যাহত রয়েছে। দীর্ঘ দশ দিন ধরে পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে গেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ ও সংস্কারের কোন উদ্যোগ দৃশ্যত হয়নি। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ এইসব বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কার করা না হলে মৎস ঘের, চাষাবাদ বা বীজতলা তৈরী করা সম্ভব না। তাই এসব এলাকার উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা কাটাচ্ছেন অলস সময়। সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্টান ও ব্যক্তির দেয়া ত্রাণে তারা কয়দিন খাবে ? কয়দিনই বা ত্রাণ দিবে সরকার ? এমন প্রশ্ন ক্ষতিগ্রস্থদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৩মে চকরিয়া-পেকুয়া(কক্সবাজার-১) আসনের সাংসদ মোহাম্মদ ইলিয়াছ, পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুর রশিদ খাঁন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু, মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। কিন্তু বেড়িবাঁধ সংস্কারে দৃশ্যত কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি।

পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু বলেন, দ্রুত বেড়িবাধের সংস্কার করা না হলে দূর্গত এসব ইউনিয়নে চাষাবাদ অনিশ্চিত।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুর রশিদ খাঁন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ব্যাপক ভাঙ্গন হলেও গত দশ দিনের মধ্যে তাদের কেউ কোন প্রদক্ষেপ নেয়নি। তবে, এ পরিস্থিতি সমাধানে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: