নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
চারদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ। জঙ্গলঘেরা গর্জন বাগানের ভেতর একটি হাসপাতাল। সেখানে মানুষ নয়, প্রাণীদের চিকিৎসা করা হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ‘যমুনা’ এক হাতিশাবকের। জন্মের চার মাস পর মা হারিয়ে যমুনার ঠাঁই হয় সাফারি পার্কে। প্রায় ২৩ মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসার সঙ্গে বড় হচ্ছে যমুনা।
হাসপাতালটি কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারায়। ২ হাজার ২৫০ একর বনাঞ্চলে গড়ে তোলা দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণীদের জন্য নির্মিত ওই হাসপাতালটি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১০ মার্চ টেকনাফের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর থেকে চার মাস বয়সী হাতিশাবকটি উদ্ধার করে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ। এর আগে পাহাড় থেকে ঢালুতে পড়ে মা হাতিটি মারা গিয়েছিল। একা শাবকটি বনবিভাগের কর্মীরা জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে লালন-পালনের জন্য সাফারি পার্কে পাঠায়। এরপর শাবকটির চিকিৎসা করে প্রাণী হাসপাতালের একটি কক্ষে যমুনাকে রাখা হয়েছে।
বীর সেন চাকমা নামের ওই হাতি শাবকের মাহুত বলেন, ‘আমার বয়স ২১-২২ হবে তখন থেকেই বন্য হাতি লালন-পালন করে আসছি। ১৯৮৬ সাল থেকে অনেক হাতিকে পোষ মানিয়েছি। কিন্তু অন্যদের চেয়ে যমুনার আচরণ আলাদা। মাত্র চার মাস বয়সে ওর মা মারা যায়। এ কারণে প্রাণীটি আদর-স্নেহ পায়নি। পার্কের বন্যপ্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টিন সেন্টারে ২৩ মাস ধরে যমুনাকে মায়া-মমতা দিয়ে বড় করছি।’
বীর সেন চাকমা বলেন, ‘যমুনা মানুষ দেখলেই লাফালাফি করে, মানুষের আদর পেতে চায়। সাধারণ দর্শনার্থী এখানে প্রবেশ নিষেধ আছে। তবুও অনেকে ছবি তোলেন। রোজ খাবারের পাশাপাশি খেলাধুলা ও ব্যায়াম করানো হয়। তারপর ৩০-৪০ মিনিট হাঁটানো ও প্রতিদিন একবার গোসল করানো হয়।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘যমুনার বয়স এখন ২৭ মাস। পার্কের শেডেই আছে ২৩ মাস ধরে। হাতিশাবকটি যখন পার্কে আনা হয়, তখন মুখমণ্ডল ও পায়ে কিছু অংশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। শাবকটি আনার সময় ওজন ছিল ১২১ কেজি, বর্তমান ওজন ৭০০ কেজি। প্রতিদিন দুই কেজি ল্যাকটোজেন দুধ, ১০০টি কলা, ১০ কেজি সবজি ও পরিমাণ মত কলাগাছ খাওয়ানো হচ্ছে। এখন দ্রুত শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পার্কে আরও চারটি হাতি থাকলেও যমুনাকে আলাদা রাখা হয়েছে।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মা ছাড়া হাতিশাবক বড় করা কষ্টসাধ্য। পার্কের হাসপাতালে সফলভাবে অসুস্থ হাতিশাবকটি সুস্থ করে তুলেছে। মানুষের আনাগোনা পেলে যমুনা দৌড়াদৌড়ি ও খেলতে পছন্দ করে। খুব ছোট থেকে মানুষের মায়া-মমতায় বড় হওয়ায় শাবকটি মানুষের মায়ায় পড়ে গেছে।’
২০০১ সালের ১৯ জানুয়ারি দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮০ সালে এটি ছিল হরিণ প্রজননকেন্দ্র। বর্তমানে পার্কের বিভিন্ন বেষ্টনীতে বাঘ, সিংহ, জেব্রা, ওয়াইল্ড বিস্ট, জলহস্তী, ময়ূর, কুমির, হাতি, ভালুক, হরিণ, লামচিতা, শকুন, অজগর, কচ্ছপ, রাজধনেশ, কাকধনেশ, ইগল, সাদা বক, রঙ্গিলা বক, সারস, মথুরা, নিশিবক, কানিবক, বন গরুসহ ৫২ প্রজাতির ৩৪১টি প্রাণী আবদ্ধ অবস্থায় আছে।
পাঠকের মতামত: