ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত আইন শৃংখলা বাহিনী দেওয়ার দাবী

 wwwwওমর ফারুক ইমরান, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :::

ফলিয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের একটি ভোট কেন্দ্র। রোহিঙ্গা অধ্যূষিত এই কেন্দ্রটিতে প্রায় তিন হাজার দুইশত ভোটার রয়েছেন। সব নির্বাচনেই এই কেন্দ্রটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

এই কেন্দ্রটিই কেন প্রতিবার ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকায় থাকে তা নিয়ে যে কারো প্রশ্ন উঠতে পারে। তাদের জন্য ওই এলাকার অধিবাসীদের সাধারণ উত্তর হলো, এই কেন্দ্রের মাত্র পাঁচশ গজের মধ্যেই উখিয়া-টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির শ্বশুর বাড়ি। এই বাড়িতে থাকেন রাজাপালং ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও এবারও আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। আর এই কেন্দ্রে স্বাধীনতার পর থেকে এযাবৎ সাধারণ ভোটাররা স্বাভাবিক ভাবে ভোট দিতে পারেননি। বিশেষ করে এই কেন্দ্রের ভোটার মৌলভী পাড়ার ৪ শতাধিক ভোটার কখনোই ভোট দিতে পারেননি। কেউ যদি ভোট দিতে যান তাহলে ওই ভোটার মারধর ও হামলার শিকার হন! এলাকাবাসিদের মতে, এই কেন্দ্রের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়টি হলো, যারা মারা গেছেন এবং যারা প্রবাসে রয়েছেন তাদের ভোটও এই কেন্দ্রে আদায় হয়ে যায়। এটিও প্রতি নির্বাচনেরই চিত্র।

এমন ভাবে ফলিয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রতিবারের মতো এবারও এই ইউনিয়নের পাতাবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (৯নং ওয়ার্ড) ও কুতুপালং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (৯নং ওয়ার্ড), দরগাহ বিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮নং ওয়ার্ড) ও উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (৫নং ওয়ার্ড) ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটি আবার আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

রাজাপালং ইউনিয়নের একাধিক এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটি উখিয়া স্টেশনের সাথেই লাগোয়া। এই কেন্দ্রের বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৫ হাজারের অধিক। এই অধিক ভোটারের কারণেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন গুলোতে দুইটি কেন্দ্র করে এই ভোট আদায় করা হতো। ওই সময় উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশাপাশি পশ্চিম সিকদারবিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুইভাগ করে ভোটগ্রহণ করা হয়। অতিতের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও দুইটি কেন্দ্রই ছিল। কিন্তু এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সেই পদ্ধতিতে না গিয়ে উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেই ৫ হাজার মানুষের ভোটগ্রহণের ‘অপচেষ্টা’ করা হচ্ছে।

সাধারণ ভোটারের মতে, এটি ভোট কারচুপি করারই চক্রান্ত। সরকারি দল ও প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে ভোট ‘ডাকাতি’ করার প্রস্তুতি বলেই সাধারণ মানুষের অভিমত। অতিঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ফলিয়াপাড়া সম্পর্কে ফলিয়া পাড়ার ভোটার মুফিজ আলম, একই এলাকার মনজুর আলম ও রুহুল আমিন বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে কখনোই এই কেন্দ্রে সুষ্ঠ ভোট হয়নি। প্রতিবারই ভোট কারচুপি করে ৯৮ থেকে ৯৯ শতাংশ ভোট কাষ্ট দেখানো হয়েছে। অথচ সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে আসলেও এই কেন্দ্র গোপন কক্ষে গিয়ে ভোট দিতে পারেন না তারা। প্রকাশ্যে টেবিলেই ভোট দিতে হয়েছে প্রতিবারই।

তাদের মতে, ওই এলাকার মৌলভী পাড়ায় ৪ শতাধিক ভোটার রয়েছেন। তারা কখনোই ভোট দিতে পারেননি। যদিও প্রতিবারই তাদের ভোট কাষ্ট হয়ে গেছে! রুহুল আমিন বলেন, ‘ফলিয়াপাড়ার ভোটাররা কেন্দ্রে এলেই তাদের মারধর করা হয়। নয়তো ব্যালট কেড়ে নিয়ে প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়। ফলিয়াপাড়ার ভোটার ছুরত আলম ও মাছকারিয়ার নুরুল ইসলাম জানান, তারা এখন থেকে ভোটাধিকার ফিরে পেতে চান। প্রবাসে থাকা ও মৃত ব্যক্তিদের ভোট আদায়ের রেকর্ড আর তারা দেখতে চান না। তারা বলেন, ‘অতীতে এই কেন্দ্রে মৃত ও প্রবাসি ভোটারদের ভোট কাষ্ট করে ৯৮-৯৯ শতাংশ ভোট কাষ্টিং দেখানো হয়েছে।

উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভোটার দাবি করেন, উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে যতই বুথ বাড়িয়ে ভোটগ্রহণের চেষ্টা করা হলেও তা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। এই কেন্দ্রটি স্টেশনের কাছে হওয়ায় এবং একটি মাত্র কেন্দ্রে ৫ হাজারের অধিক ভোট হওয়ায় ওই এলাকায় দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না। তাদের প্রশ্ন, যেখানে দাঁড়ানোরও জায়গা হবে না সেখানে ভোট আদায় হবে কিভাবে? রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, রাজাপালং ইউনিয়নে ১৩টি কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্র যাচাই করে ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে।

তিনি জানান, কোন কেন্দ্রে ভোট বেশি হলেও এই মুহুর্তে কিছু করার নেই। তবে ভোট যাতে সুষ্টু ভাবে নেয়া যায় সে বিষয়ে চেষ্টার ক্রুটি হবে না। তবে ফলিয়াপাড়া কেন্দ্র সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি টেকনাফ উপজেলার এই নির্বাচন কর্মকর্তা, যাকে রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

#############################

 উখিয়া রাজাপালং ইউপি নির্বাচনে ২ চৌধুরী পরিবারের মর্যাদার লড়াই

ওমর ফারুক ইমরান, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :::

উখিয়ার সদর প্রাণ কেন্দ্র রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীর্ষ মার্কার দু’রাজনৈতিক চৌধুরী পরিবারের মধ্যে ভোটযুদ্ধ তুমুল হয়ে উঠেছে। এবারের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন, এমপি আবদুর রহমান বদির শ্যালক বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর কনিষ্ট ছেলে তারেক মাহমুদ রাজিব হয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থী। নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগ দু’প্রার্থী সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে। ভোটারদের ধারনা নৌকা-ধানের শীষের মধ্যে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হবে।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, রাজাপালং ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ৩৪ হাজার ৬ শ ৩৪জন। এ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী হচ্ছে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ও বিএনপির একক প্রার্থী হচ্ছে তারেক মাহমুদ রাজিব। তবে বিএনপির প্রার্থী তারেক মাহমুদ রাজিব একে বারে নবাগত ও উদয়মান যুবক হওয়ায় তার প্রচার প্রচারণায় ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বিশেষ করে সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর কনিষ্ট ছেলে রাজিবের নির্বাচনী গণসংযোগ ও ভোটারদের সমর্থন চোখে পড়ার মত। তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন, প্রার্থী রাজিবের পিতা সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী মেজ চাচা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, সেজ চাচা সাবেক চেয়ারম্যান শাহ কামাল চৌধুরী ও ছোট চাচা বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী।

অপরদিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম নুরুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ ঠান্ডা মিয়ার কনিষ্ট ছেলে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী পুনরায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছে। সাধারণ ভোটারদের অভিমত দু’রাজনৈতিক চৌধুরী পরিবারের মধ্যে সমানে সমানে লড়াই হচ্ছে। আগামী ৪ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে শেষ হাসি কে হাসবে।

##########################

উখিয়ায় ৪৯টি কেন্দ্রে এক হাজার ৩ জন নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ

ওমর ফারুক ইমরান, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :::

৪ জুন উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা এ উপজেলার ৪৯টি কেন্দ্রের জন্য এক হাজার ৩ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন। তন্মধ্যে প্রিজাইডিং অফিসার ৪৯ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ৩১৮ ও পোলিং অফিসার ৬৩৬ জন। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পোলিং অফিসারদের নিয়ে পৃথক দুটি সেমিনারে জেলা নির্বাচন অফিসার আসন্ন ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

জানা গেছে, এ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ২৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ২৪৬ জন সাধারণ সদস্য প্রার্থী ও ৬৭ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই তাদের স্ব স্ব এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক লক্ষ ১৮ হাজার ভোটার অধ্যুষিত জনপদ এ উপজেলায় আগামী ৪ জুন অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচন যাতে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয় নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদানকালে জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ মোজাম্মেল হোসেন জানান, কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়ভার বহন করতে হবে। এর আগে তিনি ভোটকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় ব্যালট পেপারসহ যাবতীয় মালামাল উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে সংগ্রহ করার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন এবং যথাসময়ে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক ভোটগ্রহণ এবং সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, নির্বাচনী নীতিমালা অনুযায়ী প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাদের সারাদিন ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং পোলিং অফিসারদের দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে ভোট সম্পন্ন করতে হবে।

সেমিনারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, কোনো অবস্থাতেই ভোটকেন্দ্রে ভোট জালিয়াতি, ব্যালট ছিনতাই ও প্রভাব বিস্তার এসব চলবে না। যদি কোনো প্রকার ব্যালট অপব্যবহার বা প্রভাবিত হয়ে ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে, তাহলে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিংদের দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। এখানে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাবিবুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট সম্পন্ন করার জন্য পুলিশ প্রশাসন সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন চলাকালে কে আপনাকে পর এ নিয়ে চিন্তা করার কোনো অবকাশ নাই। সব প্রার্থীকে সমান অধিকার এবং তাদের প্রয়োজনীয় সময়ে পুলিশ সহায়তা প্রদান করতে বাধ্য থাকবে।

পাঠকের মতামত: