ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় এমপির পিএসের বিরুদ্ধে ‘অস্তিত্ববিহীন’ প্রকল্পের নাম ভাঙ্গিয়ে সরকারী খাদ্যশষ্য লোপাটের অভিযোগ

lutpatপেকুয়া প্রতিনিধি :::

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া ও পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা হাজী মুহাম্মদ ইলিয়াছ এমপির পিএস আবদুর রহমান রোহানের বিরুদ্ধে অস্তিত্ববিহীন প্রকল্পের নাশে বিপুল পরিমাণ সরকারী খাদ্য শষ্য লোপাটের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোদ এমপির পিএস কর্তৃক এমন লুটপাটের বিষয়টি সম্প্রতি এলাকায় চাউর হয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

 জানা গেছে, জাতীয় পার্টির নেতা হাজী মুহাম্মদ ইলিয়াছ গত বারে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পান বারবাকিয়া ইউনিয়নের বারাইয়াকাটা গ্রামের ছমি উদ্দিনের পুত্র ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সমাজ নেতা আবদুর রহমান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাজী মুহাম্মদ ইলিয়াছ এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার সংসদীয় আসনের পেকুয়া উপজেলার জন্য প্রতি অর্থ বৎসরে টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের অনুকূলে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে আসছে।

 কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, এমপির অগোচরে তার পিএস রোহান বিভিন্ন সময়ে টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পে অস্তিত্ববিহীন নাম সর্বস্ব ভূঁয়া প্রকল্প অন্তর্ভূক্ত করে সরকারী বিপুল পরিমান খাদ্য শষ্য অব্যাহতভাবে লুটপাট করে যাচ্ছে। সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে এমপির পিএসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভূঁয়া প্রকল্পের নামে খাদ্য শষ্য লুটপাটের বিষয়টির সত্যতাও মিলেছে।

 পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য ২০১৫-১৬ অর্থ বৎসরের ১ম পর্যায়ে গত ১১/১১/১৫ ইং তারিখে টিআর প্রকল্পের আওতায় বারবাকিয়া ইউনিয়নের বারাইয়াকাটা ফোরকানিয়া মাদ্রাসার উন্নয়নের নামে ২ চাল। যার প্রকল্প নং ১৬ (খ)। বারাইয়াকাটা হোছন আলী রাস্তা মাটি দ্বারা উন্নয়ন ২ টন চাল। যার প্রকল্প নং ১৭। বারাইয়াকাটা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে মাটি দ্বারা উন্নয়ন ২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। যার প্রকল্প ১৮। গত বছরের ডিসেম্বরে এমপির পিএস আবদুর রোহান তার নিজস্ব কথিত কিছু লোককে প্রকল্প কমিটির সদস্য করে পেকুয়া পিআইও অফিসে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি জমা দিয়ে ডিও নেন। পরে চকরিয়া খাদ্য খাদ্য গুদাম থেকে ওই ৬ টন চাল উত্তোলন কালোবাজারীদের কাছে বিক্রি করে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়।

 গত কয়েক দিন পূর্বে বারাইয়াকাটা গ্রামে সরেজমিনে পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই তিন প্রকল্পের ব্যাপারে তারা কিছুই জানেনা। বারাইয়াকাটা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানেও কোন ধরনের মাটি ভরাট করা হয়নি। বারাইয়াকাটা ফোরকানিয়া মাদ্রাসায়ও কোন ধরনের উন্নয়ন করেনি। বারাইয়াকাটা কথিত হোছন আলী রাস্তার নামে ২ টন চাল উত্তোলন করা হলেও কোন ধরনের উন্নয়ন তো দূরের কথা ওই প্রকল্পের অস্তিত্বের খোঁজও পাওয়া যায়নি। এছাড়াও

IMG_20160524_203046 একই অর্থ বছরে শিলখালী ইউনিয়নে হেদায়াতাবাদ গ্রামের ময়ূর স্মৃতি রাস্তা মেরামতের নামে ২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। গতকাল ২৪ মে বিকালে শিলখালীর ওই গ্রামে গিয়ে ময়ূর স্মৃতি সড়কের কোন ধরনের অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি। এমপির পিএস রোহান তার এলাকার জনৈক আবুল বশরকে প্রকল্প চেয়ারম্যান করে পিআইও অফিসে একটি কমিটি জমা দিয়ে ২টন চাল উত্তোলন করে করে বরাদ্দের সমুদয় অর্থ লোপাট করা হয়েছে। এছাড়াও এমপির পিএসের বিরুদ্ধে আরো বহু নামে বেনামে নামসর্বস্ব ভূঁয়া প্রকল্প দেখিয়ে সরকারী খাদ্য শষ্য লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরের ২য় পর্যায়ে নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক গ্রামীণ অবকাটামো সংস্কার কর্মসূচীর আওতায় নগদ টাকা কাবিটার আওতায় স্থানীয় সংসদ সদস্য বারবাকিয়া ইউনিয়নের বারাইয়াকা গ্রামে ৫টি নাম সর্বস্ব প্রকল্পের অনূকূলে ২লাখ ৭১হাজার ৭৭টাকা বরাদ্দ দেয়। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বারাইয়াকাটা জামে মসজিদ সংস্কার, বারাইয়াকাটা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা সংস্কার, বারাইয়াকাটা রোকেয়া স্মরনী, বারাইয়াকাটা হাজী রোস্তম আলী রাস্তা সংস্কার, বোধা মাঝির ঘোনা হইতে আসহাব মিয়ার রাস্তা নির্মান। সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বারাইকাটা জামে মসজিদ ব্যতিত অন্য চারটি প্রকল্প ভূঁয়া ও নাম সর্বস্ব। এর মধ্যে বারাইয়াকাটা রোস্তম আলী রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রকল্পে অন্তভূক্ত করা হলেও সেটি হচ্ছে এমপির পিএস আবদুর রহমানের বাড়ীর চলাচলের রাস্তা! রোকেয়া স্মরণীর নামে গ্র“ফ ভিত্তিক বরাদ্দ দেওয়া হলেও এ প্রকল্পের কোন ধরনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বোধা মাঝির ঘোনা হইতে আসহাব মিয়ার রাস্তারও অস্তিত্বের খোঁজ মিলেনি। এছাড়ও বারাইয়াকাটা ফোরকানিয়া মাদ্রাসার নামে একই অর্থ বৎসরের ১ম পর্যায়ে ২ টন চাল বরাদ্দ নিয়েও এমপির পিএস রোহান বরাদ্দের অনুকূলে কোন কাজ করেনি। এরপরেও ২য় পর্যায়ের টিআর প্রকল্পেও এ ফোরকানিয়া মাদ্রাসার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

 পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ ৫ প্রকল্পের প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে এমপির পিএস আবদুর রহমান রোহানের বড় ভাই আবুল কালাম ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কথিত কমিটি পেকুয়ার পিআইও অফিসে জমা দিয়েছেন। এ প্রকল্প কমিটিতে রোহানের ভাই ইউসুফ জামালও রয়েছেন।

 জানা গেছে, উক্ত ৫ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দের ১ম কিস্তি হিসেবে এক লাখ টাকা গতকাল প্রকল্প চেয়ারম্যান উত্তোলনও করে নিয়েছেন।

 অভিযোগের ব্যাপারে জানার জন্য এমপির পিএস আবদুর রহমান রোহানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে বেশ কয়েকবার বক্তব্য নেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

 পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ জানান, কোন প্রকল্প অনিয়ম হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত: