ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

ত্রান নয় পরিত্রান চাই প্রতিশ্রুতি নয় বাস্তবায়ন চাই -পেকুয়ার দূর্গত মানুষ

এফ এম সুমন, পেকুয়া :::
ত্রান চাননা পেকুয়ার দূর্গত মানুষ ।চান টেকসই বেড়িবাঁধ ।জনপ্রতিনিধিদের আশার বানী মানুষের কাছে যে হতাশায় পরিনত হয়েছে ।শুকনো মৌসুমে বেড়িবাঁধ সংস্কার না করায় এই বছরেও জোয়ার ভাটার সাথী হতে হয়েছে পেকুয়ার চার ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হার মানুষকে।তার উপর যোগ হয়েছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু।যার ফলে পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন,উজানটিয়া,রাজাখালী ও মগনামার মানুষ এখন জোয়ার ভাটায় ভাসছেন। এতে প্রায় ৫০হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।ফলে নজিরবিহীন দূর্ভোগ দেখা দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানো বিরূপ প্রভাবে ও পূর্ণিমার ভরা তীথিতে সাগরে আকস্মিকভাবে পানি বৃদ্ধি পায়। জোয়ারের প্রচন্ড পানির ধাক্কায় উপজেলার উপকূলবর্তী ৩ ইউনিয়নসহ পেকুয়া সদর ইউনিয়নে কক্সবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রিত বেড়িবাধের বিপুল অংশ বিলীন হয়ে যায়। বিলীন হওয়া অংশ দিয়ে সাগরের লোনা পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে করে উপজেলার উজানটিয়া, মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।
পেকুয়া সদর ইউপি’র চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ্ জানান, ইউনিয়নের সিরাদিয়া অংশে বেড়িবাধ বিলীন হওয়ায় মাতামুহরী নদীর পানির রােত লোকালয়ে প্রবেশ করে। ফলে ইউনিয়নের সিরাদিয়া, বিলাহচুরা, গোয়াখালী, জালিয়াখালী, হরিনা ফাড়ি, নন্দীর পাড়াসহ বিপুল নিম্মাঞ্চল পানিতে নির্মজ্জিত হয়ে পড়েছে।
উজানটিয়া ইউপি’র চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, ইউনিয়নের করিয়ারদিয়ায় একাধিক স্থানে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। গত তিন দিন ধরে করিয়ারদিয়ার বিপুল জনগোষ্ঠি পানিবন্দি হয়েছে। ষাড়দুনিয়া পাড়া, টেক পাড়া, ফেরাসিংগা পাড়া, পেকুয়ার চর, নতুন ঘোনাসহ উজানটিয়া ইউনিয়নের সব এলাকায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।
মগনামা ইউপি’র চেয়ারম্যান শারাফত উল্লাহ ওয়াসিম জানান, ইউনিয়নে প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাট চেইন বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় ঘাট মাঝির পাড়া, উত্তর পাড়া, পুরাতন বহদ্দার পাড়া, হারুন মাতবর পাড়া, বিন্ধার পাড়া, লাল মিয়া পাড়া, হারঘর পাড়া,শরৎ ঘোনাসহ পুুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।
রাজাখালী ইউপি’র চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুুর জানান, ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি অংশে প্রায় এককিলোমিটার পাউবো’র বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় নতুন ঘোনা, বকশিয়া ঘোনা, চরি পাড়া, মৌলভী পাড়া, আমিলা পাড়া, পালা কাটা, দশের ঘোনা, নতুন পাড়া, বদিউদ্দীন পাড়া, বামলা পাড়া, সুন্দরী পাড়া, মাতবর পাড়াসহ পুুরো ইউনিয়ন ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে।
এতে, শতশত বাড়িঘর বিধস্ত হয়েছে। এসব ইউনিয়নে গ্রামীন অবকাঠামো পানির নিচে নির্র্মজ্জিত রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, জোয়ারের পানিতে উপকূলীয় তিন ইউনিয়নে উৎপাদিত হাজার হাজার মণ স্তপিকৃত লবন পানিতে তলিয়ে যায়। শুধুুমাত্র লবন শিল্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান দশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। পানির কারণে জনজীবন মারাত্বক দূর্বিসহ হয়েছে। স্থানীয় অর্থনীতিতে মারাত্বক প্রভাব দেখা দিতে শুরু করেছে। খাদ্য সংকটে পড়ছে দূর্গত এলাকার মানুষ।
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্লাবিত এলাকায় ছয় হাজার কেজি চিড়া, চার হাজার কেজি মুড়ি, চব্বিশ শত কেজি গুড়, তিন হাজার প্যাকেট খাবার স্যালাইন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে মোমবাতি-দিয়শলাই বিতরণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। জরুরী ত্রাণ তৎপরতার অংশ হিসেবে দূর্গত এলাকায় তের মেট্রিক টন চাল(জিআর) বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। তবে, ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় অপ্রতুল ত্রাণ তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুর রশিদ খান বলেন, উপজেলার উপকূলীয় তিন ইউনিয়নসহ অন্যান ইউনিয়ন সমূহের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জন দূর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরূপন করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থদের দ্রুত পূণবাসনের জন্য সরকার তড়িৎ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।এলাকাবাসী দাবি করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের চরম অবহেলা এবং সিমাহীন দূর্নীতির কারনে বার বার পেকুয়ার মানুষ পানিতে ভাসছেন।তবে এলাকাবাসীর দাবি দ্রুত দূর্গত এলাকা ঘোষণা করা হোক এবং জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ মেরামত করা হোক।

পাঠকের মতামত: