ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে তোপের মুখে এমপি ইলিয়াছ

mp eliasপেকুয়া প্রতিনিধি :::

পেকুয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন চকরিয়া-পেকুয়ার সংসদ সদস্য হাজ্বী মো.ইলিয়াছ। গত রবিবার (২২মে) বেলা ১১টার দিকে এমপি ইলিয়াছ পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ পরিদর্শনের জন্য পেকুয়ায় আসেন। ওইদিন তিনি স্পীড বোট যোগে সমুদ্র তীরবর্তী মগনামা, উজানটিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়নে পাউবোর নিয়ন্ত্রিত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন। কক্সবাজারের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী, পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু, পেকুয়া থানার ওসি জিয়া মো.মোস্তাফিজ ভুঁইয়াসহ সংশ্লিষ্ট ইউপির চেয়ারম্যানরা এমপির সাথে গিয়ে বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন। এদিকে এমপির ওই সফরকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা এমপির এ সফরকে দায় এড়ানো ও কান্ডজ্ঞানহীন সফর বলে আখ্যায়িত করেছেন। স্পীড বোটের অপেক্ষায় এমপির নেতেৃত্বে পরিদর্শন টিম মগনামা জেটিঘাটে প্রায় দু’ঘন্টা অবস্থান করেন। এ সময় দীর্ঘসুত্রতার কারনে স্থানীয়রা এমপিকে দেখে কানাঘোষা করেছেন। মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন মগনামার এ দুদর্শার জন্য এমপি দায়ী। ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের সাথে আতাঁত করে অসাধু ঠিকাদারদের বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ পাইয়ে দেন খোদ এমপি। বরাদ্ধের বিপুল অংশ চলে যায় তার পকেটে। বর্তমানে মগনামার পশ্চিম অংশে বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য সরকার টাকা বরাদ্ধ দেন। এমপি ইলিয়াছ সংস্কারকাজ সম্পাদনের জন্য যেসব ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন তারা বেড়িবাঁধে মাটি কাটার নামে প্রহসনে লিপ্ত হয়েছেন। বাধে নতুন মাটি না দিয়ে আগের পুরানো মাটি লেবেল করে বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ করা হয়েছে। ফলে চলতি পুর্নিমার জোয়ার ও ঘুর্নিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে কুতুবদিয়া চ্যানেলের জোয়ারের পানির প্রচন্ড ঢেউ বেড়িবাঁধে আঘাত হানার সাথে মাটিগুলি সরে যায়। এভাবে মগনামার বিপুল অংশ আজ পানিতে নিমজ্জিত। স্থানীয় শরতঘোনা, উত্তর মগনামা ও দক্ষিন মগনামার শতশত লোকজন এমপির বেড়িবাঁধ পরিদর্শনকে দায়সারা সফর বলে মন্তব্য করেছেন। জনগনের সাথে এমপির এক ধরনের প্রতারনা বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মগনামা জেটিঘাটের স্থানীয়রা এমপি ইলিয়াছকে দেখামাত্র ফুঁেস উঠার উপক্রম হয়েছে। তবে পেকুয়ার ইউএনও ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য থাকায় এ যাত্রা থেকে রক্ষা পেয়েছেন বলে মগনামার বিক্ষুব্ধ লোকজন এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন এমপি বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে আসেনি। চকরিয়া থেকে মগনামা জেটিঘাটে এসেছেন চা চক্রে ।

####################

পেকুয়ায় করিয়ারদ্বিয়া বেড়িবাঁধ বিলীন

পেকুয়া প্রতিনিধি :::

পেকুয়ায় উজানটিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করিয়ারদ্বিয়া প্লাবিত হয়েছে। সাগরের জোয়ারের পানিতে ওই দ্বীপের পুরো অংশ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। সৃষ্ট ঘুর্নিঝড় রোয়ানুর বিরুপ প্রভাবে সাগরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় করিয়ারদ্বিয়ার পুর্ব ও পশ্চিম অংশের পাউবো নিয়ন্ত্রিত অন্তত ২০চেইন বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। ফলে চিংড়ি ও লবন জোন খ্যাত ওই দ্বীপের বিপুল জনগোষ্টি গত চার দিন ধরে পানি বন্দি হয়েছে। মাতামুহুরী নদীর অববাহিকায় ওই দ্বীপের পুর্ব সাইডপাড়া অংশের প্রায় ৫চেইন বেড়িবাঁধ নদীর সাথে বিলীন হয়েছে। ফলে করিয়ারদ্বিয়ার কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ নদীর সাথে একাকার হয়েছে। উজানটিয়া ইউপির চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল সোমবার সকালে করিয়ারদ্বিয়া পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি সরকারের জিআর বরাদ্ধ থেকে খাদ্য সামগ্রী দুর্গতদের মাঝে বিলি করেছেন। গত চারদিনে করিয়ারদ্বিয়াসহ উজানটিয়া ইউনিয়নের সবক’টি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ইউপি সদস্য জাফর আলম জানায় করিয়ারদ্বিয়ায় গত তিন দিন ধরে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বাড়িঘরে পানি উঠায় দ্বীপের মানুষ কঠিন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ মুর্হুতে বেড়িবাঁধ সংস্কার না হলে পুরো বর্ষা মৌসুম করিয়ারদ্বিয়ার মানুষ পানিতে ভাসবে। ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান তার ইউনিয়নে প্রায় ৮শতাধিত ঘরবাড়ি সম্পুর্ন বিধ্বস্থ হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় এক হাজার বসতবাড়ি। চিংড়িঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। চাষীদের স্তুপিতকৃত প্রায় লক্ষাধিক মন লবন পানিতে মিশে গেছে। এতে তার ইউনিয়নে প্রায় একশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন চেয়ারম্যান। গত চারদিনে পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালী ও সদর আংশিকসহ এলাকায় বিপুল জনগোষ্টি চরম দুর্ভোগে পড়েছে। উজানটিয়ায় ৩০কি.মি পাউবোর বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ৬কি.মি মারাত্বক ঝুঁকিতে আছে। এরমধ্যে বর্তমানে প্রায় তিন কি.মি বিলীন হয়েছে। আট কি.মি অরক্ষিত আছে। অবশিষ্ট অংশ ক্ষতির সম্মুখিন। ১নং ওয়ার্ড়ের ইউপি সদস্য ছিদ্দিক আহমদ জানান তার ওয়ার্ড় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ। ঘোষাল পাড়ায় পাউবোর স্লুইচ গেইট ও বেড়িবাঁধ বিলিন হওয়ায় নতুনঘোনা, পেকুয়ারচর, কইড়াবাজারপাড়া ও পশ্চিম উজানটিয়াপাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে। মগনামা ইউনিয়নের শরতঘোনা, ভোলাখাল মহুনা থেকে চরখানাই পর্যন্ত প্রায় ৫০ চেইন বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ১০ চেইন বিলিন হয়েছে। পশ্চিমকুল মনজানিবাপের বাড়ি সম্মুখ প্রায় ১০ চেইন বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ হয়েছে। জালিয়াপাড়া ও ডলিন্যাপাড়া এলাকায় পৃথক স্থানে আরো ২০ চেইন মত বেড়িবাঁধ বিলিন হয়েছে। মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান শরাফাতুল্লাহ ওয়াসিম জানায় সরকারের জিআর খাদ্য শস্য দুর্গতদের মাঝে বিলি করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রনয়নের কাজ চলছে। তবে বেড়িবাঁেধর জন্য ঠিকাদার দায়ী। রাজাখালী ইউনিয়নের উত্তর সুন্দরীপাড়া এলাকায় পাউবোর বেড়িবাঁধ বিলিন হয়েছে। মাতবরপাড়া হাজ্বি মার্কেট থেকে পশ্চিমে ছনুয়া ঘাট পর্যন্ত ২০ চেইনের অধিক বেড়িবাঁধ উপচে লোনাপানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় হাজার হাজার মানুষ ওই ইউনিয়নে পানি বন্দি হয়েছে। রাজাখালী ইউপির চেয়ারম্যান ছৈয়দনুর জানায় আমার ইউনিয়নের চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। আমি রাজাখালীকে দুর্গত এলাকা ঘোষার দাবি করছি। ত্রান সহায়তা অব্যহত রয়েছে। ইউএনও মো.মারুফুর রশিদ খান জানিয়েছেন রোয়ানুর দিন থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত পেকুয়ার প্রশাসন দুর্গত এলাকায় কাজ করছেন। জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ত্রান তৎপরতা ও পুর্নবাসন জোরদারের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পেকুয়ার চার ইউনিয়নের অত্যন্ত মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। জিআর বরাদ্ধ দুর্গত এলাকায় ইতিমধ্যে প্রেরন করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু জানায় পেকুয়ার চার ইউনিয়নকে অবশ্যই দুর্গত এলাকা ঘোষনা করতে হবে। বেড়িবাধ দ্রুত সময়ে সংস্কার অত্যন্ত জরুরী। ঠিকাদার কাজে চরম অবহেলা করায় পেকুয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

পাঠকের মতামত: