ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় উপকূলীয় এলাকা ও নি¤œাঞ্চল প্লাবিত, ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত

Pekua Pic 21-05-16 (4)ইমরান হোসাইন. পেকুয়া :::
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানো প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও সমুুুদ্রের জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পেকুয়া উপজেলার তিন উপকূলীয় ইউনিয়নের মানুষ প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে বসতঘর। পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার একর চিংড়ি ঘের ও লবন মাঠ।

তবে লোকজনকে শুক্রবার বিকাল থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মারুফুর রশীদ খান। তিনি দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে পেকুয়া উপকূলে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে পড়ছে। বিভিন্ন অংশে প্রায় ২৫চেইন বেড়িবাঁধ বিলিন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের পূর্ব প্রস্তুতি, গণসচেতনতা তৈরী, ঝুকিপূর্ণ এলাকা সমূূহ থেকে মানুষ সরিয়ে নেওয়া এবং যথাসময়ে ত্রাণ বিতরণের কারণে উপজেলার কোন বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেনি।

রাজাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুুর জানান, বেশ কয়েকটি অংশে প্রায় তের চেইন পাউবো’র বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় নতুন ঘোনা, বকশিয়া ঘোনা, চরি পাড়া, মৌলভী পাড়া, আমিলা পাড়া, পালা কাটা, দশের ঘোনা, নতুন পাড়া, বদিউদ্দীন পাড়া, বামলা পাড়া, সুন্দরী পাড়া, মাতবর পাড়া ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে।

মগনামা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শারাফত উল্লাহ ওয়াসিম জানান, প্রায় দশ থেকে এগার চেইন বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় ঘাট মাঝির পাড়া, উত্তর পাড়া, পুরাতন বহদ্দার পাড়া, হারুন মাতবর পাড়া, বিন্ধার পাড়া, লাল মিয়া পাড়া, হারঘর পাড়াসহ শরৎ ঘোনার ইউনিয়নের বিশাল অংশ প্লাবিত হয়েছে।

একই ভাবে উজানটিয়া ইউনিয়নের বিপুল অংশ প্লাবিত হয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়্যারম্যান শহিদুল ইসলাম।

এসব এলাকার রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্টান, পুকুর, বসতবাড়ি পানির নীচে তলিয়ে গেছে। সড়কসমূহ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায়, উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে বেগ পেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। পেকুয়া উপজেলার নদী-খাল সমূহের পানি বিপদসীমায় উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত গ্রাম সমূহের কমপক্ষে ত্রিশ হাজার লোকজন গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। বাকিরা অনত্র সরে গেছে।

রাজাখালী ইউনিয়নের মৌলভী পাড়া গ্রামের শফি উল্লাহ জানান, গত বর্ষা মৌসুমেও বন্যার পানিতে মজুদ থাকা খাদ্যশস্য নষ্ট হয়ে গেছে। গতকাল থেকে আবার একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে এলাকাবাসীকে প্রাণে বাচানোর জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার(২০মে) থেকে পানিবন্ধী ও প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন ও জলবদ্ধতা নিরসনে সার্বিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুর রশিদ খান।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুর রশিদ খান দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, উপজেলার উপকূলীয় তিন ইউনিয়নসহ অন্যান ইউনিয়ন সমূহের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার একর চিংড়ি ঘের ও লবন মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্লাবিত এলাকায় চার হাজার কেজি চিড়া, চার হাজার কেজি মুড়ি, ষোল’শ কেজি গুড়, তিন হাজার প্যাকেট খাবার স্যালাইন এবং মোমবাতি-দিয়শলাই বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

আবহাওয়া অফিস জানায়, শনিবার(২১মে) দুপুর সাড়ে ১২টার কিছুক্ষণ পরে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। এসময় ঘূর্ণিঝড়ের একটানা গতিবেগ ছিল ৭০থেকে ৮০ কিলোমিটার।

পাঠকের মতামত: