ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কোন সংকেতে কী অর্থ, কী সতর্কতা?

13076840_1010255552387833_6297866784891633435_n-1ঝড়-সাইক্লোন-জলোচ্ছ্বাসের মত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে জানমাল রক্ষায় অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কতা এবং সরকারের নানা পদক্ষেপে রক্ষা পায় উপকূলের প্রাণিকূল।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ ক্রমেই উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত আড়াইশ’ কিলোমিটার এগিয়েছে বলে জানিয়েছে
আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার চার সমুদ্রবন্দরে ‘২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত’ দেখাতে বললেও এখন ‘৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত’
দেখাতে বলেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল সকালে বাংলানিউজকে বলেন, ঘুর্ণিঝড়টি এখনও দুর্বল হয়নি। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখালে তারা স্থানীয়দের সরিয়ে নেবেন।

‘৭ নম্বর বিপদ সংকেত’র অর্থ জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, বন্দরসমুহ ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্জাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেতের অর্থ, বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১-৬১ কিমি। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি
নেওয়ার মত তেমন বিপদজনক অবস্থা এখনও আসেনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রোয়ানু’র কারণে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলিমিটার
যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘুর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

প্রস্তুতি হিসেবে আবহাওয়া অফিস উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলেছে। যাতে তারা স্বল্প সময়ের নির্দেশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে। কারণ এটি উপকূলে অগ্রসর হলে আরও শক্তি সঞ্চয় করবে।

ঝড়ের সময় আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া সমুদ্রের ক্ষেত্রে ১১ এবং নদীবন্দরের ক্ষেত্রে ৪টি সংকেত নির্ধারিত আছে। এই সংকেতগুলো সমুদ্রবন্দর ও নদীবন্দরের ক্ষেত্রে ভিন্ন বার্তা বহন করে বলে জানিয়েছেন অদিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা।

সমুদ্রবন্দরের জন্য ১১টি সংকেত:

১নং দূরবর্তী সতর্ক সংকেত:
এর অর্থ হলো জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুযোগপূর্ণ আবহাওয়া সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ কিমি, যা সামদ্রিক ঝড়ে পরিণত হতে পারে।

২নং দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত:
দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না। তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথিমধ্যে বিপদে পড়তে পারে।

৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত:
বন্দর ও বন্দরে নোঙ্গর করা জাহাজগুলো দুর্যোগ কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ৪০-৫০ কিমি হতে পারে।

৪নং স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত:
বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১-৬১ কিমি। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মত তেমন বিপদজনক অবস্থা এখনও আসেনি।

৫নং বিপদ সংকেত:
বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্জাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতি। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে বাম দিক রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৬নং বিপদ সংকেত:
বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্জাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতি। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিক রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৭নং বিপদ সংকেত:
বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্জাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতি। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৮নং মহাবিপদ সংকেত:
বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ো বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিমি বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।

৯নং মহাবিপদ সংকেত:
বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ো বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিমি বা তার ঊর্ধ্বে হতে
পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।

১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত:
বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ো বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিমি বা তার ঊর্ধ্বে হতে
পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরের উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে।

১১নং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত:
আবহাওয়া বিপদ সংকেত প্রদানকারী কেন্দ্রের সঙ্গে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় কর্মকর্তা আবহাওয়া অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন।

নদীবন্দরের জন্য ৪টি সংকেত

১নং নৌ সতর্কতা সংকেত:
বন্দর এলাকা ক্ষণস্থায়ী ঝড়ো আবহাওয়ার কবলে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিমি গতিবেগের কালবৈশাখীর ক্ষেত্রেও এই সংকেত
দেখানো হয়। এই সংকেত আবহাওয়ার চলতি অবস্থার উপর সতর্ক নজর রাখারও
তাগিদ দেয়।

২নং নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত:
বন্দর এলাকা নিম্নচাপের সমতূল্য তীব্রতার একটি ঝড়, যার গতিবেগ ঘণ্টায় অনুর্ধ্ব ৬১ কিমি বা একটি কালবৈশাখী ঝড়, যার বাতাসের গতিবেগ ৬১ কিমি বা তদুর্ধ্ব। নৌযান এদের যে কোনটির কবলে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৬৫ ফুট বা তার কম দৈর্ঘ বিশিষ্ট নৌযানকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।

৩নং নৌ বিপদ সংকেত
বন্দর এলাকা ঝড়ে কবলিত। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ একটানা ৬২-৮৮ কিমি পর্যন্ত গতিবেগের একটি সামুদ্রিক ঝড় সহসাই বন্দর এলাকায় আঘাত হানতে পারে। সকল নৌযানকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।

৪নং নৌ- বিপদ সংকেত
সংকেত বন্দর এলাকা একটি প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার সামুদ্রিক ঝড়ে কবলিত এবং সহসাই বন্দর এলাকায় আঘাত হানবে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিমি বা তদুর্ধ। সকল প্রকার নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।

 

 

পাঠকের মতামত: