ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাঁচনো গেল না বুনো হাতিটিকে, সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: সকল ধরনের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত মারাই গেল রাঙ্গুনিয়ার কোদালায় কাদায় আটকে পড়ে আহত হওয়া বুনো হাতিটি। ২৮মে, শনিবার ভোরে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় এ মাদী হাতি। হাতিটি মারা যাওয়ার ঘটনায় চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি রুজু করেছেন পার্ক তত্ত্বাবধায়ক।
এর আগে অসুস্থ হয়ে পড়া হাতিটির সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে দেয় গত ২২ মে। এর পরদিন থেকে অসুস্থ হাতিটির চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইয়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ড. বিবেক চন্দ্র সূত্রধর।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী কর্তৃক গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যরা হলেন সদস্য যথাক্রমে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইয়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ভজন চন্দ্র দাস, ঢাকা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (অব.) ডা. মো. ফরহাদ হোসেন, চকরিয়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দী। সদস্য সচিব ছিলেন পার্কের বন্য প্রাণী চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকার নাইন।

মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য সচিব ও পার্কের বন্যপ্রাণী চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকার নাইন দৈনিক চকরিয়া নিউজকে জানান, হাতিটিকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আনার পর থেকেই এটি অনেকটাই চলৎশক্তিহীন অবস্থায়ই ছিল। বয়স অনুপাতে হাতিটি যে পরিমাণ খাবার গ্রহণের কথা ছিল, তার সামান্যটুকুই গ্রহণ করতো। অনেক সময় মুখ থেকেও খাবার ফেলে দিত।এছাড়াও অসুস্থ হওয়ার পর থেকে হাতিটির পায়খানা-প্রস্রাবও বন্ধ ছিল।

মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য চকরিয়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দী চকরিয়া নিউজকে বলেন, মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে হাতিটির চিকিৎসা কার্যক্রম যেদিনই শুরু করা হয়েছিল, সেইদিনই নিশ্চিত হওয়া গেছে হাতিটি বাঁচবে না। কারণ কাদায় আটকে পড়া অবস্থায় হাতিটির শরীরের ভেতর কাদা ঢুকে গিয়েছিল। এই কারণে হাতিটি নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেওয়ায় দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছিল। এরপরও আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা ছিল হাতিটিকে সুস্থ করে তুলতে।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানান, গত ১৩ মে বিকেলে হাতিটিকে ট্রাকযোগে প্রেরণ করা হয় চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। এদিন থেকে হাতিটিকে পার্কের হাতির গোদা নামক স্থানে রেখে নিয়মিত নজরদারিতে রেখেছিল পার্ক কর্তৃপক্ষ। পার্কের আনার পর পরই হাতিটি প্রথমদিকে বুনো আচরণ শুরু করলেও পরবর্তীতে একেবারে শান্ত স্বভাবের এবং নিস্তেজ অবস্থায় ছিল।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে জানান, গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে এই বুনো হাতিটিকে কাদায় আটকে থাকাবস্থায় উদ্ধার করে বনবিভাগ এবং সংশ্লিষ্টরা। এরপর হাতিটিকে বনে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু হাতিটির শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং কাদায় আটকে পড়া অবস্থায় মুখ দিয়ে শরীরের ভেতর কাদামাটি ঢুকে পড়ে। তাই সেটিকে চিকিৎসার জন্য কোদালা বনবিটের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। সেখানে পার্কের ভেটেরিনারি সার্জনের নেতৃত্বে চিকিৎসা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু তাতেও আশানুরূপ ফলাফল না আসায় প্রধান বনসংরক্ষকের নির্দেশে হাতিটিকে প্রেরণ করা হয় সাফারি পার্কে। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ভোরে মারা যায় হাতিটি।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, প্রায় ১০ বছর বয়সের এই বুনো হাতিটিকে সুস্থ করে তুলতে সকল ধরণের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। আশা করেছিলাম হাতিটি সুস্থ হয়ে ফের বনে ফিরতে পারবে। তবে শত চেষ্টার পরও হাতিটিকে বাঁচানো যায়নি।

পাঠকের মতামত: