ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

রাজাখালী বিইউআই ফাজিল মাদরাসার উপাধক্ষ্যের বিরুদ্ধে অভিজ্ঞতা সনদ জালিয়াতির অভিযোগ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: পেকুয়া উপজেলার অন্যতম প্রাচীণ দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজাখালী বিইউআই ফাজিল মাদরাসার উপাধক্ষ্য মাওলানা শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। চাকুরী জীবনে তিনি ভিন্নভাবে তিনটি অভিজ্ঞতা সনদ দিয়ে এই পর্যন্ত তিনটি মাদরাসায় গুরুত্বর্পুণ পদে চাকুরী করেছেন। সর্বশেষ ২০০১ সালে তিনি জালিয়াতির অভিজ্ঞতা সনদে পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী বিইউআই (বেশারাতুল উলুম) ফাজিল মাদরাসার উপাধক্ষ্য পদে যোগদান করে রীতিমত সরকারপ্রদত্ত এমপিওতে আপত্তিথাকা একই ইনডেক্স ব্যবহার বেতনভাতা উত্তোলন করে চলছেন। এভাবে তিনি অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে গেল ২১টি বছর ধরে বহাল তবিয়তে রয়েছেন রাজাখালী বিইউআই ফাজিল মাদরাসায়।

মাদরাসার উপাধক্ষ্যের অভিজ্ঞতা সনদ জালিয়াতির ঘটনায় সরকারি চাকুরীবিধির শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন মাদরাসাটির স্থানীয় অভিভাবক এবং এলাকার সচেতন মহল। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে উপাধক্ষের অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধানপুর্বক তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি চাকুরীবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাঅধিদপ্তর ঢাকার মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযোগের অনুলিপি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাঅধিদপ্তরের পরিচালক পরির্দশন ও নিরীক্ষা বিভাগ, কক্সবাজারের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, মহাপরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন ও পরিচালক কক্সবাজার দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী জাফরাবাদ গ্রামের আহমদ মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলাম ২০০১ সালে পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী বিইউআই ফাজিল মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। তাঁর আগে তিনি আরও দুইটি মাদরাসায় চাকুরী করেন। অভিযোগে দাবি করা হয়, সরকারি বিধিমোতাবেক একজন চাকুরীজীবির একটি ইনডেক্স নাম্বার থাকলেও অভিযুক্ত শহীদুলের ইনডেক্স রয়েছে কয়েকটি। আবার তিনি একটি মাদরাসা থেকে অন্য মাদরাসায় চাকুরীতে যোগদানের ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে অভিজ্ঞতা সনদ দেখিয়েছে।

লিখিত অভিযোগে জালিয়াতির বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়েছে, মাওলানা শহীদুল ইসলাম একইপদে থেকে ভিন্ন ইনড্রেক্স ব্যবহার করেছেন। অভিজ্ঞতা সনদ অনুযায়ী তাঁর দুই ইনডেক্স নং ৩১২৩৯৩ ও ৩১৭৮৮৩। এছাড়াও অভিজ্ঞতা সনদের ক্ষেত্রে তিনি ভিন্নভাবে তিনটি সনদ ব্যবহার করেছেন চাকুরীতে। একটিতে লেখা ১৯৯৮ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ৯৯ সালের ৩০ জানুয়ারী পর্যন্ত তিনি মাদরাসায় অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন, অপরটিতে লেখা ১৯৯৮ সালের ১০ আগস্ট থেকে ৯৯ সালের ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন। আরেকটিতে লেখা আছে ১৯৯৫ সালের ১ জুন থেকে ১৯৯৯ সালের ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত তিনি মাদরাসায় কর্মরত ছিলেন। এই তিনটি অভিজ্ঞতা সনদ দেন সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা আনওয়ারুল উলুম সিনিয়র মাদরাসা, রসুলাবাদ ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা। যদিও তিনি ১৯৯৫ সালে ফাজিল পাশ করেন, অথচ সেখানে একটি মাদরাসা তাকে সহকারি মৌলানা পদে কর্মরত ছিলেন মর্মে অভিজ্ঞতা সনদ দেন।

অভিযোগে আরও দাবি করা হয়েছে, মাওলানা শহীদুল ইসলাম ২০০১ সালের অক্টোবরে জারি করা সরকারি এমপিওতে প্রধান আরবী প্রভাষক হিসেবে একটি ইনডেক্স নাম্বার ব্যবহার করে সাতকানিয়ার রসুলাবাদ ফাজিল মাদরাসা থেকে ৪৩০০ টাকা বেতনক্রমে বকেয়াসহ বেতন উত্তোলন করেন। অথচ একই এমপিও ভুক্তিতে তিনি রাজাখালী বিইউআই ফাজিল মাদরাসায় একই ইনডেক্স দিয়ে উপাধ্যক্ষ হিসেবে ৪৮০০ স্কেলে বকেয়াসহ বেতন উত্তোলন করে চলছেন।

মুলত তিনি অভিজ্ঞতা সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে রাজাখালী বিইউআই ফাজিল মাদরাসায় যোগদানের মধ্যদিয়ে সংশ্লিষ্ট মাদরাসা অধ্যক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ সকলের অগোচরে অদ্যবদি উপাধ্যক্ষ হিসেবে ৪৮০০ টাকা বেতনক্রমে বেতন উত্তোলন অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িত রয়েছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, অভিজ্ঞতা সনদ জালিয়াতি ও ভিন্ন ইনডেক্স ব্যবহার করে বেতন উত্তোলনের বিষয়টি অসত্য। কে বা কারা আমাকে হয়রাণি করার কু উদ্দেশ্যে এসব মিথ্যাচার ছড়াচ্ছে। কেন মিথ্যাচার ছড়াবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত রাজাখালী বিইউআই ফাজিলা মাদরাসায় আছি। সুনামের সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি। ইতোমধ্যে জেলাপর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকও নির্বাচিত হয়েছি। সেটি সহ্য করতে না পেরে কতিপয় মহল এসব করছে।

 

পাঠকের মতামত: