পেকুয়ায় মগনামা ইউনিয়নের বিপুল এলাকায় লবন উৎপাদন থমকে গেছে। জোয়ার-ভাটার প্রবাহমান খালে ব্রিজ নির্মিত হওয়ার ফলে ঠিকাদার পানির উৎস বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে ওই ইউনিয়নের ব্যাংকখোয়াল ঘোনা, জাফর মাষ্টারের ঘোনা, রুকুরচর, দরদরিঘোনা, মগঘোনা, মুহুরীপাড়া, মৌলভীপাড়া, মাঝিরপাড়া ও বাজারপাড়াসহ অন্তত তিন হাজার একর জমিতে চরম পানি ও সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে মধ্যম ও উত্তর মগনামার বিপুল এলাকায় লবন উৎপাদন একদম বন্ধ রয়েছে।
ফলে ওই এলাকার হাজার হাজার লবন চাষি চরম উৎপাদন ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। এদিকে প্রবাহমান খালে বাধ দিয়ে ব্রিজ নির্মান করলেও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্টান খালের বিপরীত পানি নিষ্কাশনের নুতন মাধ্যম সৃষ্টি করেননি। যার ফলে বর্তমান লবন মৌসুমের উত্তম সময়ে চাষিরা লবন উৎপাদনে চরম বেকায়দায় পড়েছে।
জানা গেছে সরকারের ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের অধীনে পেকুয়া উপজেলার গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ৫টি ব্রিজ এর নির্মানকাজ শুরু করা হয়েছে। মগনামা ইউনিয়নের মিয়াজিপাড়া বিসমিল্লাহ সড়কের উপর একটি ব্রিজ নির্মিত হচ্ছে।
সুত্র জানিয়েছেন প্রায় ৩০লাখ টাকা ব্যায়ে ওই ব্রিজের কার্যাদেশ পান ঠিকাদারি প্রতিষ্টান মেসার্স গিয়াস উদ্দিন ট্রেডার্স। ওই লাইসেন্সের স্বত্তাধিকারী বারবাকিয়া ইউনিয়নের কাদিমাকাটা এলাকার গিয়াস উদ্দিন হলেও মুলত কাজ বাস্তবায়ন করছেন উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ইকবাল হোসাইন। ওই নেতা ওই লাইসেন্সের পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত লাইসেন্স নিয়েও আরেক ব্রিজ নির্মান বাস্তবায়ন কাজ হাতিয়ে নেন। উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের জারুলবুনিয়া প্রবাহমান ছড়ার উপর প্রায় ৩০লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মানাধীন ব্রিজের কাজ তার নিজের লাইসেন্সে চালিয়ে যাচ্ছেন।
অভিযোগ উঠেছে ব্রিজ নির্মানের ৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ সম্পন্ন করতে উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কার্যাদেশ আহবান করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। কিন্তু মগনামা ইউনিয়নের ব্যাংকখোয়ালের খালের উপর বিসমিল্লাহ সড়ক পয়েন্টে নির্মিত ওই ব্রিজটির কার্যাদেশ গোপন করেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুভ্রত দাশ।
উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ইকবাল হোসাইন তাকে মোটাংকে ম্যানেজ করে দু’টি ব্রিজের নির্মানকাজ নিজেই বাস্তবায়ন করছেন। আর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তাকে নেপথ্যে থেকে পরোক্ষ সহায়তা করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার জানিয়েছেন প্রতিযোগিতা না হওয়ায় মগনামা বিসমিল্লাহ সড়কের ব্রিজ নির্মানে সরকার কয়েক লক্ষ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় বিসমিল্লাহ সড়ক পয়েন্টে ব্যাংকখোয়াল খালের দু’পাশে বাধ তৈরি করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে ওই বাধের ফলে বিপুল এলাকায় লবন উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পানি ও সেচ সংকটে লবন উৎপাদন বন্ধ থাকায় কয়েক হাজার চাষির মাথায় হাত উঠেছে। এনিয়ে শতশত চাষিরা ফুঁসে উঠার উপক্রম দেখা দিয়েছে। যেকোন মুর্হুতে বড় ধরনের সংঘাত হতে পারে ঠিকাদার ও চাষিদের মধ্যে।
লবনচাষি ছাদেক, শাখাওয়াত, কালু, আবুতাহের, আবুল কালাম, গুরামিয়া, আনোয়ার জানায় এক সপ্তাহ ধরে লবন উৎপাদন হচ্ছেনা। পলিথিন ভাজ করে রাখা হয়েছে। বিকল্প পথে পানির ব্যবস্থা রাখার টাকা ব্রিজ নির্মানে ঠিকাদারকে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু সাব-ঠিকাদার উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক নেতা তারেকুল ইসলাম বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে আমাদের চরম ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছে।
এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সুভ্রত দাশের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। সংযোগ বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মারুফর রশিদ খান জানিয়েছেন বিষয়টি আমি জেনেছি। শীঘ্রই এর যথাযত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু জানিয়েছেন আ’লীগ-বিএনপি মিলে ব্রিজ নির্মান কাজ করছে। তারা পানির বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি না করে কাজ করায় চাষিরা লবন উৎপাদনে চরম সংকটে পড়েছে। আমি পিআইওকে বিষয়টি বলেছি।
পাঠকের মতামত: