ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

কম বয়সি অদক্ষ চালকদের হাতে টমটম : বাড়ছে দুর্ঘটনা ও যানজট

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: :
কক্সবাজার শহর এখন অবৈধ টমটমের শহরে পরিনত হয়েছে। তার উপর বেশিরভাগ টমটম চালক কম বয়সী। মহাসড়কে গাড়ী চালানোর ন্যূনতম ধারনা নেই। নেই কোন প্রশিক্ষণ। যার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা। আর যানজট বাড়ারও প্রধান কারন হিসাবে দেখছেন এসব টমটম আর সিএনজি যত্রতত্র পার্কিং করাকে। এছাড়া কম বয়সি এসব টমটম চালকরা গাড়ীতে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে অনেক সময় ইভটিজিং সহ সাধারণ মানুষকে খুব বিব্রত করে বলে জানান সচেতন মহল। সাধারণ মানুষের দাবী শহরে ধারনক্ষমতার মধ্যে টমটম চালানোর অনুমতি আর তাদের সঠিক ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে গাড়ী চালানোর অনুমতি দিয়ে শহরকে পরিচ্ছন্ন করা হউক।
কক্সবাজার শহরের তারাবনিয়ারছড়ার বাসিন্দা এক আইনজীবী বলেন, গত সপ্তাহে আমার পুরু পরিবার নিয়ে এক টি টমটমে করে বাস টার্মিনাল যাওয়ার পথে বিজিবি ক্যাম্পের পরে টমটমটি আরেকটি গাড়ীর সাথে ধাক্কা লাগলে আমরা সবাই রাস্তাই পড়ে গিয়ে মোটামুটি আহত হই। আমার মতে আমাদের চালকটি খুবই কম বয়সি। সে নিয়ম কানুন কিছুই বুঝে বলে আমার মনে হয়নি। সে মূলত স্পীট ব্রেকার থেকে জোরে চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে।
অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক উম্মে খালেদা খানম বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে আসার পথে টমটমের চালক ভুল করে আরেকটি সিএনজির সাথে লাগিয়ে দিলে আমি পায়ে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিলাম। সেটা নিয়ে আমি কয়েক মাস কষ্ট পেয়েছি। অনেক টাকাও খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, টমটম রাস্তাতে চলুক সেটা ঠিক আছে কিন্তু এত বেশি টমটম যা অস্বাভাবিক। আমার মতে শহরের ধারনক্ষমতার ৪/৫ গুন বেশি টমটম এখন রাস্তায় চলাচল করছে। আর সবচেয়ে মূল সমস্যা হচ্ছে বেশিরভাগ চালক খুবই কম বয়সি। তারা কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই রাস্তাতে গাড়ী চালাচ্ছে। একটি পর্যটন শহরে এটা কোন ভাবেই হতে পারে না।
আলাপকালে ভূুমি অফিসের কর্মচারী টেকপাড়ার বাসিন্দা মোঃ সেলিম উদ্দিন বলেন, টমটম চালকদের সবচেয়ে বড় সমস্য হচ্ছে তারা খুবই কম বয়সি। আর তারা গাড়ীতে অনেক উচ্চস্বরে গান বাজায়, যার ফলে অনেক সাধারণ মানুষ খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায়। বিশেষকরে গাড়ীতে যখন মেয়েরা উঠে তখন আরো বেপরোয়া হয়ে গাড়ী চালায়। এর ফলে দূর্ঘটনা বেড়ে যায়। আবার কিছু কিছু যুবক আছে এসব টমটমে করে মেয়েদের ইভটিজিং করে। আমার মতে টমটমে কোনভাবে গান বাজনার সুযোগ থাকা উচিত নয়।
এ প্রসঙ্গে খুরুশকুল তেতৈয়া এলাকার টমটম চালক আমিন বলেন, আমার এলাকার অনেক বন্ধু টমটম চালায় তাদের দেখা দেখি আমিও টমটম চালাই। কোথাও প্রশিক্ষণ নেয়নি স্বীকার করে সে জানায় আমার বয়স এখনো ১৫ আমি অন্যদের দেখা দেখি টমটম নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ি। এখন ভালই চালাচ্ছে। শহরের গোলদিঘীর পাড় এলাকায় দাড়ানো নুরুল আলম নামের এক কম বয়সি টমটম চালকে কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমি এর আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম, পরে অনেকের দেখা দেখি টমটম চালাই। গাড়ীটি আমি ভাড়ায় নিয়েছি। এসময় আরেকজনের কাছে জানতে চাইলে সে সহজভাবে স্বীকার করেন এর আগে বোট শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন। সাগরে এখন মাছ নেই, সংসার চলেনা তাই টমটম চালানো কাজ করছে। এতে ভাল আয় হয় বলে এ কাজ করছি।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের আইনজীবী এড. মোঃ আবদুল্লাহ বলেন, একটি শহরের সবকিছু পরিকল্পিত হওয়া দরকার। যেমন কয়টি রিক্সা, টমটম, সিএনজি বা গণপরিবহন চলবে। আর কারা সেটা চালাচ্ছে সেটাও সংশ্লিষ্ট সকলের জানা থাক উচিত। এখন অপরাধ করছে বেশিরভাগ টমটম চালকরা। গত সপ্তাহে আমার এলাকা থেকে টমটমে ইয়াবাসহ এক যুবক আটক হয়েছিল।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম ফজলুল করিম বলেন, এটা সত্য যে কক্সবাজারের সব কিছু অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে। কিছু দিন আগে আমার এক পরিচিত লোক মায়ানমারের ঈয়াগুন থেকে এসে সেখানকার পর্যটন সম্ভবনার কথা যা বলেছে আমার মতে আগামী ৫ বছরের মধ্যে মায়ানমার শুধু পর্যটন খাত দিয়ে অর্থনীতিতে আমাদের টপকে যাবে। মূল কথা হচ্ছে এত কম বয়সি ছেলেরা টমটম নিয়ে কিভাবে মহাসড়কে আসে সেটা কর্তৃপক্ষই ভাল জানে।

পাঠকের মতামত: