ডেস্ক নিউজ :
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার বিষয়ে আগামী আগস্ট মাসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এতদিন (আগস্ট) পর্যন্ত এই ধারায় অপরাধ হলে মামলা হবে। মামলাই শেষ কথা নয়, সুষ্ঠু তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলেই অভিযোগ দাখিল করা হবে।
রোববার সচিবালয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যালোচনা বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এই আইনে কোনো সাংবাদিক যাতে হয়রানি না হয় সে বিষয়ে সজাগ থাকবে তদন্ত সংস্থা। এ ছাড়া ঘটনার সঠিক তদন্তে দোষী প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত যাতে কেউ হয়রানি না হয় সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে গত ১৬ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৬ এর খসড়া নিয়ে মতবিনিময় সভা হয়। আজ ওই মতবিনিময়ের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হলো। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বৈঠকে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ, আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব শহিদুল হক, বিটিআরসির মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমদাদ উল বারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, সভায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। আলাপ-আলোচনায় আমরা অনেক কিছু নিয়ে এসেছি। যেগুলোর বিষয়ে আজকের মিটিংয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
‘আজকের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আলাপ-আলোচনা করে যেসব কথা বেরিয়েছে সেটার একটা রূপরেখা করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মধ্যে সেগুলো এনে আগামী আগস্ট মাসে এটার একটা চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে আবার মিটিংয়ে বসব। সেই মিটিংয়ে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। সেখানে ৫৭ ধারার বিষয়েও আমাদের সিদ্ধান্ত আপনারা পাবেন। কিন্ত এখন আমরা কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি বলেই এর বেশি আর কিছু বলতে চাই না।’
আগে আপনি বলেছিলেন আইসিটি আইনে ৫৭ ধারা থাকছে না। কিন্তু ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ১৯ ধারায় ৫৭ ধারাটাই ঘুরেফিরে রয়ে গেছে। এ বিষয়ে অবস্থান কি জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি তো আপনাদের বলেছি, আমরা এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। আপনারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে জানতে পারবেন। নতুন আইন না হওয়া পর্যন্ত কি আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা অব্যাহত থাকবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ৫৭ ধারা যদি আমরা বাতিলও করে দেই তাহলে এই মামলাগুলো যেগুলো হয়েছে, সেই আইন যখন করব সেই ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হবে। ৫৭ ধারার মামলাগুলো কোর্টের এবং তদন্তের এথতিয়ারাধীন আছে।
এ সময় পাশে বসা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সচিবও আমার সঙ্গে একমত বোধহয়। আমরা অত্যন্ত স্ক্রটিনাইজ করব ইনভেস্টিগেশনের সময়, যাতে কোনো মতে নির্দোষ কোনো সাংবাদিক এটায় (৫৭ ধারায়) সাজা না পায় বা হয়রানির শিকার না হয়। সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব।’
অপর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এই মামলায় (৫৭ ধারার) চার্জশিট দেয়ার আগে একটা তদন্ত হয়। সেই তদন্তটা অত্যন্ত সুষ্ঠু হবে, এটা আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি। ৫৭ ধারায় বেশিরভাগ মামলা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হচ্ছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইনমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমার বক্তব্য হচ্ছে, এই ব্যাপারে আপনাদের কোনো কনসার্ন থাকে, আমি তা নোট করব। আমি সেই কনসার্নটা ইনভেস্টিগেটিং অথরিটির কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি, তারাও যাতে আপনাদের কনসার্নের দিকটা বিবেচনা করে তাদের ইনভেস্টিগেশন চালায়।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে আইসিটি আইন হলেও ২০১৩ সালে তা সংশোধন করা হয়। এই আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ৫৭ ধারায় দেশের বিভিন্ন জেলায় সাংবাদিকসহ ২০টিরও বেশি মামলা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: