যুগান্তর :: তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সব রিপোর্ট এখনও পাইনি; পেলেই কিছু অনলাইন নিবন্ধিত হবে।’
বুধবার সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ২০২০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় নতুন তথ্যসচিব কামরুন নাহার ও প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আজ বছরের প্রথম দিনে শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্যই মূলত আপনাদের আহ্বান জানিয়েছিলাম। একই সঙ্গে আমাদের মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব যোগদান করেছেন। কামরুন নাহার তথ্য মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসে প্রথম একজন নারী সচিব। তিনি তথ্য ক্যাডারের অফিসার। সুতরাং এই মন্ত্রণালয়ের বিষয়াদি নিয়ে তার আগে থেকেই অভিজ্ঞতা আছে। সেহেতু মন্ত্রণালয়ের কাজ করতে তা অত্যন্ত সহায়ক হবে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক বছর সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘গত প্রায় একটি বছর আমি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছি। অনেক কাজ আমরা সফলভাবে করতে সক্ষম হয়েছি। অনেকগুলো কাজ আমরা হাতেও নিয়েছি। কয়েক যুগে হয়নি বা একযুগেও হয়নি এমন কাজ, যেমন ভারতে বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখানোর প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল কয়েক যুগ আগে থেকে, কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। গত বছর ২ সেপ্টেম্বর থেকে দুরদর্শনের ফ্রি ডিশের মাধ্যমে সমগ্র ভারতে অফিসিয়ালি বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রদর্শিত হচ্ছে। গত বছরে কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি।’
ড. হাছান বলেন, ‘এক যুগেরও বেশি সময় ধরে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ক্রমনির্ধারণের জন্য বারংবার তাগাদা দেয়া হয়েছিল কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, এখন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশি টেলিভিশনে অবৈধ দেশি বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছিল, সেটি আমরা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি, অনেকগুলো টেলিভিশনে বিদেশি সিরিয়াল অনুমতি ছাড়া প্রদর্শিত হচ্ছিল, যেটি আমরা নিয়ম-নীতির মধ্যে এনেছি; একটি কমিটির অনুমোদন নিয়ে সেগুলো প্রদর্শিত হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদেশি অবৈধ ডিটিএইচ সংযোগ অনেক জায়গায় চালু ছিল, আমরা ঘোষণা করেছিলাম প্রাথমিকভাবে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে এগুলো সরিয়ে নিতে হবে। পরে সময় বৃদ্ধি করেছিলাম। আজ থেকে অবৈধ ডিশ সংযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে এ ব্যাপারে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। ব্যবহারকারী ও সংযোগ প্রদানকারী উভয়েই দোষী সাবস্ত্য হবে আইন অনুযায়ী।’
মন্ত্রী জানান, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। এই ছবির কাজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করা হয়েছে। আশা করছি এ মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ টেলিভিশনের মতো বেতারও ভারতে সম্প্রচারিত হবে।’
ড. হাছান জানান, ‘চলচ্চিত্র শিল্পীদের দাবি ছিল একটি কল্যাণ ট্রাস্ট করা। সেই কল্যাণ ট্রাস্ট আইন প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। ইতিপূর্বে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এক বছর পিছিয়ে ছিল। এটি হালনাগাদ হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১৮টি আইন, বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন হালনাগাদের কাজ চলছে। গণমাধ্যমকর্মী আইন খুব সহসা আমরা মন্ত্রিসভায় নিয়ে যাব বলে আশা করছি।’
ড. হাছান জানান, ‘৬৪টি জেলায় তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি ডিপিপি তৈরি হচ্ছে, সেখানে সিনেমা হলও থাকবে। সেগুলো আমরা ‘লিজ আউট’ করতে পারব, সিনেমা প্রদর্শনসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতে পারব। গণমাধ্যমকর্মী আইনে কিছু সংশোধন করা হয়েছে, সাংবাদিক ভাই-বোনদের দাবি অনুযায়ী। এটি আমরা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি, এরপর মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের পর সেটি সংসদে যায়।’
এ সময় বিএনপি নেত্রী সেলিমা রহমানের ‘হঠাৎ করেই সরকারের পতন হবে’ এ মন্তব্যের প্রতি সাংবাদিকরা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি সফল হবে না। সরকারের পতন হবে- সেলিমা রহমানের এই কথা তো আমরা গত ১১ বছর ধরেই শুনে আসছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকেই সরকারের পতন হবে এই কথা শুনে আসছি। সরকার পরিবর্তনের একটিই পথ, সেটি হচ্ছে নির্বাচনের মাধ্যমে। যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তখন সেই নির্বাচনে যদি জনগণ বর্তমান সরকারকে আমাদের দলকে সমর্থন না জানায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা সরকারে থাকব না। এ ছাড়া অন্য পথ তো নেই।’
‘অবশ্য তারা (বিএনপি) নানা পথে বিশ্বাস করে, কারণ তারা রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘সেলিমা রহমানের এই বক্তব্য সেই ষড়যন্ত্রেরই ইঙ্গিত ছাড়া অন্য কিছু না। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে অতীতের মতো আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি সফল হবে না এবং সরকারকে বিদায় দেয়ার একটিই পথ- সেটি হচ্ছে নির্বাচন।’
বিরোধী দলকে ‘স্পেস’ দেয়া প্রসঙ্গে ড. হাছান বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সমাজেই বসবাস করি। এখানে বিরোধী দল সব সময় তাদের মতপ্রকাশ, প্রতিবাদের আইনগত, সাংবিধানিক যে অধিকার, তা সবসময় প্রয়োগ করছে। এখানে কাউকে অধিকার দেয়ার বিষয় নেই। মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসিতে আমরা বিশ্বাস করি এবং সেই অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হচ্ছে। সুতরাং এখানে বিরোধী দল সংসদে, সংসদের বাইরে সবসময় তাদের মতপ্রকাশ করছে। সুতরাং অধিকার দেওয়া না দেওয়ার প্রশ্ন অবান্তর।’
‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মেয়র তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের নতুন মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দেবার বিষয়ে কিছু বলেননি’ এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ড. হাছান বলেন, ‘দক্ষিণের মেয়রের বক্তব্য আমি শুনেছি। তিনি বলেন, মন্ত্রীর মর্যাদায় তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রীর মর্যাদা থাকলে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে কিছু বিধি-নিষেধ আছে। সেই বিধি-নিষেধের কথাই তিনি স্মরণ করে দিয়েছেন।’
পাঠকের মতামত: