নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কোদালায় কাদায় আটকে পড়া আহত বুনো হাতিটিকে শেষ পর্যন্ত প্রেরণ করা হয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। প্রায় ৯ বছরের এই বুনো হাতিটিকে গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পার্কে নিয়ে আসা হয়েছে। এর আগে সকালে ট্রাকে করে কোদালা বনবিট থেকে চকরিয়ায় আসেন সংশ্লিষ্টরা। পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রধান বনসংরক্ষক মো. আমির হোসাইন এবং বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ঢাকা অঞ্চলের বনসংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিমের নির্দেশে মূলত চিকিৎসার জন্য হাতিকে পার্কে প্রেরণ করা হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়ার কোদালা বনবিট থেকে চকরিয়ার ডুলাহাজারায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে হাতিটি প্রেরণের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, হাতিটি পার্কে আনার পর থেকে বুনো আচরণ শুরু করেছে। তাকে পার্কের হাতির গোদা এলাকায় আলাদা একটি শেডে রাখা হয়েছে।
পার্কের বন্যপ্রাণী চিকিৎসক (ভেটেরিনারী সার্জন) হাতেম সাজ্জাদ জুলকার নাইন বলেন, রাঙ্গুনিয়ার কোদালা বনবিট কার্যালয়েই হাতিটির চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা হয় একসপ্তাহ আগে থেকে। এখন হাতিটিকে সাফারি পার্কে প্রেরণ করায় বর্তমানে এখানেই হাতিটির চিকিৎসা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এদিকে হাতিকে পার্কে আনার খবরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে। একইসাথে পার্কে আগত দর্শনার্থীরাও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
এই বিষয়ে একাধিক বুনো হাতি বিশেষজ জানান, একটি বুনো হাতিকে পোষ মানানোর জন্য জন্মের ২ থেকে আড়াই বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ দিতে হয়। খুব ছোট অবস্থা থেকেই বুনো হাতিকে এটা-ওটা শিখিয়ে দিলেই পরে সে পোষ মানে। কিন্তু এর বেশি সময় হয়ে গেলে তাকে পোষ মানানো অসাধ্য হয়ে পড়ে। তাছাড়া এই হাতির শরীরে কোনো ধরণের ভাইরাস যদি থেকে থাকে তাহলে পার্কের আবদ্ধ পরিবেশে থাকা হাতিসহ অন্যান্য প্রাণীদের মাঝেও সেই ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই পার্কে প্রেরণকৃত হাতির শরীরে কোনো ভাইরাস রয়েছে কিনা তা আগে নিশ্চিত হতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই বুনো হাতিটিকে মাহুতসহ যারা তদারকি করবে তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। পাশাপাশি পার্কে আগত দর্শনার্থীরাও হুমকির মধ্যে থাকবে। তাই এসব বিষয় ভালভাবে তদারক করতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
এই বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই বুনো হাতিকে তদারকি করার পুরোপুরি কোনো উপায় পার্কে নেই। মূলত চিকিৎসার জন্যই হাতিটিকে পার্কে প্রেরণ করা হয়েছে। তাই চিকিৎসা কার্যক্রম পর্যন্ত হাতিটিকে সতর্কতার সহিত কীভাবে তদারকি করা যায় সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে। পাশাপাশি পার্কের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আগত দর্শনার্থীরাও যাতে হুমকির মুখে না পড়ে সেদিকে সতর্ক অবস্থান থাকবে পার্ক কর্তৃপক্ষের।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে এই বুনো হাতিটিকে কাদায় আটকে থাকাবস্থায় উদ্ধার করে বনবিভাগ এবং সংশ্লিষ্টরা। এরপর হাতিটিকে বনে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু হাতিটির শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হলে সেটিকে ফের চিকিৎসার জন্য কোদালা বনবিটের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। সেখানে পার্কের ভেটেরিনারী সার্জনের নেতৃত্বে চিকিৎসা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়।
পাঠকের মতামত: