ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োগের নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভূঁয়া এনজিও মাহিয়া ফাউন্ডেশন!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘স্বাস্থ্য ও খাদ্য সহায়তায় তিন বছরের প্রকল্পের নামে’ অনলাইন মাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলার শত শত বেকার যুবকদের কাছ থেকে জামানতের নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভূঁয়া এনজিও ‘মাহিয়া ফাউন্ডেশন’! সম্প্রতি কয়েকটি অনলাইনে ওই ভূঁয়া এনজিও ৫টি পদে পাঁচ শতাধিক জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আর ওই বিজ্ঞপ্তি অনলাইনে মাধ্যমে পেয়ে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেকার, শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা আবেদন করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বিজ্ঞপ্তিতে ‘মাহিয়া ফাউন্ডেশন’ নামের ওই ভূঁয়া এনজিওর ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ঢাকা জেলার বাড্ডা থানার আফতাব নগর এলাকায়। আর কক্সাবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পূর্ব পাশের্^ (ইপসা এনজিওর পাশে) একটি সাইনবোর্ড বিহীন কার্যালয় খুলেছে তারা এহেন প্রতারণায় নেমেছে।
নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, অনলাইনে বিভিন্ন পদে আবেদন করার পর ওই ভূঁয়া এনজিওর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। এরপর তাদের উখিয়া অফিসে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়। সেখান থেকে নিয়োগ প্রত্যাশী আবেদনকারীদের পাঠানো হয় ভূঁয়া এনজিও মাহিয়া ফাউন্ডেশনের ঢাকা জেলার বাড্ডা থানার আফতাব নগর এলাকার সেক্টর ২ এর ২ নং রোডে অবস্থিত নুর টাওয়ারের ৯এফ নং কক্ষে। এরপর সেখানে ওই ভূঁয়া এনজিও মাহিয়া ফাউন্ডেশনের কথিত প্রধান নির্বাহী পরিচালক ও পাবনা জেলার বাসিন্দা বাবুল আহমেদ ও কর্মকর্তা পরিচয়ে আহমদ আলী প্রতিজন আবেদনকারীগণের কাছ থেকে পদভেদে ৩০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জামানত নিচ্ছে। গত এক সপ্তাহে কক্সবাজার বিভিন্ন উপজেলার জেলার শত শত বেকার যুবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই ভূঁয়া এনজিওর কথিত প্রধান নির্বাহী পরিচালক পাবনা জেলার বাবুল আহমেদ ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা!
প্রতারণার শিকার পেকুয়া উপজেলার এক যুবক জানান, তিনি প্রথমে বুঝতে পারেননি। একজনের লোভে পড়ে সেখানে একটি পদে আবেদন করেছিলেন। এরপর তাদের ঢাকা অফিসে ডেকে নিয়ে দুই জনের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা জামানত নিয়েছে। এবং জামানতের টাকার রিসিট দিয়েছে বৈচিত্র ফাউন্ডেশনের! টাকা নিয়ে নিয়োগ দিলেও উখিয়ায় তাদের কোন কাজ নাই।
নাম প্রকাশ না করে আরো এক যুবক জানান, মাহিয়া ফাউন্ডেশনের ঢাকা অফিসে জামানতের টাকা নেওয়ার পর তাদের মানি রিসিটের সাথে এনজিও ব্যুরোর একটি রেজিষ্ট্রেশনের কাগজ দিয়েছেন। সেখানে দেখা গেছে, এনজিও ব্যুরো থেকে গত ২৯/১০/২০১৮ ইরেজীতে মাহিয়া ফাউন্ডেশন লাইসেন্স পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এবং এর রেজি: নং ৩০৩৬।
আল মাহিয়া ফাউন্ডেশন এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধিত এনজিও কিনা এ প্রতিবেদক নানাভাবে খোঁজ খবর নেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাহিয়া ফাউন্ডেশন নামের কোন এনজিও সরকারের এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধিত এনজিও নয়। মাহিয়া ফাউন্ডেশন যে রেজিষ্ট্রেশন নম্বরটি ব্যবহার করেছেন সেটি এনজিও ব্যুরো কর্তৃক যশোর জেলার ‘হাসান সমাজ কল্যাণ সংস্থা’র নামে রেজিষ্ট্রেশনকৃত নম্বর। এভাবে অন্য একটি এনজিওর রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে এনজিও বুরোর জাল নিবন্ধন সনদ তৈরী করে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জনবল নিয়োগের নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে ভূঁয়া এনজিও মাহিয়া ফাউন্ডেশন।

রিসিটে দেওয়া মোবাইল নাম্বারের সূত্র ধরে আজ সকালে ভূঁয়া এনজিও মাহিয়া ফাউন্ডেশনের কথিত কর্মকর্তা আহমদ আলীর সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, মাহিয়া ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী পরিচালক বাবুল আহমদ গত কিছুদিন পূর্বে অনলাইনে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লোক নিয়োগ দিচ্ছে। এনজিও ব্যুরোর লাইসেন্স জালিয়াতির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।

পাঠকের মতামত: