ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গারা চায় এলাকাভিত্তিক পরিবার নিয়েই মিয়ানমারে ফিরতে

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: বাংলাদেশের পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রাম কিংবা এলাকাভিত্তিক পরিবার নিয়েই মিয়ানমারে ফিরতে চান বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের নেতার মতে, বিচ্ছিন্নভাবে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের পরিকল্পনা যৌক্তিক নয়। আর শিগগিরই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরু হতে পারে বলে আশা করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গারা বলেন, চার বছর ধরে এখানে এসেছি, আমার দেশ ফিরে পেলে আমরা চলে যাব। মিয়ানমারে আগে যেখানে ছিলাম সেখানে নিয়ে গেলে এবং রোহিঙ্গা পরিচয় দিলে ফিরে যাব। দেশে আমাদের জমিজমা আছে এসব ফিরিয়ে দিলে অবশ্যই যাব।

২০১৭ সালের আগস্টে সেনাবাহিনীর ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে দু’দফা তারিখ ঘোষণা করেও শুরু করা যায়নি প্রত্যাবাসন। সর্বশেষ চলতি মাসের ১৯ তারিখ চীনের মধ্যস্থতায় দুদেশের মধ্যে বৈঠকে বছরের মাঝামাঝি প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত হলেও কী প্রক্রিয়ায় সেটা হবে তা নিয়ে একমত হতে পারেনি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার।

বাংলাদেশের দাবি অনুযায়ী, একসঙ্গে এক গ্রামের সবাইকে প্রত্যাবাসন করার পক্ষে মতে আর সঙ্গে একমত এ দেশের কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদেরও। এর আগে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হলেও এ প্রথম সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। এর সঙ্গে বাড়তি যোগ হয়েছিল এবার চীনের মধ্যস্থতা।

চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর আশা প্রকাশ করেন।

সচিবারয়ে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখন অনেক ফ্যাক্টরস আছে, এসব ফ্যাক্টরস মাথায় রেখে, ইতোপূর্বে যেহেতু দুটি ডেট দিয়ে আমরা সফল হতে পারিনি, এখন সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে কীভাবে সফল হওয়া যায় সেই চেষ্টাই থাকবে আমাদের। আমরা সিনসিয়ারলি এঙ্গেজড থাকব।

ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে দুপুর ২টা থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে সচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মাসুদ বিন মোমেন। চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী লুও জাওহুইয়ের সভাপতিত্বে বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা উপমন্ত্রী হাউ দো সুয়ান।

ওই বৈঠকের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল হক চৌধুরীর জানান, গ্রামভিত্তিক প্রত্যাবাসনই হতে পারে গ্রহণযোগ্য সমাধান।

তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের উচিত তাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে দলবদ্ধভাবে একত্রে নিয়ে একই স্থানে তাদের বসবাসের জায়গা করে দেওয়া।

মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) কক্সবাজারে রোহিঙ্গা বিষয়ে এক বৈঠকে যোগ দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বলেন, শিগগিরই প্রত্যাবাসন শুরু হবে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ এখানে চেষ্টা করছে তার তাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে, তবে এখনো আমরা ফলপ্রসূ ফল আমরা পাইনি। আশা করি শিগগিরই প্রত্যাবাসন আসন্ন।

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সাড়ে ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা দিলেও মিয়ানমার চায় এখন পর্যন্ত যাচাই করা ৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে বিচ্ছিন্নভাবে ফেরত নিতে।

প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। ২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।

পাঠকের মতামত: