ঢাকা,শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গাদের অপরাধ প্রবনতা বেড়েই চলছে

rohinga-bostyটেকনাফ প্রতিনিধি :::

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা পর্যটন শহর উখিয়া টেকনাফে রোহিঙ্গা আগ্রাসন বেড়েই চলছে। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই রোহিঙ্গাদের সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পুশব্যাক করার ঘটনা ঘটলে ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থেমে নেই। প্রায় ৫ হাজার একর বন ভূমিতে ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অবৈধ বসবাস করে জীবিকার তাগিদে নির্বিচারে বন সম্পদ ধ্বংস করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। নিয়ন্ত্রণহীন এসব রোহিঙ্গারা স্থানীয় শ্রমবাজার হাতিয়ে নেওয়ার ফলে দু’ উপজেলায় কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দুই তৃতীয়াংশ অসচ্ছল পরিবারকে দৈনদশায় দূর্বিসহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে আইন শৃংখলা রক্ষায় পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ছে পতিতাবৃত্তি, খুন, ডাকাতি,ছিনতাই, সরকারবিরোধী কর্মকান্ড সহ নানা অপরাধে রোহিঙ্গাদের এহেন কর্মকান্ডে সংকিত হয়ে পড়েছে স্থানীয় জনগন। স্থানীয়দের প্রতিক্ষা কবে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসিত হবে মিয়ানমারে। কবে জঞ্জাল মুক্ত হবে উখিয়া টেকনাফ বাসী।
জানা গেছে, তৎকালীন ১৯৮০ দশকে জিয়া সরকারের আমলে এদেশের রোহিঙ্গাদের আগমন ঘটে। নাইক্ষ্যংছড়ি, রামু, উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে এসময় প্রায় ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে সরকারের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে তারা আশ্রয় গ্রহন করে। পরবর্তীতে দু’দেশের সফল কুটনীতিক তৎপরাতায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। অতি অল্প সময়ে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে সক্ষম হলেও বাদ বাকী রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের বিভিন্ন বন জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করে।
দ্বিতীয় দপায় ১৯৯১ সালে সীমান্তের নাফ নদী অতিক্রম করে প্রায় ২লক্ষ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফ, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন শরাণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করে। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ২ লক্ষ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে ফেরৎ পাঠানো হলেও টেকনাফের নয়া পাড়া শরণার্থী শিবিরে ১ হাজার ৭৭৫ পরিবারের ১৪ হাজার ৪৩১জন রোহিঙ্গা এবং উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের ১ হাজার ১৯৪ পরিবারে ৯ হাজার ৮৫০ জন সহ প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গা দুই ক্যাম্পে অবস্থান করে। ২০০৪ সালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। যা এখনো পর্যন্ত বিদ্যমান রয়েছে। এর উপর নতুন করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী পুলিশ ও রাখাইন সম্প্রদায়ের নির্যাতনের মুখে দলে দলে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে আশ্রয় নিচ্ছে উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের লেদা এলাকার বস্তিতে। সরকারী কোন নিয়ন্ত্রন না তাকায় এসব রোহিঙ্গা গাড়ীতে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে। এখনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।গুটি কয়েক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি পুশব্যাক করলে ও পুশব্যাক হওয়া রোহিঙ্গারা পুনরায় সীমান্তে উৎপেতে থাকা দালাল মারফত বাংলাদেশে ফেরত আসছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নতুন অনুপ্রভেম করা প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা ছাড়াও গত ২২ বছরে উখিয়া-টেকনাফ দুই শরণার্থী শিবিরে অসংখ্য শিশু জন্ম নিয়েছে। শরণার্থী শিবিরে জন্ম নেয়া এসব শিশু কিশোর যুবকরা বর্তমানে বাংলাদেশে নাগরিক দাবী করে বলে বেড়াচ্ছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ত্রান সামগ্রী বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত কতিপয় এনজিও সংস্থা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাদের উৎসাহিত করার কারণে এ দেশে জন্ম নেয়া উঠতি বয়সের যুব-যুবতীরা প্রকাশ্য প্রত্যাবাসন বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। নতুন করে আরও ৫০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে উখিয়ার কুতুপালং শরাণার্থী ক্যাম্পের পার্শ্বে প্রায় ২শত একর সরকারী বন ভূমি দখল পূর্বক রাতা রাতি ঝূপড়ি বেধে বসবাস শুরু করেছে।তাছাড়া প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তের কোন না কোন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের আগমন ঘটছে এদেশে। এসব অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গারা প্রথমে ক্যাম্পে অবস্থান করা তাদের আত্বীয় স্বজনদের মাধ্যমে নিরাপদ কোন স্থান বা দেশের আনাচে-কানাচে চলে যাচ্ছে। তাছাড়া বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া অপরাধ গুলোতে রোহিঙ্গাদের জড়িত থাকার বিষয়টিও সামনে চলে আসছে। তাই এসব রোহিঙ্গাদের কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রন করা না গেছে রোহিঙ্গারা দেশের জন্য মারাত্বক হুমকি হয়ে দাড়াবে বলে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিমত।
বর্তমানে উখিয়া টেকনাফ দু’ উপজেলার দুটি শরণার্থী শিবিরে ২৮ হাজার রেজিষ্ট্রাড রোহিঙ্গা বিদ্যমান থাকলেও উখিয়ার কুতুপালংয়ে অবৈধ ভাবে সরকারী বনভূমি দখল করে বসবাস করছে আরও ২ লক্ষ হাজার রোহিঙ্গা। এছাড়াও উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন বনাঞ্চল, লোকালয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করছে প্রায় ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। তাছাড়া এসব রোহিঙ্গা জড়িয়ে পড়ছে পতিতাবৃত্তি, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই সহ নানা অপরাধ মুলক কর্মকান্ডে। রোহিঙ্গাদের এসব কর্মকান্ডে উখিয়া-টেকনাফের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হলেও করার কিছুই নেই। কারন এসব রোহিঙ্গাদের কারনে স্থানীয় প্রসাশন ও অসহায় হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ আরমান শাকিল বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধীর সংখ্যা তুলনা মূলক ভাবে বেশী হওয়ার সুবাদে এদের নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তথাপিয় আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রোহিঙ্গাদের উপর সার্বক্ষনিক খড়া নজরদারী রাখা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: