ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রামুর বাঁকখালী নদীতে কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব

সোয়েব সাঈদ, রামু
রামুতে জাহাজ ভাসানো উৎসবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেছেন, সম্প্রতির বাংলাদেশে কিছু কিছু মানুষ মাঝে মাঝে সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা চালায়। সরকার তা কঠোরভাবে দমন করে আসছে। মানুষকে প্রতিটি ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তবেই দেশ শান্তিময় হবে।

রবিবার (২৯ অক্টোবর) রামুর বাঁকখালী নদীতে অনুষ্ঠিত জাহাজ ভাসা উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।

‘সম্প্রীতির জাহাজে ফানুসের আলোয়, দূর হোক সাম্প্রদায়িক অন্ধকার’ শ্লোগানে রামুর বাঁকখালী নদীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে, কল্পজাহাজ ভাসানো উৎসব। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও রামুতে উদযাপিত হয়েছে জাহাজ ভাসানো উৎসব। রঙিন কাগজের নান্দনিক কারুকাজে বাঁশ, বেত, কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় কল্পজাহাজ। পাঁচ-ছয়টি নৌকার ওপর বৌদ্ধ প্যাগোডা, জাদী বা চূড়া, ড্রাগন, ময়ূর, সিংহসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতির কল্পজাহাজ গুলো রোববার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাসানো হয় বাঁকখালী নদীতে। বৈচিত্র্য নির্মাণ শৈলীর আটটি কল্পজাহাজ নাচে-গানে বুদ্ধ কীর্তনে বাঁকখালী নদীর এপার থেকে ওপারে ভেসে চলে। সম্প্রীতির মহামিলন এ উৎসবে নদীর দুকূলে আনন্দে মাতোয়ারা হয় বৌদ্ধরা সহ সকল ধর্মের শত শত নরনারী। রামু উপজেলার হাইটুপি, শ্রীকুল, পূর্ব মেরংলোয়া, উত্তর মিঠাছড়ি, হাজারীকুল, দ্বীপ শ্রীকুল, পূর্ব রাজারকুল ও পশ্চিম মেরংলোয়া গ্রামের আটটি কল্পজাহাজ বাসানো হয় নদীতে। সন্ধ্যায় ফানুস উত্তোলন উৎসব ও বুদ্ধ র্কীতন অনুষ্ঠিত বাঁকখালী নদীর তীরে।

বৌদ্ধরা জানান, প্রায় ২৫০ বছর আগে তৎকালীন ধনার্ঢ্য রাখাইন বৌদ্ধরা প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রাচীন রামুর বাঁকখালী নদীতে কল্পজাহাজ ভাসানো প্রচলন শুরু করেন। জাহাজভাসা উৎসবের প্রচলন হয় পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে মুরহন ঘা নামক স্থানে একটি নদীতে মংরাজ ¤্রাজংব্রান প্রথম এ উৎসব উদযাপন করা হয়। শতবছর ধরে প্রবারণা পূর্ণিমায় রাখাইন ও বড়ুয়া সম্প্রদায় বাঁকখালী নদীতে কল্পজাহাজ ভাসা উৎসব আয়োজন করে আসছে। রামুর এ জাহাজ ভাসা উৎসব বৌদ্ধদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হলেও, কালক্রমে সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে সম্প্রীতির মহামিলন উৎসবে উদযাপিত হয়।

জাহাজ ভাসানো উৎসবে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তাপ্তি চাকমা, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা, রামু থানার অফিসার ইনচার্জ আবু তাহের দেওয়ান, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক মহিলা সম্পাদক মুসরাত জাহান মুন্নী, ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, রামু প্রেসক্লাব সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া, উপজেলা স্বেচ্ছা সেবকলীগ সভাপতি তপন মল্লিক, সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর ছিদ্দিক, উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আলী, স্কাসের চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা, রামু চৌমুহনী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সজল বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি রামুর সভাপতি স্বপন বড়ুয়া।

রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি অর্পন বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাহাজ ভাসানো উৎসবে বিশেষ বক্তা ছিলেন, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন। সংবর্ধিত অতিথির বক্তৃতা করেন, রামু উপজেলা যুবলীগ সভাপতি পলক বড়ুয়া আপ্পু ও কক্সবাজার পৌর যুবলীগ সভাপতি ডালিম বড়ুয়া। রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জিৎময় বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন, উৎসেব সমন্বয়ক অর্ক বড়ূয়া।

কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, ‘গৌতম বুদ্ধের সময় ভারতবর্ষে বৈশালী ছিল এক সমৃদ্ধ নগরী। একসময় ওই রাজ্যে ত্রিবিধ উপদ্রব দেখা দিল। দুর্ভিক্ষ, মহামারি ও অমনুষ্যের উপদ্রব। হৃদয়ছোঁয়া স্মৃতিকে অমলিন করে ধরে রাখার জন্য রামুতে সর্বপ্রথম রাখাইন বা মগদের দ্বারা কাগুজি কল্পজাহাজ ভাসানো উৎসবের সৃষ্টি হয়।’

পাঠকের মতামত: