সোয়েব সাঈদ, রামু :::
রামু উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহি জোয়ারিয়ানালা বাজার নানা সমস্যা ও সংকটে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাজারের বেচা-কেনার প্রধান স্থানটি সামান্য বৃষ্টিতে পানিতে একাকার হয়ে যায়। কয়েক ঘন্টার বর্ষণে পরিনত হয় জলাশয়ে। এছাড়া বাজারে বেচাকেনার পর্যাপ্ত জায়গা ও শেড এর অভাবে ব্যবসায়ি ও ক্রেতারা প্রতিনিয়ত দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বাজারের জরাজীর্ণ শেডগুলোতে বৃষ্টি পানি পড়ে। একারনে বৃষ্টি হলে নিজেদের রক্ষাও কঠিন হয়ে পড়ে ব্যবসায়ি ও ক্রেতাদের।
সম্প্রতি সরেজমিন জোয়ারিয়ানালা বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ি ও ক্রেতাদের সাথে আলাপ করে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যার কথা জানা গেছে। ব্যবসায়িরা জানান, বাজারটি ২ শত বছরের পুরনো। এর পুরনো নাম ছিলো জোয়ারিয়ানালা মৌলভী বাজার। বর্তমানে সবার কাছে জোয়ারিয়ানালা বাজার হিসেবে পরিচিত। এখানে সপ্তাহের শুক্র ও সোমবার দুদিন জমজমাট হাট বসে। এ দু’দিন রামু উপজেলা ও অন্যান্য এলাকার বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ি ও ক্রেতা এখানে মালামাল ক্রয় বিক্রয় করতে আসেন। এ দু’দিন ছাড়াও সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোতে এখানে নিয়মিত কাঁচা তরকারি, মাছ, মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য বেচা কেনা হয়। অতি প্রাচীন হলেও বর্তমানে বাজারটি নানা সমস্যা জর্জরিত।
বাজারের ঔষধ বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রেন্ডস মেডিকো’র মালিক আজিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রতিবছর এ বাজার থেকে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব আদায় করে। অথচ বাজারটির উন্নয়নে একটি টাকাও ব্যয় করা হয় না। উপজেলা পরিষদ কিংবা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদও বাজারটির উন্নয়নে কোন ভূমিকা রাখছে না। এ নিয়ে ব্যবসায়ি ও স্থানীয় মানুষের মনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তিনি আরো জানান, ইতিপূর্বে বাজারের পাশে মাটি ভরাট মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছিলো। ফলে বাজারের বেচাকেনার স্থানটি নিচু হয়ে যায়। বৃষ্টি পানি নিষ্কাশনের পথগুলোও প্রভাবশালীরা ভরাট কওে ফেলেছে। একারনে বর্ষাজুড়ে বাজারে চরম জলাবদ্ধতা লেগে থাকে।
বাজারের মাছ ব্যবসায়ি জালাল আহমদ, মোস্তাক আহমদ, মোস্তফা ও আমানু জানান, বাজাওে বেচাকেনা করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এখানে বেচাকেরা পর্যাপ্ত জায়গা ও উন্নত শেড নেই। সামান্য বৃষ্টি হলে তাদের বেচাকেনা স্থবির হয়ে পড়ে। অতিবৃষ্টি হলে এখানে কেউ চলাচলও করতে পারে না।
একই অভিযোগ বাজারের সবজি ব্যবসায়ি আজিজুল আলম, মমতাজ ও হাকিম আলীর। তারা জানান, অচিরে বাজারটি সংস্কার ও বেচাকেনার জন্য পর্যাপ্ত শেড বা ঘর তৈরী করা না হলে ব্যবসায়িদের দূর্ভোগ আরো বেড়ে যাবে। এতে ঐতিহ্যবাহি বাজারটি ক্রমেই ক্রেতাশূণ্য হয়ে যাবে। আর্থিক লোকসানের শিকার হবে বাজারের ব্যবসায়িরা।
জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন যুবলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মদ জহির জানান, প্রশাসনের যথাযথ নজরদারি না থাকায় বাজারটিতে এখন বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। ব্যবসায়িরা বর্ষাজুড়ে কাঁদা-পানিতে মাছ, মাংস ও সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে ব্যবসায়িদের পাশাপাশি ক্রেতারাও দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে। সবক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও জনগুরুত্বপূর্ণ এ বাজারটি রয়েছে উন্নয়নের বাইরে। তাই বাজারটির উন্নয়নে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
জোয়ারিয়ানালা বাজারের ইজারাদার রামু উপজেলা যুবলীগের সহ সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, বাজারটি অনেক সমস্যায় জর্জরিত। এরমধ্যে জলাবদ্ধতা অন্যতম। উঁচু করে মহাসড়ক নির্মাণ ও অন্য তিনপাশে জমির মালিকরা পানি নিষ্কাশনের পথ ভরাট করে ফেলেছে। এ কারনে সামান্য বৃষ্টিতেই পুরো বাজারে পানিতে একাকার হয়ে পড়ে। এছাড়া বাজারের ছাউনী দেয়া ৩টি শেড থাকলেও সবকটি জরাজীর্ণ। ১ যুগ পূর্বে নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরী এসব শেড দিয়ে সামান্য বৃষ্টি হলেই ভিতরে পানি পড়ে। যে কারনে বেচাকেনা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। প্রতিবছর বিপুল রাজস্ব আয় হলেও এ বাজারটির উন্নয়নে কোন বরাদ্ধ দেয়া হয় না বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স বাজারের বেহাল দশার কারনে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এতবড় বাজারের সংস্কার কাজের পর্যাপ্ত বরাদ্ধ ইউনিয়ন পরিষদের থাকে না। এরপরও তিনি সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বাজারটির সমস্যা নিরসন ও উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাজাহান আলি জানিয়েছেন, বাজারে জলাবদ্ধতাসহ বিরাজমান সমস্যাসমূহ নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রয়োজনে তিনি সরেজমিন গিয়ে সমস্যা চিহ্নিত করবেন।
রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রিয়াজ উল আলম জানিয়েছেন, জোয়ারিয়ানালা বাজার একটি ঐতিহ্যবাহি বাজার। বাজারের অনেক সমস্যা তিনি ইতিপূর্বে জেনেছেন। বাজারের বেচাকেনার পর্যাপ্ত শেড বা ঘর নেই। এজন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বাজারে পণ্য বেচাকেনার জন্য একটি চারতলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চলতি বছরেই ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে ভবনটির দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। পরবর্তীতে বর্ধিত অংশের কাজ সম্পন্ন হবে। এছাড়া বাজারে জলাবদ্ধতা এবং অন্যান্য সমস্যা সমাধানেরও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।
পাঠকের মতামত: