ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

মাস্টার মোস্তাফিজের প্রথম জানাজা সম্পন্ন

22কক্সবাজার প্রতিনিধি :::
কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজলের পিতা নিরিবিলি গ্রুপের চেয়ারম্যান মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।
আজ বুধবার সকাল দশটায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন-কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা পরিষদের প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, মরহুমের বড় ছেলে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, মরহুম মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের ছোট ভাই আইন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম রহিমুল্লাহ, পৌর মেয়র সরওয়ার কামাল, মাওলানা আব্দুল মজিদ প্রমুখ।
এ সময় জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের জেলা সভাপতি হাফেজ ছালামত উল্লাহ, খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি মাওলানা নুরুল আলম আল মামুন, কক্সবাজার নিউজ ডট কম (সিবিএন)’র সম্পাদক অধ্যাপক আকতার চৌধুরী, দৈনিক হিমছড়ির প্রধান সম্পাদক আলহাজ্ব আলী হাচ্ছান চৌধুরী, কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুর রহমান, শহর জামায়াতের সেক্রেটারী আলহাজ্ব সাঈদুল আলম, জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য এম মোকতার আহমদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এড. সলিম উল্লাহ বাহাদুর, শহর জাতীয় পার্টির সভাপতি কামাল উদ্দিন কামাল, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন জিকু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পৌর প্যানেল মেয়র জিসান উদ্দিন জিসান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাশেদুল হক রাসেল, সাধারণ সম্পাদক মানির উদ্দিন মনিরসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন অংশ গ্রহণ করেন।
বরেণ্য ব্যক্তিত্ব মাস্টার মোস্তাফিজ ৮ মার্চ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮ টায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মাস্টার মোস্তাফিজ শেষ নিঃশ্বাত ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার এক স্ত্রী, ৪ পুত্র ও ১ কন্যা ছিল।
মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা গ্রামের বাড়ী পোকখালী পূর্ব গোমাতলীতে বাদে যোহর অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন মরহুমের বড় ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল।
মরহুম মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান দীর্ঘ ৪ বছর ধরে ক্যান্সার রোগাক্রান্ত ছিলেন।

আলহাজ্ব মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের হাত ধরেই দেশের প্রথম লবণ মিল ও হ্যাচারির প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বরেণ্য শিল্প উদ্যোক্তা। চিংড়ি শিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দেশব্যাপী সর্বাধিক পরিচিত ও সমাদৃত ব্যক্তি ছিলেন মাস্টার মোস্তাফিজ।
১৯৮৫ সালে কক্সবাজার কলাতলীতে ‘নিরিবিলি বাগদা চিংড়ী হ্যাচারী’ প্রতিষ্ঠা করে তিনি দেশে বাগদা চিংড়ী হ্যাচারীর গোড়া পত্তন করেন। এই হ্যাচারী দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত হ্যাচারী। যা বর্তমানে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে।
১৯৯৩ সালে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিরিবিলি হ্যাচারী পরিদর্শন পূর্বক কলাতলী, সোনার পাড়া ও টেকনাফ অর্ধশতাধিক হ্যাচারী নিয়ে হ্যাচারী জোন ঘোষনা করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত সরকারসহ প্রায় শতাধিক দেশের রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পদস্থ মন্ত্রী.এমপি উক্ত হ্যাচারী পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করে এবং এই অবধানের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মাস্টার মোস্তাফিজকে ২ বার স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত করে।
তিনি ফিস ফিড মিলস, পোল্ট্রি হ্যাচারী, তেলাপিয়া হ্যাচারী, পর্যটনের উন্নয়ন ও রাবার প্লান্টেশনসহ অনেক শিল্প বাণিজ্যের উদ্যোক্তা কক্সবাজারের বরেণ্য এই সন্তান। এছাড়া তিনি পোকখালী মাদ্রাসার দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, কলাতলী মসজিদ, পূর্ব গোমাতলী মসজিদ, ঈদগড় কৃষি খামার মসজিদ, ফকিরপাড়া জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠাসহ অসংখ্য মাদ্রাসা, স্কুল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদান প্রদান ও নিজে সম্পৃক্তের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৫৪ সালে কক্সবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম আশুতোষ কলেজ থেকে এইচ.এস.সি কৃতিত্বের সাথে পাস করে ডাক্তারী কোর্স করার জন্য চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষ সম্পর্ন্ন না করার আগেই নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রাম এবং দেশের উন্নয়নে কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথম পর্যায়ে তিনি গ্রামে কৃষি খামার ও লবনের ব্যবসা শুরু করেন।
১৯৬১ সালের গোড়ার দিকে তাঁর সাথে পরিচয় হয় পশ্চিম পাকিস্তানের বিখ্যাত কোম্পানী আজাদ ভান্ডারের মালিকের সাথে। তখন থেকেই ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি পরিচিত হন। পরবর্তী ১৯৭৪ সালে কক্সবাজার সল্ট ইন্ডাষ্ট্রিজ নামে বাংলাদেশের প্রথম লবন মিল স্থাপন করেন। তাঁর দেখানো পথ ধরে সেখানে পরবর্তী সময়ে প্রায় অর্ধশত লবন মিল প্রতিষ্ঠিত হয়ে ইসলামপুর এখন দেশের বৃহৎ লবন শিল্প এলাকা ও অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হয়েছে। এই এলাকার উৎপাদিত লবন দেশব্যাপী চাহিদা পূরণ করে। মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত তিনি নিরিবিলি গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। আলহাজ্ব মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান কক্সবাজার সদর রামু আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজলের গর্বিত ও সফল একজন পিতা।
নোট:
মাস্টার মোস্তাফিজ ১৯৩৮ সালের ১২ এপ্রিল কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলাধীন পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী গ্রামে এক সভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম আছদ আলী ও মাতা মরহুমা ছখিনা বেগমের ৩ ছেলের মধ্যে আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন সবার বড়।
ব্যক্তিগত জীবনে তার একমাত্র স্ত্রী, সালেহা খানম। যিনি শহীদ জিয়াউর রহমান সরকারের সময়ে কক্সবাজারের মহিলা সংসদ সদস্যা ছিলেন। তাঁর ৪ ছেলে, ১ কন্যার মধ্যে বড় ছেলে লুৎফুর রহমান কাজল ২০০৮ সালে কক্সবাজার সদর-রামু আসনে বিপুল ভোট বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। অপর ৩ ছেলে যথাক্রমে, মশিউর রহমান রাজন, মাহবুবুর রহমান শাহিন ও মোর্শেদুর রহমান তুহিন সবাই ব্যাবসায়িকভাবে প্রতিষ্টিত।

পাঠকের মতামত: