ঢাকা,শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মানিকপুরে মাতামুহুরী নদীর চর কেটে বালু লুট, ভাঙনের হুমকিতে শতাধিক বসতি

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: চকরিয়া উপজেলার মানিকপুরে মাতামুহুরী নদীর জেগেউঠা চর কেটে বালু লুটের মহোৎসব চলছে। পাশাপাশি নদীতে অবৈধভাবে সেলো মেশিন বসিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। অভিযোগ উঠেছে, মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় জাহেদুল ইসলাম সিকদার নামের এক দাপুটে ব্যক্তি। তিনি ইতোপূর্বে চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ছাইরাখালী এলাকায়
পুলিশের হাতে অবৈধ অস্ত্রসহ দিনদুপুর গ্রেফতার হয়েছিলেন। অভিযুক্ত জাহেদুল ইসলাম সিকদার অস্ত্র মামলায় দীর্ঘদিন ধরে কারাভোগের পর জামিনে এসে এবার মাতামুহুরী নদী থেকে বালু লুটে নেমেছে।

স্থানীয় লোকজনের দাবি, বালু উত্তোলনে কক্সবাজার জেলা অথবা চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের বৈধ অনুমতি না থাকলেও শুধুমাত্র পেশিশক্তির দাপট দেখিয়ে অভিযুক্ত জাহেদ সিকদার বেশকিছু দিন ধরে মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু লুটের মহোৎসব শুরু করেছে। তিনি শক্তিশালী স্কেভেটর গাড়ি দিয়ে নদীতে জেগেউঠা চর কেটে বালু উত্তোলন পুর্বক প্রতিদিন ১৫/২০ টি ডাম্পার ট্রাকে অন্যত্র বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, নদীর জেগেউঠা চর কেটে ও নদীতে সেলো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে তীরবর্তী এলাকার জনবসতি হুমকির মুখে পড়েছে। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে আগামী বর্ষাকালে মানিকপুর ১ নং ওয়ার্ডের উত্তরপাড়া এলাকার অন্তত তিনশতাধিক বসতবাড়ি ও আবাদি জমি নদীতে বিলিন হয়ে যাবে এইধরনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।

এলাকার বাসিন্দারা দাবি করেছেন, মাতামুহুরী নদীর মানিকপুর উত্তরপাড়া অংশের অন্তত এক কিলোমিটার জেগেউঠা চর অবৈধভাবে দখলে নিয়েছেন জাহেদ সিকদার। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নদীর জেগেউঠা চরের বেশিরভাগ জমির মালিক কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক। জমির মালিকানা বিষয়ে উল্লেখ আছে, মাতামুহুরি নদীর মানিকপুর উত্তরপাড়া অংশের ওই জমি জেলা প্রশাসনের ১ নং খাসখতিয়ানের অধীনে নথিভুক্ত জমি।
অথচ জেলা প্রশাসনের খাস খতিয়ানের মালিকানাধীন মাতামুহুরী নদীর জেগেউঠা এক কিলোমিটার চর দখলে নিয়ে অভিযুক্ত জাহেদ সিকদার গেল কয়েকবছর ধরে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে রকমারি সবজি চাষের জন্য বর্গা দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল টাকা।

এবছর সেই জেগেউঠা চর স্কেভেটর গাড়ি দিয়ে কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন পুর্বক বাণিজ্য চালাচ্ছে অভিযুক্ত জাহেদ সিকদার। পাশাপাশি তিনি নদীতে সেলো মেশিন বসিয়ে উত্তোলন করছেন বালু।

জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া খাস খতিয়ানের সরকারি মালিকানাধীন মাতামুহুরী নদীতে জেগেউঠা চর কেটে বালু উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাহেদুল ইসলাম সিকদার। তিনি বলেন, মাতামুহুরী নদীতে জেগেউঠা চর আমার বাপের জমি। আমি বাবার জমিতে জেগেউঠা চর কেটে বালু উত্তোলন করছি। এখানে সরকারি খাস খতিয়ানের মালিকানাধীন কোন জমি নেই। আর আমার জমি থেকে আমি বালু উত্তোলন করবো, সেখানে প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে কেন।

বিষয়টি জানানো হলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, জেলা প্রশাসনের ইজারা দেওয়া বহাল ছাড়া অন্য যে কোন স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা আইনগতভাবে অবৈধ। মাতামুহুরী নদীতে জেগেউঠা চর কেটে বালু উত্তোলন করার বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। এব্যাপারে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। #

পাঠকের মতামত: